আমাদের মানুষের মতো আবেগ নেই, তাই পক্ষপাতিত্বের দোষও নেই, ফলে মানুষের পৃথিবীটা আমরা মানুষের থেকে বেশি ভাল ভাবে চালাতে পারব—প্রায় এমনই অমোঘ উচ্চারণ শোনা গেল তাদের মুখে। তারা মানুষের হাতে তৈরি রোবোট, কৃত্রিম মেধার বলে বলীয়ান।
শুক্রবার জাতিসঙ্ঘ আয়োজিত এক সম্মেলনে উপস্থিত ছিল একদল এআই-চালিত হিউম্যানয়েড রোবট। সেখানেই তারা জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষতায় তারা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে পৃথিবীটাকে। এদিকে সোশ্যাল রোবোটরা আবার জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশের ঘটনার আগে মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে। তারা যে এখনও মানুষের আবেগ পেতে পারেনি সেকথাও স্বীকার করেছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের দু’দিনের ‘এআই ফর গুড গ্লোবাল সামিট’-এ যোগ দিয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত কিছু হিউম্যানয়েড রোবট ছিল। সঙ্গে ছিলেন ৩ হাজার বিশেষজ্ঞ। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর কিছু সমস্যা যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষুধা এবং সামাজিক যত্নের সমাধান করার জন্যই এই সম্মেলন।
এটিই বিশ্বের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন, যেখানে এআই-চালিত হিউম্যানয়েড সোশ্যাল রোবটের প্যানেল যোগ দিয়েছিল।
মানুষ ভুল করে, কিন্তু তারা কি আরও ভাল নেতা তৈরি করতে পারে? এর উত্তরে হ্যানসন রোবোটিক্স-এর সন্তান সোফিয়া স্পষ্ট জানায়,
– ‘আমরা সেরাটা করতে পারি’
সে জানায়, ‘হিউম্যানয়েড রোবটগুলির দক্ষতা এবং কার্যকারিতা মানব নেতাদের চেয়ে বেশি।’
কিন্তু কী করে এই অধিক দক্ষতা তৈরি হচ্ছে?
যন্ত্র মানব স্পষ্টই জানায় তাদের মধ্যে পক্ষপাত বা আবেগ নেই যা কখনও কখনও মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আচ্ছন্ন করে। বরং সেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের দাবি এআই নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করতে পারে। সেখানে মানুষ তার আবেগী বুদ্ধিমত্তা এবং সৃজনশীলতা নিয়ে কাজ করে। ফলে উভয়ে একত্রে কাজ করলেই সেরা সৃষ্টি সম্ভব বলেও ‘মনে’ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
জাতিসংঘের প্রযুক্তি সংস্থা ITU এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। ITU-এর প্রধান ডোরেন বোগদান-মার্টিন প্রতিনিধিদের সতর্ক করে বলেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নের মতো উপস্থিত হতে পারে। লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি খেয়ে নেওয়া হোক বা সামাজিক অস্থিরতা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
এই বিষয়ে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এআই অ্যামেকা বলে, ‘আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত কিন্তু আমাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য এই প্রযুক্তি সম্ভাবনাগুলি যথেষ্ট আকর্ষণীয়।’ কিন্তু সত্যিই কি কৃত্রিম মেধাকে বিশ্বাস করা যায়?
এপ্রশ্নের উত্তরে অ্যামেকা বলে, ‘বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, দেওয়া হয় না… স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিশ্বাস তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
এপ্রশ্নের উত্তরে অ্যামেকা বলে, ‘বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, দেওয়া হয় না… স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিশ্বাস তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে আগামী দিনে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে সচেতন আলোচনা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করে অনেকেই। এমনকী এই বিষয়ে যে কিছু নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন সেকথাও উঠে আসে আলোচনায়। এআই-এর সর্বোৎকৃষ্ট সময় কখন আসবে তা নিয়ে অবশ্য দ্বন্দ্ব রয়েই গেল।