উন্মুক্ত দুই বাহু, স্কন্ধে রক্তিম বর্ণ চন্দ্রমা, প্রায়শ্চিত্তকারী জিশু ধরা দিলেন ক্যামেরায়

উন্মুক্ত দুই বাহু, স্কন্ধে রক্তিম বর্ণ চন্দ্রমা, প্রায়শ্চিত্তকারী জিশু ধরা দিলেন ক্যামেরায়

নয়াদিল্লি: শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, পাহাড়ের চূড়ায় দুই বাহু ছড়িয়ে অবস্থান তাঁর। খাঁড়ার ঘা থেকে পৃথিবীকে আগলে রাখাই যেন উদ্দেশ্য। ব্রাজিলের সেই ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’ (Christ the Redeemer) মূর্তিই এবার অন্য রূপে ধরা দিল। চিত্রগ্রাহকের অসীম ধৈর্যেরই ফলশ্রুতি জিশু খ্রিস্টের নয়া এই রূপ। যাতে দুই হাতে চাঁদকে তিনি ধরে রেখেছেন বলে ঠাহর হয় (Viral Pic)।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেখানে মাউন্ট কার্কোভাদোর চূড়ায় অবস্থিত ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’-এর মূর্তি এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, যা কিনা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম। ওই মূর্তি আসলে জিশু খ্রিস্টের। দুই হাত ছড়িয়ে তিনি পৃথিবীবাসীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন যেন, এই রূপই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মূর্তিতে।

সম্প্রতি ওই মূর্তিরই একটি ছবি তুলেছেন স্থিরচিত্র গ্রাহক লিওনার্দো সেন্স। গত ৪ জুন ছবিটি তোলেন লিওনার্দো। চন্দ্রাস্তের সময় তোলা ছবি। তাতে অধোগামী চাঁদকে এমন সময় ক্যামেরাবন্দি করেন লিওনার্দো, যা দেখলে মনে হয়, দুই হাত ছড়িয়ে, নিজের কাঁধে চাঁদের ওজন বহন করছেন জিশু। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের তোলা ওই ছবি পোস্ট করেন লিওনার্দো। তার পরই সেটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।

লিওনার্দো জানিয়েছেন, জিশুর মূর্তির পশ্চাদভাগ দিয়ে চন্দ্রাস্ত ঘটে। বিশেষ ওই মুহূর্তটি কোনও ভাবে যদি ক্যামেরাবন্দি করা যায়, এই ভাবনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল তাঁকে। বিগত তিন বছর ধরে সেই চেষ্টাই করছিলেন। অবশেষে তাতে সফল হলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, রিও ডি জেনিরোর সমুদ্রসৈকতে, প্রায় সাত মাইল দূর থেকে তিনি ছবিটি তুলতে সফল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লিওনার্দো।

বিশেষ ওই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে তাঁকে যথেষ্ট কালঘাম ছোটাতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন লিওনার্দো। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, চন্দ্রোদয় এবং চন্দ্রাস্তের সময় তাঁদের অবস্থান নিয়ে বিশদ পড়াশোনা করেন তিনি। কোন সময় মূর্তি থেকে কোন অবস্থানে থাকে চাঁদ, তা নিয়েও বিশদ গবেষণা করেনষ শেষ মুহূর্তে সব কিছু ঠিকঠাক এগনোতেই ক্য়ামেরায় ওই বিশেষ মুহূর্ত ধরতে পেরেছেন তিনি।

জিশুর কাঁধে চাঁদ রয়েছে বলে ঠাহর হয় যে ছবিতে, সেটি ছাড়াও ওই দিন তোলা আরও একাধিক ছবি সামনে এনেছেন লিওনার্দো। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেগুলিতে ‘লাইক’ ঠুকেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় হু হু করে ছড়িয়েও পড়েছে ছবিগুলি। অনেকে লওনার্দোর তোলা ছবি দেখে অনুভূতিও ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

রিও ডি জেনিরোর ওই মূর্তিটি ৯৮ ফুট উঁচু। দুই হাত  ছড়ানো অবস্থায় প্রস্থ ৯২ ফুট। বর্গাকার একটি বেদির উপর সেটির নির্মাণ হয়েছে। ফরাসি ভাস্কর্য শিল্পী মূর্তির স্রষ্টা। সেটি তৈরি করেন ব্রাজিলের ইঞ্জিনিয়ার হেইতর দা সিলভা কস্ট। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার আলবা কাকোও নির্মাণে সহযোগিতা করেন। রোমানিয়ার ভাস্কর্য শিল্পী গোরহে লিওনিদা মূর্তির মুখমণ্ডল তৈরি করেন।

জিশু খ্রিস্টকে ওই মূর্তিতে প্রায়শ্চিত্তকারী, প্রতিত্রাতা হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’ নাম রাখা হয়েছে তাই। বোঝানো হয়েছে যে, প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমেই মুক্তির পথ মেলা সম্ভব, যা কিনা, জিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। বাইবেল অনুযায়ী, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মুহূর্তে নিজের মৃত্যু দিয়ে পৃথিবীবাসীর পাপস্খলনের প্রার্থনা করেছিলেন তিনি।

(Feed Source: abplive.com)