বাংলা থেকে মুছেই যাবে ক্ষিতি গোস্বামীর আরএসপি? বড় সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন

বাংলা থেকে মুছেই যাবে ক্ষিতি গোস্বামীর আরএসপি? বড় সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন

কলকাতা: একসময় এ রাজ্যে বামফ্রন্ট মানেই সিপিএমের সঙ্গে উচ্চারিত হত তাদের আরও তিন শরিক দলের নাম- সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি৷ বাম আমলে তিন ছোট শরিকের গুরুত্বও ছিল অপরিসীম৷ ছোট শরিকদের উপেক্ষা করতে পারত না বড় শরিক সিপিএমও৷ সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই শরিক দলগুলির৷

বামেদের সেই সরকারেই অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন ক্ষিতি গোস্বামী৷ বামেদের শরিক দল আরএসপি এবং ক্ষিতি গোস্বামী ছিলেন একরকম সমার্থক৷ আরএসপি বলতে তাঁকেই যেন চিনত এ রাজ্যের মানুষ৷ সেই আরএসপি-ই এবার বাংলায় রাজ্য দলেরও তকমা হারাল৷ সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেই এই ঘোষণা করা হয়েছে৷

২০১১ সালে পরিবর্তনের পর থেকেই বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে তিন শরিক দলও কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগতে শুরু করে৷ চিড় ধরে সংগঠনে, উদয়ন গুহর মতো শরিক দলের অনেক নেতা কর্মীও শাসক দলে নাম লেখান৷ ক্ষিতি গোস্বামী অবশ্য সেপথে হাঁটেননি৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোনওক্রমে মুখরক্ষা করে বামেরা৷ ২০১৯-এ প্রয়াত হন ক্ষিতি গোস্বামী৷ ততদিনে অবশ্য আরএসপি-র নাম এ রাজ্যের রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে৷ ঠিক যেমন হয়েছে সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ক্ষেত্রেও৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা শূন্যে নেমে যাওয়ার পর তিন ছোট শরিক দল আরওই প্রাসঙ্গিকতা হারায়৷

এর পর ২০২২-এর কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান প্রয়াত আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামী৷ ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ও পান তিনি৷ আজীবন বামপন্থী রাজনীতিতে ভরসা রাখা, একদা এ রাজ্যে আরএসপি-র মুখ ক্ষিতি কন্যার এই সিদ্ধান্তে সেদিন আঘাত পেয়েছিলেন বামেদের প্রবীণ নেতারা৷ চমকে উঠেছিলেন এ রাজ্যের মানুষও৷ কিন্তু সম্ভবত সময়ের দাবি বুঝতে পেরেছিলেন বসুন্ধরা৷ তৃণমূলের মধ্যেই প্রকৃত বামপন্থা খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি৷ তার পর এ রাজ্যের রাজনীতি থেকে খাতায় কলমে আরএসপি-র বিলীন হয়ে যাওয়া হয়তো অবধারিতই ছিল৷ রাজ্যের কোনও নির্বাচনে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক কত শতাংশ ভোট পেল, তা নিয়ে তাদের দলের নেতারা ছাড়া আর কেউই হয়তো মাথা ঘামান না৷

শুধু আরএসপি-র রাজ্য দলের তকমা হারানো নয়, সোমবার আর এক বাম দল সিপিআই-ও সর্বভারতীয় দলের তকমা হারিয়েছে৷ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রমশ শক্তিক্ষয়ের পর এ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছে বামেরা৷ ক্ষমতা ফিরে পাওয়া এখনও তাদের কাছে দূরের গ্রহের মতোই কল্পনা৷ ভোট শতাংশে বৃদ্ধি, বিজেপি-কে টপকে দু নম্বর স্থান দখলেই এখন তৃপ্ত হতে হয় এ রাজ্যের বাম নেতাদের৷ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখা বামেদের কাছে বড় পরীক্ষা৷ একই ভাবে বড় শরিক সিপিএমের হাতে ধরে তাদের তিন ছোট শরিকও পায়ের তলায় কিছুটা মাটি ফিরে পায়, নাকি আরও অস্তিত্ব বিলোপের দিকে এগোয়, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের৷

(Feed Source: news18.com)