বাংলাদেশঃ সাগর-রুনি হত্যার ১১ বছর

বাংলাদেশঃ সাগর-রুনি হত্যার ১১ বছর

সান নিউজ ডেস্ক: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর আজ।

হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরে একের পর এক তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তবে রহস্যের জট খোলেনি।

কিন্তু অতীতের মতো এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। উলটো ৯৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। ফলে নিহতদের স্বজনদের প্রশ্ন, ৪৮ ঘণ্টা ৯ বছরেও শেষ হলো না। আর কবে খুনিরা ধরা পরবে, কবে রহস্যের জট খুলবে।

মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়মমাফিক ভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে? তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি, তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচার দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি দিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এর পর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এরকম প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।

র‌্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেফতারকৃত আট আসামি, নিহত দুই জন এবং স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পেয়েছে র‌্যাব। সে রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুই জনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি।

এই মামলায় গ্রেফতারকৃত আট জনের মধ্যে পাঁচ জন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতার দেখানো হয় পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ূন কবীরকে। এদের মধ্যে সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এই মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। তদন্তে একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন দোষী না হয়। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে। আমাদের যিনি তদন্ত কর্মকর্তা, তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

(Feed Source: sunnews24x7.com)