রকি অউর রানি বাংলায় হলে চলত না, আমরা হিপোক্রিট: রাজ

রকি অউর রানি বাংলায় হলে চলত না, আমরা হিপোক্রিট: রাজ

রাজ চক্রবর্তীর হাত ধরে যখম ‘প্রলয়’ এসেছিল, তখন ২০১৩ সাল। ছবির হাত ধরে বক্স অফিসেও ঝড় উঠেছিল। তবে এবার রাজের পছন্দ OTT। Zee5-এর হাত ধরে রাজ তাই আনছেন ‘আবার প্রলয়’। আরও একবার দর্শক ফিরছেন ‘দাবাং’ পুলিশ আধিকারিক অনিমেষ দত্ত এবং ‘বিনোদবিহারী’র চরিত্রটি। ‘আবার প্রলয়’ সহ আরও নানান টুকিটাকি বিষয় নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।

ওয়েব সিরিজের জন্য ‘আবার প্রলয়’-কে কেন ফিরিয়ে আনার কথা ভাবলেন?

রাজ: আমি ‘প্রলয়’ নিয়ে টেলিভিশনেও একটা শো করেছিলাম ২০১১তে, যেটা ৩০ এপিসোডের ছিল। সেটা সফল হয়েছিল। তারপরই ২০১৩-তে ‘প্রলয়’ ছবিটা আমি বানাই। সেটা সকলের ভালো লাগে। পরে গত ১০ বছর ধরে সকলেই জিগ্গেস করছিলেন প্রলয় কবে আসবে? যখন আবার প্রলয় নিয়ে ভাবা শুরু করলাম, তখন ইতিমধ্যেই OTT-এসে গিয়েছে। আমি ওয়েবেও কাজ করতে চাইছিলাম, যেহেতু আমি সব মাধ্যমেই মোটামুটি কাজ করেছি। তখন ভাবলাম প্রলয় এমন একটা সাবজেক্ট, যেটা নিয়ে অনেক কিছু দেখানোর আছে। তাই ‘আবার প্রলয়’ রূপে ‘প্রলয়’ এবার OTT-তে আসছে।

পরিচালক হিসাবে আপনার যাত্রা তো টেলিভিশনের হাত ধরেই শুরু হয়…

রাজ: হ্যাঁ, আমি টেলিভিশনের হাত ধরেই কেরিয়ার শুরু করি। প্রথমে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করতাম, পরে নিজেও পরিচালক হিসাবে ১৭টা টেলিফিল্ম করেছি। মীরাক্কেল আমিই শুরু করেছিলাম, ডান্স বাংলা ডান্স আমারই করা। পরে আরও অনেক শো করেছি। তারপর ২০০৮-এ প্রথম ছবি করি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। (হাসি)

আপনি তো অভিনেতা হতে এসেছিলেন?

রাজ: এক্কেবারেই তাই। থিয়েটার করতাম। পরিচালনায় একপ্রকার হঠাৎ করেই আসি। ঈশ্বরই হয়ত ঠেলে পাঠিয়েছেন। ভেবেছিলেন, এটাই তোমার জায়গা। (হাসি)

‘আবার প্রলয়’-এ ‘প্রলয়’ থেকে শুধু অনিমেষ দত্ত আর বিনোদবিহারী দত্ত-ই রয়েছেন?

রাজ: হ্যাঁ, অনিমেষ দত্তই এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র, ওঁকেই ফিরিয়ে আনার দাবি ছিল, তাই আনা, আর বিনোদবিহারী দত্তও রয়েছেন। বাকি সবই নতুন। গল্পও নতুন, প্রেক্ষাপটও নতুন। আগের গল্পের সঙ্গে এই গল্পের কোনও মিলও নেই। এই গল্পটা নারী প্রাচারকে ঘিরে।

সুন্দরবনের মতো জায়গায় ‘আবার প্রলয়’-এর শ্যুটিং করতে গিয়ে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল?

রাজ: যখন আমরা সুন্দরবনে শ্যুটিং করছিলাম, সেটা ছিল জানুয়ারি মাস। তবে অন্যান্য জায়গার তুলনায় সুন্দরবনে ঠাণ্ডাটা একটু কম-ই থাকে, যেহেতু কোস্টাল (উপকূলবর্তী এলাকা) এলাকা। ওখানে গিয়ে বড় কোনও সমস্যায় পড়িনি। যেকোনও জায়গায় বড় ইউনিট থাকলে একটু তো সমস্যা হয়-ই। একটু অসুবিধা যেটা হয়েছে, জোয়ার ভাটার সময় জলের মধ্যে কিছু দৃশ্যের শ্যুট করাটা কিছুটা কঠিন ছিল। আর সন্ধের পর আমরা বিশেষ শ্য়ুটিং করিনি, কারণ, যেহেতু জঙ্গল ঘেরে এলাকা। মোটামুটি কী ধরনের অসুবিধায় পড়তে হতে পারে জানতাম, সেই মতো প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিলাম।

শ্য়ুটিং চলাকালীন নৌকার মধ্যেই থাকতে হয়েছিল নাকি?

রাজ: নাহ, ছিলা হোটেলেই, তবে শ্যুটিংটা নৌকার মাধ্যমেই হয়েছে। কারণ নৌকা-ই একমাত্র চলাচলের জন্য যান ছিল।

অনেকে বলছেন ‘আবার প্রলয়’-এ ঋত্বিক চক্রবর্তীর লুকটা নাকি ‘সেক্রেড গেমস’-এর পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো…

রাজ: আমার আবার পঙ্কজ ত্রিপাঠীর লুকটা লেগেছিল সাই বাবার মতো। (হেসে)। কে কী বলছেন, বাদ দিন। আপনার কেমন লেগেছে? আমার মনে হয় পুরো সিরিজটা তো এবার রিলিজ করছে, দেখার পরও যদি কারোর কোনও প্রশ্ন থাকে, তখন না হয় আমি এর জবাব দেব। তবে যিনি প্রশ্ন তুলবেন, তাঁকেও আমায় যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। আমি তখন উত্তর দিতে রাজি। আসলে কোনও কিছুর সঙ্গেই মিল নেই। কিছু লোকজন আছেন, যাঁরা এটা ভাবছেন।

অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আবার প্রলয়’-এর প্রসঙ্গ টেনে আপনাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে পোস্ট করেছিলেন, কী বলবেন?

রাজ: কেউ যদি আমাকে নিয়ে কোনও ব্যঙ্গ করে, তাতে আমার কিছু করার নেই, বা বলার নেই। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, মানসিকতার উপর নির্ভর করে। এটা তিনিই বলতে পারবেন। কারণ, আমার রুচিতে বাঁধে কারোর সম্পর্কে খারাপ কথা বলার ক্ষেত্রে। ভালো কথা বলতে না পারলেও, আমি কাউকে খারাপ কথা বলি না। কাজ করতে গেলে ভালো-খারাপ দুটোই শুনতে হবে। এটাই তো জীবনের অংশ। খারাপ কথা শুনলে যদি মন খারাপ হয়, বা রেগে যাই, তাহলেই সমস্যা। কারোর বলতে ইচ্ছে করেছে বলেছে। আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। ওর বলাতে আমার কোনও ক্ষতি হলে, তখন না হয় বলতাম, আমার যখন ক্ষতি হয়নি, বা গায়ে লাগেনি, তখন আমি কিছুই বলব না। আমাদের দেশে তো রবীন্দ্রনাথ, থেকে সচিন তেণ্ডুলকর, কাউকেই লোকজন খারাপ কথা বলতে ছাড়েন না। সেখানে আমি তো নিমিত্ত মাত্র। আর যাঁর নাম বলছেন, সে আমাকে ছাড়াও আরও অনেককে নিয়েই খারাপ কথা বলেন, গালি গালাজ করেন। একজন অভিনেতা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সেটাই কামনা করব। আসলে প্রশংসা থাকলে সমালোচনাও থাকবে। প্রশংসা পেয়ে নাচবেন, আর সমালোচনা পেয়ে দুঃখ পেলে চলবে নাকি!

ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আছেন, যাঁরা আবার রাজ চক্রবর্তীর প্রশংসাই করেন…

রাজ: বেশিরভাগ লোকজন প্রশংসাই করেন, দু’একজন বাদে। এমন কোনও খারাপ কাজ আসলে করিনি… (মজা করে)। কয়েকজনের হয়ত আমার কোনওকিছু খারাপ লাগতে পারে, বা ঈর্ষা হতে পারে।

‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ বাংলা সিনেমায় একটা মাইলস্টোন মনে করা হয়। তারপরেও আপনি বহু হিট ছবি দিয়েছেন, তবে অনেকে বলেন ওটার মতো আর হয়নি…

রাজ: রোজই চাই একটা মাইলস্টোন ছবি বানাতে, আরও ভালো কিছু করতে। তবে সব সময় সবকিছু একইভাবে ওয়ার্ক করে না, মাইলস্টোন আসলে কখনও কখনও হয়ে যায়। চিরদিনই-র পরও চ্যালেঞ্জ, বোঝে না সে বোঝে না, প্রেম আমার হয়েছে, আরও অন্যান্যগুলো, কোনওটা হিট, কোনওটা ব্লকবাস্টার, ফ্লপ সবই আছে। এগুলো কাজের অঙ্গ, দেখা যাক ভবিষ্যতে আর কী করতে পারি…। চেষ্টায় রয়েছি।

শুধু আপনি নন, বাংলা সিনেমাতেই বহুিন ধরে ‘ব্লকবাস্টার’ কিছু নেই…

রাজ: আসলে ব্লকবাস্টার হতে গেলে কমার্শিয়াল (বাণিজ্যিত) ছবিই লাগে। অথচ এখানে অনেকেই কমার্শিয়াল ছবিকে ছোট করেন, যাঁরা এই ছবি বানান, তাঁদেরকেও ছোট করেন। তাই অনেকেই অন্যটাইপের, আরবান ছবি বানাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাই আর ব্লকবাস্টার ছবি নেই, হয়ত হিট হচ্ছে। ব্লকবাস্টার ছবি হতে গেলে Mass film চাই। এখন বেশিরভাগই তো শহুরে ছবি। যখন ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ মুক্তি পেয়েছিল, তখন ২৫০ হলে ছবিটা চলেছিল, আর এখন তো ৪০-৫০ হলে ছবি চলছে। তাহলে কী করে হবে? লোকে হিন্দিতে রকি অউর রানি দেখে লাফাবে, অথচ বাংলায় এমন ছবি হলে লোক বলবে, এবাবা এ কী ছবি! আমরা সবাই আসলে hypocrite (ভণ্ড)।

বাংলার বাইরে অন্য ভাষায় কাজ করতে চাইবেন?

রাজ: সময় তো এখন অনেক আছে, দেখাই যাক না…।

‘খেলা হবে’ গানটি কি বাদ গিয়েছে?

রাজ: নাহ, গান নিয় শুধু ‘খেলা হবে’ শব্দ বদলে ‘মেনকা’ হয়েছে।

সুন্দরবনে গিয়ে নাকি লোকজন আপনাকে ‘শুভশ্রীর বর’ বলেই চিনেছেন?

রাজ: আমাকে শুভশ্রীর বর হিসাবে চেনে, এটা আমার ভালোলাগে তো। আমাকে যখন কেউ বউ-এর নাম নিয়ে চেনে আমার বেশ লাগে, আমার কাছে এটা গর্বের। সুন্দরবনের মানুষজন আসলে খুব সরল। তাই ওখানে যখন গেলাম ওঁরা অনেকে বললেন, চেনা চেনা লাগছে। তখন আমি বললাম, আমার নাম রাজ চক্রবর্তী। তখন বলল, ‘তুমি তো শুভশ্রীর বর’। আমাকে কেউ এমন বললে ভালোই লাগে। (হাসি) আনার যে কোনও কাজে বউ-এর নাম আগে থাকে।

শুভশ্রী বলেন, রাজের মতো স্বামী হয় না…

রাজ: আমিও তো বলি শুভশ্রীর মতো বউ হয় না। শুভশ্রী আমার সবক্ষেত্রে, সব প্রয়োজনে পাশে থাকে, আমার হাত ধরে। ও আমার সবথেকে ভালো বন্ধু। ও আমার সবটা বোঝে, কিছু বোঝাতে হয় না। আমার শুভশ্রী অন্তর প্রাণ। সেজন্যই তো আমরা মেড ফর ইচ আদার। (হাসি)

আপনাদের এই ‘সুখী দম্পতি’ জুটি অনেকের আইডল, কিছু বার্তা দিতে চাইবেন?

রাজ: আমার কাউকে কিছু বার্তা দেওয়ার নেই। তবে এটুকু বলতে চাইব, মহিলাদের সম্মান দিন। মহিলাদের যাঁরা অসম্মান করেন, তাঁদের আমিও অপছন্দ করি। শুধু মহিলা নয়, শিশু, বয়স্ক লোকজন, পশু-পাখি সকলকেই সুন্দর চোখে দেখতে চাই। যাঁরা সম্মান করেন, তাঁরা দুটো পয়সা কম রোজগার করলেও মানুষ হিসাবে অনেক বড় বলে মনে করি। আমি এখনও কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার কথা ভাবি, কারণ, পরিবার গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িকে মা, বউ, বাচ্চা আছে, আরও একজন আসবে।

(সবশেষে মজা করে) রাজনীতি নিয়ে আজ কিন্তু আর প্রশ্ন করবেন না, ওটা অন্যদিন হবে…সব প্রশ্ন একদিনে করলে হয়! (হাসি)

(Feed Source: hindustantimes.com)