ঋতুস্রাব নিয়ে গাছে জল দিলে কি গাছ শুকিয়ে যায়? আলোচনা সভার কথাবর্তা এক নিমেষে বন্ধ করে দিল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। উঠে দাঁড়িয়ে বক্তার দিকে তার ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে সত্যিই কয়েক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা হলঘর। পরে সেই মেয়েটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, এটা কুসংস্কার। কিন্তু তাতেও সব সমস্যার সমাধান হয়নি। মেয়েটি ফের বলে, এসব আমার বাবা-মা বুঝতে চাইবে না। মন কথা শুনে অবশ্য অবাক হননি রিশু রঞ্জন। বরং ওই কিশোরীর বাবা, মা-কে ডেকে নিজে কথা বলেন। বুঝিয়ে দেন, মেয়ের জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে তা প্রকৃতির নিয়মে। তার সঙ্গে যোগ রয়েছে শরীর ও মনের সুস্থতার, কোনও অপবিত্রতার নয়।
মানুষ যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্ম দিচ্ছে তখনও এই ভারতে রয়ে গিয়েছে মেয়েদের রজঃস্বলা হওয়া নিয়ে নানা ধরনের কুসংস্কার। নির্দিষ্ট বয়সের পর সমস্ত নারী শরীরেই ঘটে হরমোন জনিত পরিবর্তন। কিন্তু সেই পরিবর্তনের লক্ষণকে আজও অপবিত্র বলে মনে করা হয়। ঋতুস্রাব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে এখনও দ্বিধাবোধ করেন সর্ব শ্রেণির মানুষ।
জামশেদপুরের খাস মহলের বাসিন্দা রিশু রঞ্জন, বর্তমানে নেতাজি সুভাষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন। এরই পাশাপাশি নামিয়ান স্মাইল ফাউন্ডেশন রোটারি ক্লাব অফ জামশেদপুর এবং রোটার্যাক্ট ক্লাব অফ জামশেদপুরের যৌথ উদ্যোগে ‘জোহর পিরিয়ড ক্যাম্পেন’ চালাচ্ছেন। যার উদ্দেশ্যই হল গ্রামের মেয়েদের সচেতন করা। এখনও পর্যন্ত রিশু ৪৫ হাজার মেয়েকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতন করেছেন। জামশেদপুর বহরগোদা চাকুলিয়া, হাতা, হলদিপোখার, পটকা, পাটমাদাও গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে তিনি মিলিত হন এলাকার কিশোরীদের সঙ্গে, তাঁদের মায়েদের সঙ্গেও। কথা হয় ঋতুস্রাব নিয়ে। যে কোনও প্রশ্নের উত্তর সুন্দর ও সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেন রিশু। তবে শুধু গ্রাম নয়। শহরের কিশোরিরাও এমন ট্যাবুর শিকার। সেই কথা জানাতে গিয়েই রিশু শোনান সেই পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীর কথা, যার বাবা-মা তাকে ঋতুস্রাবের সময় বাগান করতে বাধা দেন। রিশু বলেন, ‘গ্রাম, শহর বা শিক্ষা অশিক্ষার বাইরে রয়ে গিয়েছে অসচেতনতা। এটা থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরি।’