কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : কখনও বাম, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে। কখনও তৃণমূল (TMC) থেকে বিজেপিতে (BJP)। কখনও আবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে। দলবদল দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ (West Bengal Politics)। কিন্তু, এবার যেভাবে শাসক-বিরোধী বাগযুদ্ধে খোলাখুলি বিধায়ক কেনার দাবি শোনা গেল, তা আগে কখনও হয়েছে কি না, কেউ মনে করতে পারছেন না।
সেই ১৯৫২ থেকেই দলবদল
সালটা ১৯৫২, চারজন বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে (Congress)। স্বাধীনতার পর বাংলার রাজনীতিতে সেটাই প্রথম দলবদল বলে মনে করা হয়। তারপর রাজনীতির গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গেছে। বারবার ক্ষমতায় থাকা দল বদলেছে। কিন্তু, দলবদলের ধারা বদলায়নি। শুধু কারও আমলে সেটা বেশি দেখা গেছে, কারও জমানায় কম।
ঘোড়া কেনা-বেচার অভিযোগ নতুন আমদানি
কিন্তু, এখন যেভাবে কার্যত বুক ঠুকে, লাখ লাখ টাকা-গাড়ি দিয়ে, বিধায়ক কেনার কথা বলা হচ্ছে, সেটা বঙ্গ রাজনীতিতে শেষ কবে হয়েছে, তা কেউ মনে করতে পারছেন না। ৫০ লক্ষ টাকা এবং একটি স্করপিও গাড়ি দিয়ে কেনা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের তৎকালীন সিপিএম (CPM) বিধায়ক কানাই মণ্ডলকে (Kanai Mondal), এমনই অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর।
দলবদলের ঘটনায় গতি তৃণমূলের আমলে
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ অবধি বাম জমানায় দলবদলের ঘটনা সেরকম একটা দেখা যায়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ফের তা গতি পায়। ২০১৪ সালে রাজ্য়সভার ভোটের আগে বাম শিবির ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখান তিন বিধায়ক। ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল, আরএসপি বিধায়ক অনন্ত দেব অধিকারী এবং আরএসপি-র দশরথ তিরকে। তারপর সেই পথেই, তৃণমূলে নাম লেখান বাম ও কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বহু জনপ্রতিনিধি।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে থেকে, দলবদলের ধারাটা বইতে থাকে তৃণমূল থেকে বিজেপির দিকে। ২০২১ অবধি তালিকাটা ছিল দীর্ঘ। কিন্তু, একুশের ভোটে তৃণমূল জিতে আসার পর আবার এই ধারা উল্টো দিকে বইতে শুরু করে। তৃণমূল জমানার শুরু থেকে দলবদল নিয়ে বারবারই অভিযোগ উঠেছে, যে এর নেপথ্য়ে অন্য়তম কারণ টাকা। এবার শুভেনদু অধিকারীর অভিযোগে, সেটা কার্যত সামনে চলে এল! যার জেরে বঙ্গ রাজনীতির সংস্কৃতিই প্রশ্নের মুখে পড়ল বলে মনে করছেন অনেকে।
বঙ্গ রাজনীতির সংস্কৃতি প্রশ্নের মুখে
দলবদলের এই ধারা অবশ্য় শুধু বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ নয়। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে শিবসেনা বিধায়কদের দলবদলের জেরে বিরোধীদের সরকার পড়ে যায়। পরে বিজেপির সমর্থনে ক্ষমতা দখল করে শিবসেনার বিদ্রোহী অংশ। জ্য়োতিরাদিত্য় সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে দলীয় বিধায়কদের দলবদলের জেরে মধ্য়প্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছিল কংগ্রেস। সেই সুযোগে কুর্সিতে বসেছিল বিজেপি। একইভাবে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএসের সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। কিন্তু, এরাজ্য়ে যেভাবে দলবদলের সঙ্গে সরাসরি বিধায়ক কেনাবেচার প্রসঙ্গ জড়িয়ে গেল, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।
(Feed Source: abplive.com)