‘আমার কেউ নেই, আমাকে বাঁচান…’! মহিলার ফেসবুক লাইভ ভাইরাল! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

‘আমার কেউ নেই, আমাকে বাঁচান…’! মহিলার ফেসবুক লাইভ ভাইরাল! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

কোন্নগর: হুগলি জেলার কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকার এক মহিলার ফেসবুক লাইভ ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টে দেখা যায়, মহিলা নিজেকে বাঁচানোর জন্য কাতর আর্তি জানাচ্ছেন। আর সেই ফেসবুক লাইভের পরেই শোরগোল পরে যায় এলাকায়। বহু মানুষ শেয়ার করেন ভিডিওটি। ওই মহিলাকে বাঁচানোর আবেদন সোশ্যাল মিডিয়ায় করেন বহু মানুষ।

ফেসবুক লাইভটি করেছেন নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সমাগতা ভট্টাচার্য। সেই লাইভে তিনি মানুষের কাছে কাতর আর্তি জানান তাঁর স্বামী ও ছেলে মিলে তার উপর অত্যাচার করছে ও মারধর করা হয়েছে। নিজের বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। তাঁকে তাঁর স্বামী মারধর করছেন বলেও জানানো হয় লাইভে। এছাড়াও স্বামীর এক বন্ধু তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন বলেও ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়। এরপরেই ভাইরাল হতে শুরু করে পোস্টটি।

২০০৬ সালের ৯ অগাস্ট হাওড়ার বাসিন্দা সমাগতার সঙ্গে বিয়ে হয় নবগ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ ভট্টাচার্যর। তাদের ১৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে, নাম, সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য। স্বামী অভিজিৎ বাবু রাইটার্স এ কর্মরত বলেই জানান ওই মহিলা।

রবিবার সকালে সমাগতা ভট্টাচার্য বলেন, শনিবার ঘটনার সূত্রপাত, স্বামীর থেকে ফোনের রিচার্জের জন্য ১০০ টাকা চান সমাগতা। টাকা চাওয়ায় স্বামী মারধর করেন বলে অভিযোগ। এমনকি সমাগতার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাকে মানসিক ডাক্তার দেখিয়ে কড়া ওষুধ খাইয়ে পাগল করে দেওয়ার চেষ্টা করত তাঁর স্বামী ও পরিবার। তিনি ওষুধ খেতে অস্বীকার করলে তার উপর চলত মারধর ও অত্যাচার।

সমাগতা আরও অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁরই দিদির একটা সম্পর্কের কথা তিনি জানতে পারেন। আর তাঁর দিদির মদতেই নাকি চলত এইসব। তিনি বরংবার তাঁর বাবা মাকে এই বিষয়ে জানান। কিন্তু সব জায়গা থেকেই তাঁকে মানসিক রুগী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চালানো হত বলে অভিযোগ সমাগতার। গতকাল অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে তিনি নিজেকে বাঁচাতে তাঁর স্বামীকে কামড়ে দিয়ে ভয়ে নিজেকে একটি ঘরে বন্দি করে ফেসবুক পোস্ট করে বাঁচানোর আর্জি জানান বলে তাঁর দাবি। এমনকি ১৫ বছরের পুত্র সন্তান বাবার কথা শুনে তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন মহিলা।

গতকালের ফেসবুক লাইভ দেখে সমাগতার এক ফেসবুক বন্ধু হাওড়ার বাসিন্দা সোমা দাস রবিবার সকালেই ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। সমাগতাকে তার বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। পূজা দাস বলেন, আগেও অনেকবার ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ এ সমাগতার সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু কখনও কেউ বুঝতে পারেননি যে উনি কোনওভাবে মানসিক রুগী। সব সময় সুস্থ মনে হয়েছে। কিন্তু এখন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এসে এসব কথা শুনতে পাচ্ছেন যেটা বিশ্বাস করতে একটু অসুবিধা হচ্ছে।

পরে ওই বন্ধুই তাঁকে তাঁর বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে দেন।  সেখান থেকেও লাইভ করেন সমাগতা। তিনি জানান তিনি সুস্থ ও সাবধানে আছেন। লাইভে বন্ধুকে কৃতজ্ঞতাও জানান ওই মহিলা। তিনি জানান বাবা মায়ের বাড়িতে হাওড়ায় পৌঁছে নিজেকে নিরাপদ বোধ করছেন তিনি।

স্ত্রীর এই অভিযোগে স্বামী অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, তাঁর স্ত্রীর মানসিক রোগ বিয়ের আগে থেকেই ছিল। যেটা তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর মানসিক রোগের কথা। তাই ২০১২ সাল থেকে চিকিৎসা শুরু করান।কিন্তু স্ত্রী এমনই একটা মানসিক রোগে আক্রান্ত যেখানে তাঁকে বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু পরক্ষণেই অন্য রূপ ধারণ করেন।স্ত্রীর এসব কাণ্ডে তিনি নিজেও ভেঙে পড়েছেন।

সমাগতার স্বামীর দাবি,  স্ত্রী সমাগতা ওষুধ খেতে অস্বীকার করত সব সময়। আর তাঁর বাবার বাড়িতে জানিয়েই তার চিকিৎসা হত। গতকাল স্ত্রীর মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না। তাঁকে এবং তাঁদের ১৫ বছরের পুত্র সন্তানের দিকে বটি নিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন স্ত্রী। তখন তাঁকে আটকাবার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁর উপর অত্যাচার করা হয়নি। বরং স্ত্রীকে আটকাতে গিয়ে স্ত্রীর কামড় খেতে হয়েছে। বিষয়টি তিনি আগেও অনেকবার পুলিশকে আর পঞ্চায়েতকে জানিয়েছিলেন। তবে আজ রবিবার বন্ধুর সঙ্গে নিজের বাবার বাড়ি হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন সমাগতা।

(Feed Source: news18.com)