চাকরি হারাবেন মানুষ, দুনিয়ার দখল নেবে প্রযুক্তি! বিবেকের দংশনে চাকরি ছাড়লেন AI-এর জনক

চাকরি হারাবেন মানুষ, দুনিয়ার দখল নেবে প্রযুক্তি! বিবেকের দংশনে চাকরি ছাড়লেন AI-এর জনক

নয়াদিল্লি: সৃষ্টির নামে পরীক্ষাগারে বসে দানব তৈরি করেছিলেন তিনি। নিজের সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই চলে যেতে হয়েছিল ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেস্টাইনকে। ২০০ বছর আগের সেই উপন্যাসের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে আজকের বাস্তব। নিজের সৃষ্ট আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (Artificial Intelligence) তথা কৃত্রিম মেধা (AI) নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগছেন জিওফ্রে হিন্টন (Geoffrey Hinton)। বিবেকের দংশনে এ বার মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিলেন তিনি। বরং কী বিপদ ঘনিয়ে আসছে, গোটা বিশ্বকে এ বার তা বোঝাতে উদ্যত হলেন তিনি (Science News)।

নিজের আবিষ্কার নিয়ে অনুশোচনায় ভুগছেন, জানিয়েছেন জিওফ্রে

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত নাম জিওফ্রে। কৃত্রিম মেধার জনক বা ‘গডফাদার’ বলা হয় তাঁকে। সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল থেকে মোটা বেতনের চাকরি ছাড়লেন তিনি (Tech News)।  নিজের সৃষ্টি প্রযুক্তি বিপজ্জনক বুঝেই গত সপ্তাহে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। ৭৫ বছর বয়সি জিওফ্রে জানিয়েছেন, নিজের আবিষ্কার নিয়েই অনুশোচনায় ভুগছেন তিনি। এ নিয়ে আমেরিকার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ সংবাদপত্রে মনের কথা উজাড় করে দিয়েছেন তিনি (Google)।

জিওফ্রে জানিয়েছেন, কৃত্রিম মেধা কতটা বিপজ্জনক, খোলাখুলি তা নিয়ে কথা বলতেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকার তুলে ধরে ট্যুইটারে লেখেন, ‘গুগলের সমালোচনা করতেই চাকরি ছেড়েছি বলে তুলে ধরেছেন কেড মেৎজ। আসল কথা হল, কৃত্রিম মেধা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলতেই চাকরি ছেড়েছি। গুগল যথেষ্ট দায়িত্ববোধই দেখিয়েছে। গুগলকে চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই রাখিনি’।

জিওফ্রের বক্তব্য, “এখন আর কোনও বাধা নেই। মুক্তকণ্ঠে কৃত্রিম মেধার বিপজ্জনক দিকগুলি নিয়ে কথা বলতে পারি আমি। এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা থেকে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে যথেষ্ট. আপাতত শুধু এই টুকু বলতে পারি যে, এখনও ওরা বুদ্ধিতে আমাদের ছাপিয়ে যায়নি। কিন্তু আমার মনে হয়, শীঘ্রই সেই ফারাক ঘুচে যাবে।”

দীর্ঘ কর্মজীবনে একাধিক মাইলফলক তৈরি করেছেন জিওফ্রে। ২০১২ সালে টরন্টোয় দুই স্নাতক পড়ুয়াকে নিয়ে গবেষণা করে বিশেষ অ্যালগোরিদম তৈরি করতে সফল হন, যার মাধ্যমে ছবি দেখে চিহ্নিতকরণে শক্তি পায় প্রযুক্তি। তাঁর অধীনে কর্মরত সেই পড়ুয়াদের একজন এই মুহূর্তে OpenAI-এর প্রধআন বিজ্ঞানী। কৃত্রিম মেধা নিয়ে জিওফ্রে যে কাজ করেছেন, তারই উন্নত সংস্করণ হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ChatGPT-র মতো কৃত্রিম মেধাপণ্য। কিন্তু এতে ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসতে পারে বলে দাবি জিওফ্রের। তিনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই এই ধরনের চ্যাট বটগুলি মানুষের মস্তিষ্কের মতো তথ্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

কৃত্রিম মেধার কারিকুরি দেখে এই মুহূর্তে তাজ্জব গোটা দুনিয়া। মহাত্মা গান্ধীর সেলফি, রোনাল্ডোকে ইফতার রান্না, ফেলুদাকে দার্জিলিংয়ে ছবি তুলতে দেখে বাধ মানছে না আবেগ। কিন্তু জিওফ্রে জানিয়েছেন, শীঘ্রই এই কৃত্রিম মেধা কোটি কোটি মানুষে চাকরি ছিনিয়ে নেবে। এমন একটি পৃথিবীর সৃষ্টি হবে, যেখানে সত্য-মিথ্যা, কল্পনা এবং বাস্তবের মধ্যে কোনও ফারাক থাকবে না। আসল-নকলের মধ্যে ফারাক বোঝাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। দুষ্কৃতকারীদের হাতে পড়লে এই প্রযুক্তি কী বিপদ ডেকে আনবে, তা নিয়েও সতর্ক করেছেন জিওফ্রে।

৭৫ বছরে পৌঁছে বিপদ টের পেয়েছেন জিওফ্রে

কিন্তু সারা জীবন যে প্রযুক্তির জন্য জীবনপাত করলেন, আচমকা তার বিরুদ্ধে কেন সকলকে সতর্ক করছেন জিওফ্রে? তাঁর সাফ যুক্তি, বয়স ৭৫ হয়ে গিয়েছে তাঁর। অবসরের সময় হয়ে গিয়েছে। সত্যটা সকলের জানা উচিত। কৃত্রিম মেধা নিয়ে এত মাতামাতিতে আদতে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সেই তুলনায় গুগল ঢের বেশি বিশ্বাসযোগ্য।

(Feed Source: abplive.com)