এই মাঠেই রেকর্ড গড়েছেন গাওস্কর, কপিল, সচিন, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম যেন ক্রিকেটের কলোসিয়াম

এই মাঠেই রেকর্ড গড়েছেন গাওস্কর, কপিল, সচিন, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম যেন ক্রিকেটের কলোসিয়াম

আমদাবাদ: পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম কোনটি? প্রশ্নের উত্তরে এখন প্রায় সবাই বলে দিতে পারবেন যে, আমদাবাদের (Ahmedabad) নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম (Narendra Modi Cricket Stadium)। আর এই মাঠেই আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের (One Day World Cup 2023) পাঁচটি ম্য়াচ আয়োজিত হতে চলেছে। তার মধ্যে রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মত হাইভোল্টেজ ম্যাচ ও টুর্নামেন্টের ফাইনালও। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে শুরু ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। আর টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচটিও খেলা হবে নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই। মুখোমুখি হতে চলেছে গতবারের ২ ফাইনালিস্ট ইংল্য়ান্ড ও নিউজিল্যান্ড। 

এরপর ১৫ অক্টোবর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই মাঠেই খেলতে নামবে রোহিত শর্মার ভারতীয় দল। যদিও এই ম্যাচের সূচিতে কিছু বদল হতে পারে। স্টেডিয়ামের পরবর্তী ম্যাচগুলো রয়েছে ৪ নভেম্বর ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ১০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম আফগানিস্তান ও ১৯ নভেম্বর ফাইনাল। এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো যে ১০টি স্টেডিয়ামে হতে চলেছে, তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। আজকের পর্বে এই স্টেডিয়ামের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবে এবিপি লাইভ। 

আমদাবাদের সবরমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়। ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে প্রথমবার এই মাঠটি সংস্করণ করা হয়। সেবার তিনটি নতুন পিচ তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও অত্যাধুনিক ফ্লাডলাইট ও কভার স্ট্যান্ড অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল স্টেডিয়ামে। ১৯৮৩ সালে প্রথমবার এই মাঠে টেস্ট ম্য়াচ আয়োজিত হয়। ১৯৮৬-৮৭-তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে এই মাঠেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন সুনীল গাওস্কর। ভারতের কিংবদন্তি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের ৪৩২তম উইকেট নিয়েছিলেন এই মাঠেই। ফিরিয়েছিলেন রিচার্ড হ্যাডলিকে। একাধিক অনুষ্ঠান ছাড়াও এই মাঠ ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় ম্যাচ আয়োজন করেছে। 

এছাড়া দেশের মাটিতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট আয়োজিত হয়েছিল এই মাঠেই ২০২১ সালে। মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-ইংল্য়ান্ড। ১৯৯৯ সালে সচিন তেন্ডুলকর তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের প্রথম দ্বিশতরান হাঁকান এই মাঠেই। ২০১১ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালিন এই মাঠেই বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-তে ১৮ হাজার রান পূরণ করেন মাস্টার ব্লাস্টার।

গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্গত এই স্টেডিয়ামটি আগে মোতেরা স্টেডিয়াম নামেই পরিচিত ছিল। ২০১৫ সালে এই স্টেডিয়ামের ফের সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ঢালাও বদল হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একেবারে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে স্টেডিয়ামটি। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ, স্টেডিয়ামটির নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি ২০০১-২০১৪ পর্যন্ত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও গুজরাত ক্রিকেট অ্য়াসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত।

ভারতের লজ্জার রেকর্ড

এই মাঠেই ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ডেল স্টেইনের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের সামনে ভারত ৭৬ রানে অল আউট হয়ে যায়। টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে ভারত এই একমাত্র ম্যাচেই অল আউট হয়েছে এখনও পর্যন্ত।

বিশ্বকাপ ও নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম (তৎকালীন মোতেরা স্টেডিয়াম)

    • ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। চেতন শর্মা ও কপিল দেবের দুরন্ত বোলিংয়ে জিম্বাবোয়ে ১৯১ রানে অল আউট হয়ে যায়। জবাবে গাওস্কর ও নভজ্যোৎ সিঁধুর দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ভারত এই ম্যাচ জিতে যায়।
    • ১৯৯৬ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচে নিউজিলান্ড ১১ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল।
    • ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় স্পিনারদের দুরন্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৬০ রানের বেশি বোর্ডে তুলতে পারেনি। জবাবে সচিন, গম্ভীর ও যুবরাজ সিংয়ের ব্যাটিংয়ের ওপর নির্ভর করে ভারত ম্য়াচ জিতে যায়। 

স্টেডিয়ামের মোট আসনসংখ্যা: ১,৩২০০০

আবহাওয়া: আসন্ন বিশ্বকাপে অক্টোবর মাসে ২টো ম্যাচ রয়েছে এই মাঠে। সাধারণত আমদবাদের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে ওই সময়ে। তবে নভেম্বরে শীতের আমেজ পরে যাবে। রাতের দিকে শিশিরের দেখা মিলতে পারে। হালকা বৃষ্টিও হতে পারে। তবে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা কম। 

পিচের প্রকৃতি: এই স্টেডিয়ামের পিচ সাধারণত একটু স্লো হয়। প্রথম দিকে এই পিচ বোলারদের সাহায্য করে থাকে। কিন্তু খেলা যত গড়ায় ততই ব্যাটারদেরও রান পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ টেস্ট ম্যাচেই ফল অমিমাংসীত রয়ে গিয়েছে এই মাঠে। গত আইপিএলের ফাইনাল এই মাঠে আয়োজিত হয়েছিল। সেই ম্যাচেও প্রথমে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিএসকে অধিনায়ক এম এস ধোনি। ফাইনালে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। 

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ওয়ান ডে রেকর্ড:

প্রথম ওয়ান ডে – ৫ অক্টোবর, ১৯৮৪

শেষ ওয়ান ডে – ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ম্যাচ – ২৬

সর্বোচ্চ ইনিংস – দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৬৫/২ (বনাম ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী ৯০ রানে)

সর্বনিম্ন ইনিংস – জিম্বাবোয়ে ৮৫ (বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ক্যারিবিয়ানরা ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল)

সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর – সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৪৪ বনাম জিম্বাবোয়ে)

সেরা বোলিং – মিচেল জনসন (জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এই অজি পেসার এক ম্যাচে ৯.২ ওভারে ১৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নেন)

সর্বাধিক রান- ক্রিস গেল (৩১৬)

সর্বাধিক উইকেট- কপিল দেব (১০)

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের ওয়ান ডে রেকর্ড:

ম্যাচ – ১৮

জয় – ১০

পরাজয় – ৮

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচ:

১. ইংল্য়ান্ড বনাম নিউজিল্য়ান্ড, ৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২.০০

২. ভারত বনাম পাকিস্তান, ১৫ অক্টোবর, রবিবার, দুপুর ২.০০ (সূচি বদলাতে পারে)

৩. ইংল্য়ান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ৪ নভেম্বর, শনিবার, দুপুর ২.০০

৪. দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম আফগানিস্তান, ১০ নভেম্বর, শুক্রবার, দুপুর ২.০০

৫. বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯ নভেম্বর, রবিবার, দুপুর ২.০০

(Feed Source: abplive.com)