আকাশ দেখতে বাধা, পড়শির জমিতে একে একে ৩২টি বৃক্ষনিধন, ১২ কোটি টাকা জরিমানা হল এক ব্যক্তির

আকাশ দেখতে বাধা, পড়শির জমিতে একে একে ৩২টি বৃক্ষনিধন, ১২ কোটি টাকা জরিমানা হল এক ব্যক্তির

নয়াদিল্লি: জানলা দিয়ে আকাশ দেখা যায় না। যুক্তি ছিল স্রেফ এইটুকুই। তাতেই একের পর এক বৃক্ষনিধন। ভারতের মতো দেশে তা নিয়ে সেভাবে কেউ মাথা না ঘামালেও, বৃক্ষনিধন এককথায় গুরু অপরাধেরই তকমা পেল আমেরিকায়। একে একে ৩২টি গাছ কাটার শাস্তিস্বরূপ এক ব্যক্তিকে বন্ড, পুনরায় গাছ লাগানো এবং জমি পরিষ্কার বাবদ ১৫ লক্ষ ডলারের জরিমানা করা হল, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা (Viral News)।

আমেরিকার নিউ জার্সির ঘটনা। ৪০ বছরের সামি সিনওয়ে পড়শির বিরুদ্ধে বৃক্ষনিধনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর জমিতে বসানো ওক, বার্চ এবং মেপল মিলিয়ে ৩২টি গাছ কেটে ফেলেছেন পড়শি গ্রান্ট হেবার। চোখের সামনে বছরের পর বছর ধরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলিকে মৃত দেখে তাঁর উক্তি ছিল, “মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে আমার। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এই গাছগুলিকে বড় করতে অনেক বছর লাগে।” (US Man Fined)

সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিউ জার্সিতে একই এলাকায় বসবাস সামি এবং গ্রান্টের। এ বছর মার্চ মাসে দু’জনের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত। সামির জমিতে থাকা গাছের জন্য আকাশ দেতে পান না বলে দাবি করেন গ্রান্ট। সেই নিয়ে ঝগড়া এমন স্তরে পৌঁছয় যে, কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায় দু’জনের মধ্যে। তবে সেখানেই মেটেনি বিষয়টি।

সামি জানিয়েছেন, মার্চ মাসেই একদিন নিজের জমিতে গাছ কাটার শব্দ পান তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তাতে ব্যাটারিচালিত করাত দিয়ে একের পর এক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে বলে দেখতে পান তিনি। যতক্ষণে কাছাকাছি পৌঁছন তিনি, দেখেন কার্যত সমাধিস্থলে পরিণত হয়েছে তাঁর জমি। ২০ থেকে ১৫০ বছর বয়সি মূল্যবান গাছগাছালি শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে।

সামি জানিয়েছেন, জমিতে ট্রাক, গাছ কাটার যন্ত্র এবং একদল ঠিকাদারকে দেখতে পান তিনি। গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, গাছগুলি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকায় আকাশ, পাহাড় দেখতে পাচ্ছিলেন না গ্রান্ট। তাই গাছ কাটতে তাঁদের বরাত দেন। সামি জানিয়েছেন, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল তাঁর জমি। তা টপকেই ভিতরে ঢোকেন ঠিকাদাররা। তার পর একের পর এক বৃক্ষ নিধন করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে বৃক্ষনিধন আটকায়। পরে বিষয়টি পৌঁছয় আদালতে।

এই ঘটনায় গ্রান্টকে দোষী বলেই চিহ্নিত করেছে আদালত। কমপক্ষে ৩২ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বেআইনি ভাবে বৃক্ষনিধন, অন্যের সম্পত্তিতে বেআইনি প্রবেশের ধারাও রয়েছে তার মধ্যে। যে ঠিকাদারদের বরাত দিয়েছিলেন গ্রান্ট, তাঁদের মধ্যে দু’জনকেও ২ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে গ্রান্টকে চরম মাশুল চোকাতে হবে।

একটি সন্ত্রাসদমন সংস্থার সিইও গ্রান্ট। প্রত্যেক গাছ পিছু সর্বাধিক ২৬ লক্ষ ২৭ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। যত গাছ কাটা পড়েছে, সব সরানোর দায়িত্ব, জমি পরিষ্কার করে পুনরায় একই রকমের মূল্যবান বা তার চেয়েও বেশি মূল্যবান গাছ বসানোর দায়ও তাঁর। জমিতে মাটি ফেলা, কাঁটাতার মেরামতির দায়িত্বও চেপেছে তাঁর কাঁধে। তাতেই জরিমানার অঙ্ক ১২ কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে সামি বলেন, “গাছ ভালবাসি আমি। পরিবেশের যত্ন নিতে ভাল লাগে। তাই মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। এতগুলি গাছ শুধু শুধু কেউ কেটে ফেলে! সব কিছু ফেরত চাই আমার।”

(Feed Source: abplive.com)