রুদ্র নারায়ণ রায়, উত্তর ২৪ পরগনা: তিন টাকায় চিকেন শিঙাড়া, আড়াই টাকায় মিলছে আলুর শিঙাড়া। ১০ টাকায় তিনটে চিকেন শিঙাড়া এবং ১০ টাকায় চারটে করে মিলছে আলুর শিঙাড়া। আর এই শিঙাড়া খেতেই এখন সন্ধ্যে নামলেই ভিড় জমছে অশোকনগরের ১/৩ মোড় সংলগ্ন শিঙাড়া কাকুর দোকানে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই শিঙাড়ার গল্প। পথচলতি মানুষজন থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী অনেকেই এখন বিকেলের মুখরোচক হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তিন টাকার চিকেন শিঙাড়া অথবা বাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন আড়াই টাকার আলুর শিঙাড়া। আর এই শিঙাড়াই এখন অর্থনৈতিকভাবে বদলে দিয়েছে ব্যবসায়ীর জীবন।
২০১১ সালে চায়ের দোকান দিলেও পরবর্তীতে কোনও রকমে চলত ব্যবসা। সংসারের নুন আনতে ফুরাতো পান্তা। এরপর লকডাউনের খাঁড়া নামতেই রীতিমতো ভেঙে পড়েন গোপাল দে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে চলা সংসারের হাল ধরতে অবশেষে লকডাউন কাটতেই চালু করেন পুরনো দোকান। এর পর থেকেই কোন রকমে চলতে থাকে ব্যবসা। হঠাৎই মুখরোচক তেলে ভাজার বিক্রির চিন্তা মাথায় আসে গোপাল বাবুর। কিন্তু ইউএসপি কী হবে! কেন এত দোকান বাদ দিয়ে তার দোকানেই আসবে লোকজন!
এই ভেবেই বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে মাত্র আড়াই টাকায় আলুর শিঙাড়া এবং তিন টাকায় চিকেন শিঙাড়া তৈরির চিন্তা আসে মাথায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এরপরই চায়ের দোকানের পাশাপাশি তেলেভাজার দোকান দেন গোপাল দে। নিজের হাতে শিঙাড়া তৈরি করে পুর ভরে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে সেভাবে সারা না মিললেও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলাতে রীতিমতো ভাইরাল তিন টাকার শিঙাড়া কাকু। বিকেলের পর থেকেই দোকানে বাড়ে ভিড়। কেউ পাঁচটা, কেউ দশটা কেউ আবার অর্ডার দিয়ে শিঙাড়া নিয়ে যান। গোপালবাবু জানান, বর্তমানে সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা লাভ থাকে প্রতিদিন। আর এই শিঙাড়া বিক্রি করেই পরিবারের মুখে ফুটেছে হাসি। মেয়ের পড়াশোনার খরচা চালাতেও আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না গোপালবাবুর।
তবে অকপটে এই শিঙাড়া ব্যবসায়ী জানালেন নিজে করার কারণেই যা একটু লাভ থাকে। মানুষকে ভাল কিছু খাওয়ানোর তাগিদেই এই দোকান চালাচ্ছেন তিনি। দোকানে আসা ক্রেতারাও অবশ্য তাঁর তৈরি এই শিঙাড়া খেয়ে যথেষ্টই খুশি। অনেকে আবার দূরদূরান্ত থেকে এই তিন টাকার শিঙাড়া খেতে আসছেন আবার সঙ্গে করে নিয়েও যাচ্ছেন। ভাইরাল এই শিঙাড়া কাকু এখন অশোকনগর এর ভোজন রসিকদের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে।
(Feed Source: news18.com)