টালির চাল, মাটির ঘরে রোজের সংগ্রাম করে বাস, সেখান থেকে পদক জয় মেয়ের

টালির চাল, মাটির ঘরে রোজের সংগ্রাম করে বাস, সেখান থেকে পদক জয় মেয়ের

হুগলি: খেলো ইন্ডিয়ায় ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছে হুগলির পোলবার তুহিনা মাইতি। গত ২৩ মে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় আয়োজিত খেলো ইন্ডিয়া গেমসের কাবাডিতে ব্রোঞ্জ পদক জয় বাংলার দল। সেই দলের একজন অন্যতম খুঁটি ছিলেন পোলবার এই কলেজ পড়ুয়া। খেলো ইন্ডিয়া কাবাডি ইউনিভার্সিটি গেমসে কোয়াটার ফাইনালে ম্যাচ জিতে ৭ পয়েন্টে দুর্গা ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে তুহিনা সহ তার সহপাঠীরা। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় খেলে তার ঝুলিতে রয়েছে রয়েছে একাধিক পুরস্কার।

চন্দননগর ডুপ্লেক্স কলেজে এডুকেশন অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তুহিনা। বাড়িতে মা বাবা ও দুই ভাই বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। সংসারে অভাব অনটন রয়েছে অনেক তবুও তুহিনার হার না মানা জেদ তাঁকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তবুও দুটি ন্যাশনাল স্কুল গেমস ও একটি জুনিয়র ওপেন ন্যাশনাল খেলে পদক জয় করেছে তুহিনা।

তুহিনার বাবা মন্টু একজন সোনার দোকানের কর্মচারী। কাজ করে যা আয় হয় তা থেকেই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন রকমের সংসার চলে। টালির চাল ও মাটির ঘরে কোন রকমে সংসার করে পরিবার। বর্তমানে সরকারি আবাস যোজনার ঘর পেলেও তা শেষ করতে পারেনি বাবা৷

আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় পড়াশোনা ও খেলাধুলো চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন তাঁর পরিবারের কাছে। তুহিনার আগামী দিনের ইচ্ছা তাঁর এই খেলাধুলার জন্য সে যদি কোন রকম একটি চাকরি পায় তাহলে তাঁর পরিবারটা একটু বাঁচবে। একইসঙ্গে সে তার খেলাধুলাও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।

এই বিষয়ে তুহিনা বলেন, সে যখন ক্লাস থ্রিতে পড়তো তখন থেকেই তার মাঠের সঙ্গে যোগ। প্রথম কিছু বছর জিমন্যাস্টিক করে তার পর ভর্তি হয় কবাডিতে। বর্তমানে তাঁদের এমন অবস্থা কবাডি প্র্যাকটিস করতে যাওয়ার জন্য তাকে অনেকটা পথ অতিক্রম করে যেতে হয় পায়ে হেঁটে বা কখনো ভাই সাইকেল করে দিয়ে আসে। তার পর সেখান থেকে অটো, টোটো ধরে তার মাঠে আসতে হয়। সেই খরচটাও এত সেই কারণে প্রতিদিন তার পক্ষে প্র্যাকটিসে যাওয়া সম্ভব হয় না। সে জানিয়েছে সরকার যদি তার উপরে একটু আলোকপাত করে তাহলে তার খেলা পড়াশোনা এবং তার পরিবার একসঙ্গে স্বচ্ছন্দে চলতে পারবে।

তুহিনার মা বলেন, ‘‘পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে খেলার জন্য প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম। আমি ও মেয়ে একসঙ্গে কঠিন লড়াই করে এত দূর এগিয়ে গেছি। আমি চাই সরকারি সাহায্য পেলে খেলাধুলো বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে উপকার হয়।যদি খেলার ক্ষেত্রে চাকুরি হয় তাহলে খুব ভালো হয় আমাদের।খুব কষ্ট করে ওর বাবা সংসার চালাচ্ছে। মেয়েকে প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে প্র্যাকটিস করতে যেতে হয়। মেয়ে খুব কঠিন লড়াই করছে সাফল্যের জন্য। আগামী দিনে আপনি নিজের সাফল্য এগিয়ে যাক তবেই আমার ইচ্ছা পূরণ হবে ।’’

(Feed Source: news18.com)