‘বললেই পদত্যাগ করব, বই লিখলে বেস্ট সেলার হবে!’ মদনের নিশানায় কে? তৃণমূলে ঝড়

‘বললেই পদত্যাগ করব, বই লিখলে বেস্ট সেলার হবে!’ মদনের নিশানায় কে? তৃণমূলে ঝড়

কলকাতা: এসএসকেএম বিতর্কে আরও বেপরোয়া মদন মিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেও সরাসরি পদত্যাগের হুমকি দিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক।

একই সঙ্গে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই দলীয় নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দিলেন তিনি সোনালি গুহ, মুকুল রায়, দীনেশ ত্রিবেদী বা শুভেন্দু অধিকারী নন। মদনের হুঁশিয়ারি, রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে টিউশন পড়িয়েও দিনযাপন করতে তৈরি তিনি। তবে পদত্যাগ করলে তাঁর কেন্দ্র কামারহাটিতে এক মাসের মধ্যে পুনর্নির্বাচন করার অনুরোধ করেছেন মদন।

একই সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বকে মদন মনে করিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল তাঁকে প্রতীক দিলেও তাঁকে নির্বাচিত করেছেন কামারহাটির মানুষ। আবার নাম না করেই হুঁশিয়ারির সুরে মদন বলেছেন, তিনি যদি বই লেখেন তাহলে তা বইমেলায় বেস্ট সেলার হবে।

গতকাল এসএসকেএম-এ এক রোগীকে ভর্তি করা নিয়ে মদনের ক্ষোভের সূত্রপাত। মদন মিত্রের অভিযোগ, তিনি নিজে চেষ্টা করেও দুর্ঘটনায় এক গুরুতর আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। এসএসকেএম হাসপাতাল বয়কটের ডাকও দেন মদন৷ তৃণমূল বিধায়ক আরও দাবি করেন, বামফ্রন্ট আমল হলে এক মিনিটেই ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারতেন তিনি৷ যদিও মদন মিত্রের তোলা এই সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ হাসপাতালের অধিকর্তা বরং অভিযোগ করেন, যে রোগীর হয়ে মদন মিত্র সওয়াল করেছেন, সেই রোগীর পরিবারই হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে৷ এমন কি, মুখ্যমন্ত্রীও চিকিৎসক-নার্সদের হেনস্থার কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন বলে উল্লেখ করেন এসএসকেএম-এ অধিকর্তা৷ যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, মদন মিত্রের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীও৷

এর পরেই ফের বোমা ফাটান মদন৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘যাঁরা গতকাল হাসপাতালে দায়িত্বে ছিল তারা কেন সাসপেন্ড হবেন না? ট্রমা কেয়ারে পশ্চিমবঙ্গের দশ কোটি মানুষের রক্ত লেগে আছে৷ ওখানে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভিখারি গেলেও দেখতে হবে৷ স্বাস্থ্য কর্মীদের কথা বলছেন? যে ছেলেটা আহত হয়েছে, সে নিজেও স্বাস্থ্য কর্মী৷ তাঁর মাথা এবং বুকে আঘাত লেগেছে৷ সেটা শুনে আমি ছুটি গিয়ে কি অপরাধ করেছি?’

ক্ষুব্ধ মদন এর পরেই বলেন, ‘পদত্যাগ করতে বললে করে দেব৷ কিন্তু একটাই অনুরোধ, একমাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে৷ মনে রাখবেন, আমি সোনালি, মুকুল, দীনেশ ত্রিবেদী, শুভেন্দু অধিকারী নই- আমি মদন মিত্র৷ খুব বেশি হলে পলিটিক্স ছেড়ে দেব৷ কী দিয়েছেন? ওই তো একটা এমএলএ-র মাইনে৷ ছেড়ে দিয়ে টিউশন পড়াবো৷ এখনও যা শিক্ষা আছে পড়ালে বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়ে যাবে৷ খালি আমার পরিবারের উপরে কোনও প্রতিহিংসা নেবেন না৷’

শা়সক দলের অস্বস্তি আরও চরমে পৌঁছে দিয়ে মদন আরও আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বিনীত ভাবে একটা কথাই বলব৷ আমি যদি লিখতে আরম্ভ করি, বইমেলায় আমার বই বেস্ট সেলার হবে৷ কারণ ৩৪ মাসের এমন ঘটনা লিখব ৩৪টা সংস্করণ প্রকাশ হবে৷ আমেরিকায় ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে৷’

মদনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, গতকালের ঘটনা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কি না? অভিমানী মদনের জবাব, ‘কী করে বলব৷ ওনার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, এমন বৃত্তে তো উনি আমাকে রাখেননি৷ দেখা হলে জিজ্ঞেস করেন কেমন আছো? আমি বলি, ভাল আছি৷’

তবে এ দিন নরমে গরমে দল এবং দলনেত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশও করেছেন মদন৷ আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল তাঁকে জেতায়নি, জিতিয়েছে মানুষ৷ তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘আমি কামারহাটি থেকে নির্বাচিত৷ তৃণমূল আমাকে নির্বাচিত করেনি৷ আমি কৃতজ্ঞ তৃণমূল আমাকে প্রতীক দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচিত করেছে জনগণ৷ আমাকে বাঁচিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ভোটে একদম শেষ বেলায় প্রচার করে সাহায্য করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আমি দেড় বছর জেলে থাকার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে মন্ত্রী রেখে দিয়েছিলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুতো খুলে মাথায় করে রাখতে রাজি আছি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য আমার পরিবার বেঁচে আছে৷’

(Feed Source: news18.com)