টোকিও: তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট আকাশের বুক চিরে জাপানের মাটিতে নেমে এসেছিল ‘লিটল বয়’। পরমাণু বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল হিরোশিমা শহর। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১৪০০০০ মানুষের।
সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৭৮ বছর। তবে হিরোশিমার উপর পরমাণু বোমা ফেলার ঘটনার ক্ষত এখনও বিশ্ববাসীর মনে তাজা হয়ে রয়েছে। আর এই কারণে প্রতি বছর ৬ অগাস্ট দিনটিকে হিরোশিমা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আটাত্তর বছর আগের সেই দিনটিতে ঠিক কী ঘটেছিল? শোনা যায়, অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সেই দিনটাও। এর পর সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ হিরোশিমার আকাশ জুড়ে দেখা গিয়েছিল এক অভূতপূর্ব আলোর ঝলক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝলসে গিয়েছিল শহরটা। এর পিছনে দায়ী ছিল পারমাণবিক বোমা। মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল হিরোশিমার মানুষগুলির প্রাণ। এই ধ্বংসযজ্ঞ ইতিহাসের পাতায় রীতিমতো বড়সড় আঁচড় কেটেছে। আজ এই হিরোশিমা পারমাণবিক হামলার বিষয়ে কিছু জরুরি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
১. যেদিন হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট, সেই দিনটা ছিল সোমবার। সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ আছড়ে পড়েছিল পারমাণবিক বোমা।
২. পারমাণবিক বোমার নাম ‘লিটল বয়’।
৩. ‘ইনোলা গে’ নামে আমেরিকান বোয়িং বি-২৯ সুপারফোর্ট্রেস থেকে ফেলা হয়েছিল ওই বোমা। আর এই কর্মকাণ্ডকে বাস্তবরূপ দিয়েছিলেন পল টিবেটস। যিনি জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর মৃত্যু হয়েছিল ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর।
৪. পারমাণবিক বোমা আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়েছিল ৮০ হাজার মানুষের। গুরুতর ভাবে আহত হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।
৫. শোনা যায়, আগে হিরোশিমায় প্রায় ৯০ হাজার বিল্ডিং ছিল। কিন্তু পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর সেই সংখ্যা কমে ২৮ হাজারে নেমে এসেছিল।
৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় বেশ কয়েক মাস ধরেই জাপানের নাগরিকদের বিমান হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। এমনকী, এর জন্য গোটা দেশে প্রায় ৬৩ বিলিয়ন লিফলেটও বিলি করেছিল তারা। তবে জাপানের হিরোশিমায় মারাত্মক ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমার হামলা সম্পর্কে তারা কখনওই সতর্কতা জারি করেনি।
৭. প্রথমে এআইওআই ব্রিজের কাছে পারমাণবিক বোমাটি ফেলার কথা ছিল। কিন্তু হাওয়ার দাপটে সেই নিশানা ফস্কে গিয়েছিল। ফলে তার পরিবর্তে শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের কাছে বোমাটি ফেটেছিল।
৮. প্রায় ১৬ ± ২ কিলোটন টিএনটি-র সমপরিমাণ শক্তি নির্গত করেছিল লিটল বয়। তবে উইকিপিডিয়া রিপোর্ট বলছে, এটাকে খুবই কম বলে গণ্য করা হয়। এর মাত্র ১.৭ শতাংশ মেটেরিয়াল ফিশনিং নির্গত হয়েছিল।
৯. পারমাণবিক বোমাটির গোটা ধ্বংসলীলার ব্যাসার্ধ ছিল ১.৬ কিলোমিটার। আর আগুন গ্রাস করেছিল প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা।
১০. যে বিমানটি থেকে বোমাটি ফেলা হয়েছিল, সেই ইনোলা গে ওই এলাকায় ২ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করেছিল। বোমাটি ফাটার সময় তা মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।