কলকাতা: খরচ কমাতে নয়া দাওয়াই?আর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক নয়, জেলাস্তরে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ও প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলিকে আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরাতে সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের হাতিয়ার করতে নির্দেশ দিল নবান্ন। এখন থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রকল্প, পুরসভা, পুর নিগমের মতো স্থানীয় স্বশাসতি সংস্থাগুলির অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে জেলার সমবায় ব্যাঙ্ককে যুক্ত করতে হবে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জেলাশাসকদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। এতদিন জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে রাজ্য সরকারের কোনও অ্যাকাউন্ট ছিল না। সরকারি প্রকল্পের সব লেনদেনই হয় রাষ্ট্রয়ত্ত্ব বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে।
নবান্নর যুক্তি, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড থেকে মৎস্যজীবি বা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মতো সরকারি প্রকল্পে রাষ্ট্রয়ত্ত্ব বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে বিশেষ সহযোগিতা মিলছে না। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড করাতে গিয়ে পড়ুয়ারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। রাজ্য স্তরের বৈঠকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পরও নীচুতলায় তা যথাযথ কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসনিক আধিকারিকরাও তদারকি করতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন। এমনকি কৃষি ক্ষেত্রেও তাদের বিনিয়োগ খুবই সামান্য। সেক্ষেত্রে কৃষক ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আমানতের ওপর নির্ভর করে জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলি সমস্ত সরকারি প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ঋন পেয়েছে সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে।
দেখা গিয়েছে, জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলি তাদের আমানতের ১৭.৭৪ শতাংশ অর্থই শষ্য ঋন-সহ কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির এধঝরনের আমানতের পরিমান মাত্র ১.৫৮ শতাংশ। অথচ তারা রাজ্য সরকারের কাছে থেকে তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য সব ধরনের সুবিধা আদায় করে নেয়। তাই যে কোনওমূল্য জেলা স্তরের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির কর্মদক্ষতা বাড়াতে প্রশাসনিকবাবে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য মুখ্যসচিব প্রতিটি সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আর্থিক সমস্যাগুলি পর্যালোচনা অ্যাকশান তৈরির নির্দেশ দেন জেলাশাসকদের। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল আরও কী নেওয়ার প্রয়োজন তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে ৩১ মার্চের মধ্যে জেলাশাসকদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
নবান্নর নয়া নীতিই হল, রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরানো। জেলাশাসকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,এখনই প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি, তন্তুবায় সমবায় সমিতির কাজগুলি পর্যালোচনা করতে হবে। তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরাতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি তরতে হবে। অধিকাংশই রুগ্নতার হাত ধরে অচল হতে বসেছে। ইতিমধ্যেই সমবায় দফতর জেলাস্তরে ৪ হাজার ৮৭৬ টি প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতির অডিট সম্পন্ন করিয়েছে।
যদিও এধরনের সমবায় সমিতির সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। অধিকাংশই অচল। তন্তুবায়ী সমিতিগুলিও ঋন এবং উপযুক্ত বাজার না পেয়ে ধুঁকছে। নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ জেলাতেই এই তন্তুবায়ী সমবায় সমিতিগুলি রয়েছে। এদের পুনরুজ্জীবনে সরকারি প্রকল্পে যুক্ত করতে উদ্যোগ নিতে হবে জেলা প্রশাসনকেই। তাদের উৎপাদিত সামগ্রী সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে কিনতে হবে।প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি বাণিজ্যিক কাজকর্ম কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ৬০ শতাংশ খরচ কেন্দ্র বহন করছে। কী হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হবে নবার্ড ঠিক করে দিয়েছে। এই প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে জেলা ও রাজ্য স্তরের মনিটারিং কমিটি তৈরি হয়েছে।
(Feed Source: news18.com)