অন্ধকারে চারদিকে আলোকিত সামুদ্রিক প্রাণী…টাইটান-যাত্রীদের শেষ মুহূর্ত কেমন ছিল

অন্ধকারে চারদিকে আলোকিত সামুদ্রিক প্রাণী…টাইটান-যাত্রীদের শেষ মুহূর্ত কেমন ছিল

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে টাইটানের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ভুলতে পারছেন না বিশ্ববাসী। এখনও আতঙ্ক গ্রাস করে আছে অতল অতলান্তিকে টাইটানের চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়ার পর্ব। ডুবোজাহাজ টাইটানের ভিতরে ৫ যাত্রীর জীবনের শেষ দুঃসহ মুহূর্তগুলি কেমন কেটেছিল? সেই ভাবনা নিয়েও উঠে আসছে বহু জল্পনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, টাইটানের যাত্রীদের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত কেটেছিল নিকষ অন্ধকারে। তাদের চারদিকে অতলান্তিক মহাসাগরে বিচরণ করছিল সামুদ্রিক প্রাণীর দল। আরও নিশ্চিত করে বললে অতলান্তিক মহাসাগরের বায়োলুমিনেসেন্ট বা স্বআলোকিত প্রাণী। অর্থা‍‍ৎ জোনাকির মতো যে সব প্রাণীর দেহে আলোর উৎস আছে৷ মহাসাগরের অতল গভীরতায় সূর্যালোক প্রবেশ করে না৷ তাই প্রাণীদেহ থেকে বিচ্ছুরিত আলোই ভরসা৷ ঘন অন্ধকারে এই আলোকিত প্রাণীদের চলাফেরার দৃশ্য অপার্থিব৷

ডুবোজাহাজ টাইটানে পাঁচ যাত্রীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন পাকিস্তানের ধনকুবের শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর ছেলে সুলেমান৷ তাঁর স্ত্রী ক্রিস্টিন দাউদ এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন অনেক দিন ধরেই তাঁর স্বামী আগ্রহী ছিলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখবেন বলে৷ ২০১২ সালে তাঁরা সিঙ্গাপুরে একটি প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলেন সপরিবারে৷ ওশনগেট সংস্থার ডুবোজাহাজ টাইটানে স্বামীর সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল ক্রিস্টিনেরও৷ কিন্তু অতিমারি পর্বে বিঘ্নিত হয় সেই পরিকল্পনা৷

ক্রিস্টিনের পরিবর্তে টাইটানে সওয়ার হন তাঁদের একমাত্র সন্তান ১৯ বছর বয়সি সুলেমান৷ বহু টানাপড়েন ও বিঘ্ন পেরিয়ে ছেলেকে নিয়ে টাইটানে যাত্রা শুরু করেন ধনকুবের বাবা৷ এই যাত্রায় মাথাপিছু টিকিট ছিল আড়াই লক্ষ ডলার৷ কেন এই যাত্রার আগে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেল না উড়ান? এখনও ভেবে চলেছেন ক্রিস্টিন৷

টাইটানের ভিতরে যাত্রীদের জন্য ছিল অপরিসর বাঙ্ক বেড, জেমস ক্যামেরনের আইকনিক ‘টাইটানিক ছবি’ দেখার ব্যবস্থা এবং বুফে কায়দায় খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত৷ যাত্রীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পছন্দের গান শোনার৷ তবে লোকসঙ্গীত নিষিদ্ধ ছিল সেখানে৷ প্রস্তুতি পর্বে যাত্রীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য খামতি রাখেনি ওশনগেট৷ দাবি ক্রিস্টিনের৷

ডুবোজাহাজের ব্যাটারি পাওয়ার বাঁচানোর জন্য যাত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আলো নিভিয়ে রাখার৷ তাই অনুমান করা হচ্ছে, ডুবোজাহাজ ধ্বংসের মুহূর্তেও নিকষ অন্ধকার ছিল টাইটান৷ চারদিকে আলোকিত সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখতে দেখতে পছন্দের গান শুনছিলেন যাত্রীরা৷

দাউদ ও সুলেমান ছাড়াও টাইটান-এ ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং৷ উড়ান শিল্পে তাঁর নাম ও সংস্থা প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান৷ দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাঁর নামের পাশে উজ্জ্বল একাধিক গিনেস রেকর্ড৷ এই তিন যাত্রীর পাশাপাশি ওই ডুবোযানে ছিলেন দুজন ক্রু সদস্য৷ তাঁদের মধ্যে পল অঁরি নার্গিওলেট একজন অভিজ্ঞ ডাইভার এবং টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ বিশেষজ্ঞ৷ পঞ্চম ব্যক্তি ছিলেন ওই অভিযাত্রী সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ৷

টাইটানিক দেখতে গিয়ে পাঁচ দুঃসাহসী অভিযাত্রীর জীবন থেমে যায় একসঙ্গেই৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলের চাপে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় টাইটান৷

(Feed Source: news18.com)