‘কে নেতা হবে আগ্রহ নেই’, ‘দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে’ বিরোধী-ঐক্যের আহ্বান মমতার

‘কে নেতা হবে আগ্রহ নেই’, ‘দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে’ বিরোধী-ঐক্যের আহ্বান মমতার

কলকাতা : এগিয়ে আসছে লোকসভা ভোট (Lok Sabha Vote)। কিন্তু, বিরোধী ঐক্য কোথাও যেন চোখে পড়ছিল না। তাই একটা ইস্যুর প্রয়োজন ছিল। যা বিরোধীদের একমঞ্চে আনতে পারে। রাহুল গান্ধী-পর্ব (Rahul Gandhi Episode) যেন সেই কাজটাই করে গেছে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান বদলে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারকে নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)-অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়রা (Abhishek Banerjee)। রাহুলের সমর্থনে মুখ খুলেছে বাম, সমাজবাদী পার্টি থেকে শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে শিবিরও। সেই সুরেই বুধবার রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে বিরোধী ঐক্যের (Opposition Unity) আহ্বান জানালেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে ‘সব বিরোধী দলগুলিকে একসঙ্গে লড়তে হবে’ বলে বার্তা দেন তিনি।

কে হবেন বিরোধীদের মুখ ?

শুধু কি তাই ? কিন্তু বিজেপি বিরোধী মুখ কী হবে ? কারণ, বিভিন্ন সময়ে রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, নীতিশ কুমারদের নাম ভেসে উঠেছে স্ব স্ব রাজনৈতিক দলগুলির তরফে। বুধবার ধর্নামঞ্চ থেকে এই ইস্যুতেও তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘কে নেতা হবেন, তা নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। দেশ বাঁচানোর লড়াই এটা। বিজেপি বনাম জনতার লড়াই হবে।’

বিজেপির বিরুদ্ধে শুধু কংগ্রেস বা তৃণমূল নয়, ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে দেশের অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিরই। তা সে শিবসেনা হোক, এনসিপি, আপ, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তাদের। বিশেষ করে সিবিআই ও ইডিকে দিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করে রাখতে চাইছে গেরুয়া শিবির, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু, এনিয়ে খাপছাড়া বা দলগতভাবে বিরোধী দলগুলি আন্দোলন করে গেলেও, বিজেপির ‘রাতের ঘুম কাড়ার’ মতো বড়সড় কোনও আন্দোলনই তারা করতে পারেনি, অন্তত এমনই বলছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, রাজনৈতিক প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কার্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির।

এই পরিস্থিতিতে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এক জায়গায় না এলে যে আগামী ‘২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে সেরকম কোনও সাফল্য পাওয়া যাবে না, তা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিলক্ষণ বোঝে, এমন বলছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু, বিভিন্ন ইস্যুতে পৃথক অবস্থান বা বিভিন্ন রাজ্যে পৃথক সমীকরণের কারণে একছাতার তলায় আসা হচ্ছিল না বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। তাই একটা ইস্যুর প্রয়োজন ছিল, যা তাদের কাছাকাছি আনতে পারবে। সেই কাজটাই করে গেছে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়া।

বাজেট অধিবেশনের সংসদে বারবার ছন্নছাড়া দেখিয়েছে বিরোধী শিবিরকে। কিন্তু, রাহুল গাঁধীর সাংসদ পদ খারিজের বিষয়টি এক ঝটকায় ফের একছাতার তলায় নিয়ে চলে এসেছে বিরোধীদের। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাহুল ইস্য়ুতে রাতারাতি অবস্থান পাল্টে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ান মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এবং অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। রাহুল ইস্য়ুতে, তৃণমূলের এভাবে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানো অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সংসদের চলতি অধিবেশনে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি তৃণমূল। কিন্তু, সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে রাতারাতি অবস্থান পাল্টে কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়ায় তৃণমূল। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ডাকা বৈঠকে যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর সরকার।

একযোগে বিজেপির সমালোচনা করতে শোনা গেছে বিরোধীদের। তা সে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু হোক, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব বা উদ্ধব ঠাকরে। সবাই একযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে গেরুয়া শিবিরকে। এই আবহে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীরা একজোট হয়ে মোদি সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে পারবে কি না তা বলবে সময়।

কিন্তু, রেড রোডে ধর্নামঞ্চ থেকে মমতা বিরোধী-ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বললেন, “এখান থেকে বিজেপিকে হটাতে হবে। দেশ থেকে হটাতে হবে। কুর্সি থেকে সরাতে হবে। চেয়ার থেকে সরাতে হবে। সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। দুর্যোধনকে হটান, দেশকে বাঁচান। ওয়াশিং মেশিন বিজেপিকে হটান, জনতাকে বাঁচান। কে নেতা হবেন, তা নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। দেশ বাঁচানোর লড়াই এটা। বিজেপি বনাম জনতার লড়াই হবে।”

(Feed Source: abplive.com)