ISL Final 2023, ATKMB vs BFC: মেগা ফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি সবুজ-মেরুন ও নীল ব্রিগেড, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আগে কোন দলের পাল্লা ভারী?

ISL Final 2023, ATKMB vs BFC: মেগা ফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি সবুজ-মেরুন ও নীল ব্রিগেড, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আগে কোন দলের পাল্লা ভারী?

জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আইএসএল-এ (ISL) বাংলার সুদিন কি ফিরে আসবে? নাকি দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেতাব সন্তোষ ট্রফি জয়ের পর এবার কর্নাটকের দল অর্জন করবে দেশের সেরা ক্লাব লিগের খেতাবও? এই দুই প্রশ্নের উত্তরই পাওয়া যাবে শনিবার রাতে, আইএসএল ফাইনালের (ISL Final 2023) পর। তবে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই।

শনিবার অর্থাৎ ১৮ মার্চ ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে নামবে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। যেখানে তারা ৫৮ শতাংশ (২৯ ম্যাচে ১৭ জয়) ম্যাচে জিতেছে। এদিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC)। ফতোরদায় তাদের সাফল্যের শতকরা হিসাব মাত্র ২১ শতাংশ (১৯ ম্যাচে ৪টি জয়)।

শুক্রবার সাংবাদিরদের মুখোমুখি হয়ে সবুজ-মেরুনের অধিনায়ক প্রীতম কোটাল বলেই দিলেন, “আমি জানি, আমরাই এই লিগে সেরা দল”, তখন দলের তারকা স্ট্রাইকার মনবীর সিংও তাঁর সঙ্গে প্রায় গলা মিলিয়ে বললেন, “আমরা তো এখানে চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছি। তাই জয় ছাড়া অন্য কোনও ফলের কথা ভাবতেই পারছি না।” দলের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দোরও তাঁর দলের ছেলেদের ওপর যথেষ্ট আস্থা আছে। তাই তাঁরও বিশ্বাস আইএসএল ট্রফি সঙ্গে নিয়েই রবিবার কলকাতায় ফিরবেন।

দলকে উজ্জীবিত করতে ফিনল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন চোট পেয়ে ফিরে যাওয়া মিডফিল্ডার জনি কাউকো। আসছেন চোটের জন্য পুরো মরসুম খেলতে না পারা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি। কলকাতা থেকে এক ঝাঁক সমর্থক আসছেন শনিবারের ফাইনাল দেখতে। তাদের মধ্যে থাকছেন যুবভারতীর লজেন্স মাসিও। যিনি যুবভারতীতে ম্যাচ থাকলেই গ্যালারি চষে বেড়ান তাঁর লজেন্সের বয়াম নিয়ে। দেশের অন্যান্য শহর থেকেও দলে দলে সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা পৌঁছে যাবেন গোয়ায়। যেখানে ফাইনালকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে উৎসব। সব মিলিয়ে টগবগ করে ফুটছে সবুজ-মেরুন শিবির।

ফেরান্দো নিজেই বারবার দলের এই দোষ স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, “বিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে ছেলেরা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে”। লিস্টন কোলাসো যেমন। গত মরশুমে লিগের ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল তিনিই করেন। আটটি গোল করেন ও পাঁচটিতে অ্যাসিস্ট করেন। অর্থাৎ মোট ১৩টি গোলে তাঁর অবদান ছিল। এ বার গোলের সামনে গেলেই তিনি কেমন যেন গুটিয়ে যাচ্ছেন। ২৩টি ম্যাচ খেলে মাত্র একটি গোল করেছেন ও চারটি অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর। অথচ ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। ৫৭টি শট মেরেছেন। কিন্তু গোল কনভারশন রেট মাত্র ২ শতাংশ, গতবার যা ছিল ১০ শতাংশ।

মনবীর সিং-এর কথাও না বলে উপায় নেই। গতবার কোলাসো ও মনবীর, দুজনে মিলে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনও পরিস্থিতি এসেছিল রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস খেলতে পারেননি, হুগো বুমৌস ফর্মে ছিলেন না। কিন্তু দুই ভারতীয় স্ট্রাইকারের দাপটে প্রতিপক্ষ হার স্বীকার করে নিয়েছে। গতবার যেখানে ছ’টি গোল করেন মনবীর, একটি করান, সেখানে এ বার তাঁর গোলসংখ্যা দুই, চারটি অ্যাসিস্ট। ২৩টি সুযোগ তৈরি করেছেন। কনভারশন রেট এ বার ৮ শতাংশ, গতবার যা ছিল ১৪ শতাংশ।

শনিবার আশিক কুরুনিয়ান সুস্থ হয়ে মাঠে নামতে পারলে লিস্টন কোলাসো হয়তো প্রথম এগারোয় থাকবেন না। কিন্তু পরিবর্ত হিসেবে পরে তাঁকে মাঠে দেখা যেতেই পারে। মনবীরের শুরু থেকে খেলার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে।

দুই তারকা ছন্দে না থাকায় এটিকে মোহনবাগানকে হোঁচট খেতে খেতে প্লে-অফে ঢুকতে হয়েছে। আরও বড় চিন্তার বিষয় হল দুই সেমিফাইনালে নির্ধারিত সময়ে বা অতিরিক্ত সময়ে কোনও গোল পায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনী। লিগের শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তারা জেতে মাত্র দুটিতে, হারে দুটিতে, একটি ড্র। প্লে অফে প্রথম নক আউটে ওডিশাকে ২-০-য় হারানোর পরে তাদের কোনও সরাসরি জয় নেই। এগুলো নিয়ে ফাইনালে নামার আগে ভাবতেই হবে এটিকে মোহনবাগান শিবিরকে।

রক্ষণে তারা খুবই উন্নতি করেছে। যে রকম ভঙ্গুর রক্ষণ নিয়ে শুরু করেছিল তারা, সেই সব ফাটলে মেরামতি করে এখন বেশ নিশ্ছিদ্র হয়ে উঠেছে তাদের ডিফেন্স। আর গোলকিপার বিশাল কয়েথের তো জবাবই নেই। লিগের সেরা গোলকিপারের খেতাব তিনি যথার্থ ভাবেই পেয়েছেন। সব মিলিয়ে একডজন ক্লিন শিট রাখা। চারটিখানি কথা নয়। অথচ এই রক্ষণই প্রথম ছ’টি ম্যাচে দশটি গোল খেয়েছিল।

এফসি গোয়ার কাছে তিন গোলে হারার পর থেকে তাদের রক্ষণ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের শুধরে নেয়। শনিবার ফাইনালে এই রক্ষণই ভরসা কলকাতার দলের। সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণা, শিবশক্তি নারায়ণনদের সামলানোই হবে প্রীতম কোটাল, স্লাভকো দামিয়ানোভিচদের কাজ। কিন্তু বরাবরের মতো সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট করলে কী হবে? এটা ফাইনাল, সামনে টানা এগারোটি ম্যাচ জিতে আসা বেঙ্গালুরু এফসি। এখানে কনভারশন রেট বাড়াতে না পারলে কপালে দুঃখ আছে।

তবে বেঙ্গালুরুর ফাইনালে ওঠাটা অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো। তারা নেমে গিয়েছিল লিগ টেবলের দশ নম্বরে। হঠাৎ দেখা গেল রকেটের গতিতে ওপরে উঠে চলেছে তারা। একের পর এক জয় আর লিগ টেবলে লাফিয়ে লাফিয়ে উত্থান। অবিশ্বাস্য এই উত্থানের পিছনে তাদের ইংরেজ কোচ সাইমন গ্রেসনের অবদান সবচেয়ে বেশি। খারাপ সময়েও দলের প্রতি এতটুকু আস্থা হারাননি। বরং দলের ফুটবলারদের আরও উৎসাহিত করেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো যে সত্যিই সম্ভব, তা বারবার বুঝিয়েছেন রয় কৃষ্ণা, জাভিয়ে হার্নান্ডেজদের। আর যাদের ড্রেসিংরুমে সুনীল ছেত্রীর মতো একজন কিংবদন্তি ও তুখোড় মোটিভেটর থাকে, তাদের পক্ষেই এমন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আত্মবিশ্বাসের স্তর কোন জায়গায় থাকলে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে পেনাল্টি শুট আউটে সব ক’টি শটে গোল করা যায়, সেটাই ভেবে দেখুন। এই আত্মবিশ্বাসটাই ফাইনালে তফাৎ গড়ে দিতে পারে।

গত তিন মরসুমে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ছ’বার। তার মধ্যে চারবারই জিতেছে এটিকে মোহনবাগান, একবার বেঙ্গালুরু ও একটি ম্যাচে ড্র হয়। এবার প্রথম মুখোমুখিতে দিমিত্রিয়স পেত্রাতসের গোলে জয়ের মুখ দেখে এটিকে মোহনবাগান। গত মাসে ফিরতি লিগে ২-১-এ জিতে মধুর প্রতিশোধ নেয় বেঙ্গালুরু। গত মরসুমে সুনীল ছেত্রী-হীন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-৩-এ ম্যাচ অমীমাংসিত রেখে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। প্রথমার্ধে ২৫ মিনিটের মধ্যে চারটি গোল হয় ও দ্বিতীয়ার্ধে ১৪ মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল করে দুই দল। হাফ ডজন গোলের মধ্যে পাঁচটিই আসে সেট পিস মুভ থেকে। সেবার দ্বিতীয় লিগে মনবীর সিং ও লিস্টন কোলাসোর গোলে জেতে কলকাতার দল। ২০২০-২১ মরশুমে প্রথমে এটিকে মোহনবাগান ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে জেতে ও পরেরবার রয় কৃষ্ণা ও মার্সেলো পেরেরার গোলে জেতে। এবার কোন দল হাতে ট্রফি তোলে সেটাই দেখার।

(Feed Source: zeenews.com)