কলকাতাঃ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ কার্যকরী করে এ রাজ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকস্তরে ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু-সহ ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’-এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার সামগ্রিক বেসরকারীকরণ করতে চাইছে সরকার। এমনই অভিযোগ এআইডিএসও-র। তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে নামতে চাইছে সংগঠন। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেমিস্টার সিস্টেম চালুর প্রতিবাদেও পথে নামতে চাইছে তাঁরা। আন্দোলনকে আরও জোরদার করার আহ্বান ঘোষণা করা হয়েছে সংগঠনের তরফে। এরই অঙ্গ হিসেবে টানা দু সপ্তাহ ব্যাপী চলল নানা কর্মসূচি।
রাজ্যজুড়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে মতামত কর্মসূচি করা হয়। ২০ এপ্রিল ছাত্রছাত্রীদের মতামত জনসমক্ষে প্রকাশের উদ্দেশে ক্যাম্পাসের মতামত প্রকাশ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। আজ ২৭ এপ্রিল ক্যাম্পাসের মতামত বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে রাজ্য ব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় চলো কর্মসূচি।
চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু করে উচ্চশিক্ষার প্রাণসত্ত্বা হরণ এবং বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে এআইডিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষে রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “জাতীয় শিক্ষানীতি’২০ র নির্দেশিকা মেনে ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু, ৮২০৭ সরকারি বিদ্যালয় বন্ধ করার পরিকল্পনা এবং কেন্দ্র সরকার যেভাবে এনসিইআরটি ‘র মাধ্যমে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস পরিবর্তন সহ মনীষীদের চিন্তাকে সরিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ বরাদ্দের যাবতীয় তথ্য রাজ্যপালের হাতে কুক্ষিগত করে শিক্ষার স্বাধিকার হরণ করছে, তার প্রতিবাদে ১০ এপ্রিল রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার মুখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধিতা করলেও আসলে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের ছাত্র স্বার্থ বিরোধী শিক্ষা নীতিকেই এ রাজ্যে লাগু করছে। ইউজিসি’র নির্দেশ মেনে রাজ্যে উচ্চশিক্ষার পাঠক্রম প্রসঙ্গে রাজ্য শিক্ষা দফতর কয়েকদিন আগে এক নির্দেশিকার মাধ্যমে ঘোষনা করেছে, এখন থেকে স্নাতক ডিগ্রি কোর্সের পাঠ্যক্রম ৪ বছরের জন্য স্থির করা হচ্ছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই চার বছরের মধ্যে প্রথম বছরের পরই থাকবে ‘মাল্টিপল এন্ট্রি ও এক্সিট’ র সুবিধা। এমনকি বিভিন্ন কলেজ থেকে প্রাপ্ত নম্বর ক্রেডিট আকারে সঞ্চিত করে চার বছর পর মোট ক্রেডিট অর্জন করা যাবে৷ আসলে রাজ্য সরকারের এই ঘোষণার মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা বাজারের ক্রেতায় পরিণত করার সামগ্রিক পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সকে চার বছরের কোর্সে পরিণত করে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও ১ বছরের বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে৷ উচ্চশিক্ষা আরও ব্যয়-বহুল হয়ে পড়বে, যা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা বহন করতে পারবে না। ফলে বাড়বে ড্রপ আউটের সংখ্যা।
প্রতিবছর পছন্দ মতো বিষয় পরিবর্তনের পোষাকি নাম ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেম’ অর্থাৎ বিষয় নির্বাচনের বিজ্ঞান ভিত্তিক ইন্টার ডিসিপ্লিনারিকে ধ্বংস করে কোনও ডিসিপ্লিন না মেনে যা কিছু বিষয় নিয়েই হোক ক্রেডিট সংগ্রহ করে নেওয়া৷ আসলে এই পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার মান সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে, কলেজগুলি পরিণত হবে পরিকাঠামোহীন ডিগ্রি কেনা-বেচার জায়গায়৷ তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও৷
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেমিস্টার সিস্টেম চালু করার যে পরিকল্পনা রাজ্য সরকার করছে তার বিরুদ্ধেও চলবে আমাদের আন্দোলন। এপ্রিল মাসজুড়ে রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু বিষয়ক মত বিনিময় সভা কনভেনশন, সেমিনার, করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ শিক্ষা বাঁচানোর আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্যের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষানুরাগী নাগরিকবৃন্দদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতামতও সংগৃহীত হবে।
শিক্ষা ধ্বংসের এই নীল নক্সা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ যে ভাবে সারা দেশের পাশাপাশি এই রাজ্য কার্যকরী হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আগামী দিনে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
(Feed Source: news18.com)