চাষ বললে সাধারণত শস্য, ডাল, সবজি ও ফুল চাষের কথাই মনে হয়। অনেক কৃষকও এ ধরনের চাষেই আগ্রহ দেখান। কিন্তু বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চাষ করলে লাভ হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই ঘাস চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তেলঙ্গনার মেহবুবনগর জেলায় এতদিন ঐতিহ্যবাহী ফসল যেমন তুলা, ধান, ভুট্টা ইত্যাদি চাষই করা হত। কিন্তু স্থানীয় রাজাপুর মণ্ডলের তিরুমালাপুরের কৃষক কট্টা সন্তোষ গুপ্ত ঘটিয়ে ফেললেন এত অদ্ভুত ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর জমি অতিরিক্ত বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। পরিস্থিতির চাপে নিজের জমিও বেচে দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু কৃষির প্রতি অনুরাগ তাঁর কমেনি। তাই একটু অন্যভাবে ভাবতে শুরু করেন। লাভের আশায় জমি ইজারা নিয়ে ঘাস বোনা শুরু করেন। সঙ্গে ছিল ফুলের চাষ। সেই চাষ এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নতুন করে জমি কিনেছেন সন্তোষ।
‘কার্পেট গ্রাস’-এর চাহিদা আজকাল তুঙ্গে। সুন্দর সুন্দর বাড়ির বাইরে বা ছাদে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয় এই ঘাস। হায়দরাবাদ ঘাটকেসার এলাকায় জমি লিজ নিয়ে তাই এই ঘাসের চাষ শুরু করেন সন্তোষ। গত ১৬ বছর ধরে ঘাস চাষ করছেন। লাভও দেদার। এখন তিরুমালাপুর দোদলোনিপল্লি নওয়াবুপেটা মণ্ডলের ঘটকেসার এলাকায় তাঁদের পরিবারের ৫০ একরের বেশি জমি রয়েছে। সেখানে বছরের ছ’মাস ঘাসের চাষ হয়।
বাজারে এক বর্গফুট ঘাসের দাম ১২ টাকার বেশি। তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের জেলাগুলি ছাড়াও, মহারাষ্ট্রে রফতানি হচ্ছে এই ঘাস। তিরুমালাপুরে একটি নার্সারি স্থাপন করেতেন সন্তোষ। সেখানে ফুলের চাষও হয়। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ শ্রমিক কাজ করেন।
চাষের পদ্ধতি—
প্রথমে সন্তোষ অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিয়াম থেকে কার্পেট গ্রাসের বীজ এনে বপন করেছিলেন। ঘাস জলে ধুয়ে ধানের মতো জমিতে রোপণ করা হয়। জৈব সার, ডিএপি ও ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। আগাছা প্রতিরোধের জন্য ওষুধও স্প্রে করা হয়।
সন্তোষ বলেন, ‘চাষের কাজ করতেই ভালবাসি। কয়েক বছর আগে, লোকসানে পড়ে মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। ঋণ পরিশোধের জন্য খামার বিক্রি করেছি। তারপর জমি ইজারা নিয়ে চাষ করছি। ঘাস রফতানি করে ভাল লাভ হয়েছে।’
সন্তোষ জানান, কার্পেট গ্রাস চাষে যদি ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা যায় তবে ১.৫ কোটি টাকা লাভ পাওয়া যেতে পারে।