দেশের মধ্যে প্রথম আধার কার্ড পেয়েছিলেন ইনি! কে তিনি, কোথায় আছেন এখন ?

দেশের মধ্যে প্রথম আধার কার্ড পেয়েছিলেন ইনি! কে তিনি, কোথায় আছেন এখন ?

পুণে: দুপুর আড়াইটে। সারা সকাল কাজ সেরে নিজের কুঁড়েঘরে ফিরলেন রঞ্জনা সোনাওয়ানে। এবার স্বামী-সন্তানের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে। রঞ্জনার কুঁড়েঘরে গ্যাস নেই। মাটির উনুনই জ্বালালেন। গোটা কুঁড়ে ঢেকে গেল ধোঁয়ায়।

শুধু গ্যাস নয়, রঞ্জনার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, নেই শৌচাগারও। নোটবন্দীর পর থেকে তিনি একটা ঠিকঠাক কাজও জোটাতে পারেননি। তাঁর হাতে টাকাও নেই। তবে রঞ্জনার কাছে আধার কার্ড আছে। তিনিই দেশের প্রথম আধার কার্ড হোল্ডার। গোটা ভারত তাঁকে এই কারণেই চেনে।

রঞ্জনা পেশায় দিনমজুর। খেলনাও বানান। গ্রামে মেলা বসলে নিজের হাতে বানানো সে সব খেলনা বিক্রি করেন। দেশের প্রথম আধার কার্ড তিনি পেলেও সরকারের উপর ক্ষোভ চেপে রাখেননি রঞ্জনা।

স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘আমি মনে করি সব সরকারই শুধু রাজনীতির জন্যে গরিবদের ব্যবহার করে। আর কাজ করে ধনীদের জন্য। আমার বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন কাজও পাই না। সারাংখেদা মেলায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। খেলনার দোকান দিতাম। কিন্তু আমার কাছে মেলায় যাওয়ার টাকাটাও নেই’।

রঞ্জনার গ্রামের নাম টেম্বলি। মহারাষ্ট্রের এক প্রত্যন্ত এলাকা। পুণে থেকে ৪৭০ কিমি ভিতরে। ভারতের প্রথম আধার গ্রাম হিসেবে কদিন খুব নাচানাচি হয়। তারপর টেম্বলি যে তিমিরেই ছিল সেই তিমিরেই।

টেম্বলির সবচেয়ে কাছের শহর ১০ কিমি দূরে, শাহদা। সেখানেই ব্যাঙ্ক। তবে নোটবন্দীর সময় এই গ্রামের কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। কারণ কারও কাছে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটই ছিল না। গ্রামের বেশিরভাগ লেনদেন নগদেই হয়, সেটাও ৫০ কিংবা ১০০ টাকার নোটে।

শাড়ির আঁচল দিয়ে একটি ফ্রেমে বাঁধানো ছবির ধুলো পরিষ্কার করে দেখালেন রঞ্জনা। সেখানে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আধার কার্ড দেওয়া হচ্ছে তাঁকে, সেই মুহূর্তটিকেই ফ্রেমবন্দী করে রাখা হয়েছে।

রঞ্জনার কথায়, ‘এখানে ব্যাঙ্ক নেই। বিমা নেই। ২০১০ সালে নেতারা এসে আধার কার্ড দিয়ে ফটো তুলে চলে যায়। তারপর থেকে আমাদের কীভাবে আছি কেউ জিজ্ঞাসা করতে আসেনি। বিদ্যুতের মিটারটা খুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। আধারের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক পয়সা নেই। আজ পর্যন্ত আমার অ্যাকাউন্টে কোনও ভর্তুকি জমা পড়েনি।’

(Feed Source: news18.com)