বাবা পেশায় দিনমজুর! ভাবা অ্যাটোমিকে গবেষণা করবেন ছেলে কৌস্তভ

বাবা পেশায় দিনমজুর! ভাবা অ্যাটোমিকে গবেষণা করবেন ছেলে কৌস্তভ

দক্ষিণ দিনাজপুর: দেশের সেরা ভাবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী হওয়ার সুযোগ পেল বালুরঘাটের যুবক কৌস্তভ ঘোষ। ইতিমধ্যেই ভাবা পারমাণবিক গবেষণা সংস্থার (বার্ক) লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কৌস্তভ। বর্তমানে সে প্রশিক্ষণের জন্য পাড়ি দিচ্ছে দক্ষিণ ভারতের ইন্দিরা গান্ধী রিসার্চ সেন্টারে। সেখানে একবছর জুনিয়র নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট পদে প্রশিক্ষণ নেবে কৌস্তভ। এরপরেই নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী দিনে তিনি নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাইকেলের উপর কাজ করবেন।

জানা গিয়েছে, দেশের মধ্যে ২১ জন এই পরীক্ষায় পাশ করেছে। তার মধ্যে একজন বালুরঘাটের কৌস্তভ ঘোষ। বালুরঘাটের মত ছোট শহরের দরিদ্র পরিবারের ২২ বছর বয়সী যুবকের এমন স্বপ্নপূরণে খুশি শহরবাসী। তার এমন প্রতিভার সাফল্য কামনা করেছেন শহরের বিশিষ্টজনেরা।

সূত্রের খবর, কৌস্তভের বাড়ি বালুরঘাট শহরের আখিরা পাড়া এলাকায়৷ বাবা অসিত ঘোষ দিনমজুর ছিল। আগে তপনের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তাঁরা বাস করলেও কৌস্তভের পড়াশোনার জন্য বর্তমানে বালুরঘাটে থাকেন। বর্তমানে কৌস্তভের বাবা শিলিগুড়ির একটি সংস্থার সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করে। তা দিয়েই ছেলের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সংসার চলে।

এ প্রসঙ্গে কৌস্তভ জানায়, ‘ডঃ এপিজে আবদুল কালাম ছোট বেলা থেকেই আমার আদর্শ। তাই ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, আমি বিজ্ঞানী হব। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে এত বড় সুযোগ এসেছে। আজ বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম। ভবিষ্যতে গবেষণা করে দেশের জন্য কিছু করতে চাই।”

কৌস্তভের মা রুমু ঘোষ বলেন, “ছোটবেলা থেকে ওঁর একটাই ইচ্ছে ছিল। অনেক পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। যতটা পেরেছি ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। খুব কষ্ট করে চলতে হয়েছে আমাদের। ছেলের সাফল্যে আজ আমার খুব খুশি হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, কৌস্তভের স্কুলজীবন কেটেছে বালুরঘাটে। ২০১৬ সালে তিনি বালুরঘাট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। এরপর ২০২১ সাল থেকে গুয়াহাটি আইআইটিতে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানেই তিনি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে সে। এরপর মুম্বইয়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় তাকে।

জানা গিয়েছে, মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিল প্রায় ৪০০ জন পরীক্ষার্থী। যার মধ্যে ২১ জনকে বেছে নিয়েছে। চলতি মাসেই সে প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছে। এই একবছর ৫৫ হাজার টাকা মাসে ভাতা হিসেবে পাবেন তিনি। এ বিষয়ে বালুরঘাট শহরের একজন বিশিষ্ট শিক্ষক তথা শিক্ষাবিদ দীপক মণ্ডল বলেন, “এটা বালুরঘাট শহরবাসীর কাছে খুবই ভাল ও খুশির খবর। দেশের অন্যতম সেরা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী হতে চলেছে বালুরঘাটের যুবক। পড়াশোনা ও শিক্ষার দিক দিয়ে এই শহর আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে। আগামীতে কৌস্তভ নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হিসেবে থাকবে।”

(Feed Source: news18.com)