প্রতি বছর অগাস্ট মাসকে সোরিয়াসিস সচেতনতা মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণ এবং রোগীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলাটাই হল এর মূল লক্ষ্য। এছাড়া রোগীরা যাতে এ নিয়ে অহেতুক মানসিক চাপ ভোগ না করেন, তার জন্য তাঁদের এই রোগের চিকিৎসা বিকল্প সম্পর্কে অবগত করানো হয়। সোরিয়াসিস হল এক ধরনের ক্রনিক ইমিউন চর্মরোগ। যার কারণে স্ক্যাল্প, হাঁটু, কনুই, নখ, হাত ও পায়ের পাতায় মাছের আঁশের মতো সাদা চামড়া উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে দগদগে লাল দাগও দেখা যায়। এই রোগের সঙ্গে কিন্তু জড়িয়ে থাকা সামাজিক কলঙ্কের একটা বিষয়ও, যেটা রোগীর মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই রোগ ও তার জটিলতার বিষয়ে আলোচনা করছেন বেঙ্গালুরুর ইলেকট্রনিক সিটির কাবেরী হাসপাতালের ডার্মাটোলজি কসমেটোলজি ডার্মাটোসার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. শশী কিরণ এ আর।
ডা. শশী কিরণ এ আর
ভারতীয় জনসংখ্যার ০.৫-৩ শতাংশই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে রোগের জটিলতা কারও ক্ষেত্রে কম তো কারওর ক্ষেত্রে বেশি। স্ক্যাল্পেই সবথেকে বেশি আক্রমণ করে এই রোগ। ফলে অনেকেই সোরিয়াসিসকে খুশকি ভেবেও ভুল করেন। এই রোগের ট্রিগারগুলির মধ্যে অন্যতম হল মানসিক চাপ, ঠান্ডা কিংবা গরম আবহাওয়া, অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান, সংক্রমণ, ক্ষত ইত্যাদি। তবে এই রোগ কিন্তু সংক্রামক নয়। বরং এটাকে অটোইমিউন রেসপন্সই বলা ভাল। এর জেরে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার উদ্রেক হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রিম, ওরাল মেডিসিন, এনবিইউভিবি লাইটের মাধ্যমেই এর চিকিৎসা করা হয়। সোরিয়াসিস রোগ জটিল আকার ধারণ করলে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস পর্যন্ত হতে পারে।
তবে সুস্থ জীবনযাপন, নিয়মিত এক্সারসাইজ, ত্বক পরিচর্যা এবং ভাল খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। এর পাশাপাশি বর্তমানে সোরিয়াসিসের ভাল চিকিৎসা বিকল্পও রয়েছে। এর জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কখনওই এক জন সোরিয়াসিস রোগীকে সামাজিক কলঙ্কের মুখে ফেলে দেওয়া উচিত নয়।
সোরিয়াসিসের কারণে ঘুমের সমস্যা? রইল মুক্তির উপায়:
সোরিয়াসিস হল ক্রনিক ইনফ্লেমেটরি ত্বকের রোগ। এর জেরে ত্বকে জ্বালা-চুলকানি হয়, সেই সঙ্গে মাছের আঁশের মতো হয়ে যেতে থাকে ত্বক। রোগের জটিলতা বাড়লে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হল ঘুমের ব্যাঘাত।
সোরিয়াসিসের জেরে চুলকানির অন্যতম কারণগুলি হল শুষ্ক ত্বক, অতিরিক্ত গরম জলে স্নান, খারাপ রাসায়নিকযুক্ত কোনও কিছু মাখা ইত্যাদি।
সোরিয়াসিসের চুলকানি কমানোর উপায়:
নিয়মিত নারকেল তেল ম্যাসাজ করতে হবে, কারণ এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে।
স্নান করার পরেই নরম তোয়ালে দিয়ে হালকা করে ত্বক মুছে নিয়ে ভাল ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম মাখতে হবে।
এমন সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে, যার পিএইচ ৫.৫ (সিন্ডেট বেস)।
ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খেতে হবে।
নরম সুতির পোশাক পরতে হবে। উলের পোশাক এড়িয়ে চলাই ভাল।
আক্রান্ত অংশ বারবার চুলকানো উচিত নয়।
অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যালকোহলিক সলিউশন দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে।
নখ ছোট রাখতে হবে। চুলকানি হলে আঙুলের নরম অংশ দিয়ে চুলকাতে হবে।
নিয়মিত ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে হবে।