৮ দশক পরে নাৎসি-অপরাধের ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছেন নিহতের বংশধর, হইচই ইতালিতে

৮ দশক পরে নাৎসি-অপরাধের ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছেন নিহতের বংশধর, হইচই ইতালিতে

কলকাতা: বিচারে বিলম্ব নতুন কথা নয়। তা বলে ৮ দশক আগেকার অপরাধের ক্ষতিপূরণ? বিশ্বাস না হলেও এমনই হতে চলেছে ইতালির ফরনেলিতে। সেখানকার বাসিন্দা, মাওরো পেত্রার্কা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার পেতে চলেছেন। তাও, ১৯৪৩ সালের একটি ঘটনার জন্য। কী সেই ঘটনা? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নাৎসি নির্যাতন ও পরিবারের ৬ সদস্যের মৃত্য়ু, অল্প কথায় এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পেত্রার্কার পরিবারের সেই অতীত।

কী ঘটেছিল?
১৯৪৩ সালের অক্টোবর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জোটসঙ্গী ইতালিরই ছ’জন সাধারণ নাগরিককে ফাঁসি দেয় জার্মান নাৎসিবাহিনী। তাঁদের অপরাধ? খাবারের খোঁজে হন্যে হয়ে থাকা ওই ছ’জন এক জার্মান সেনাকে খুন করেছিল। সেই অপরাধে ফাঁসি হয় ছ’জনের। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৫২ বছরের দোমিনিকো লান্সেলোত্তা। তাঁরই প্রপৌত্র মাওরো পেত্রার্কা। রেকর্ড বলছে, ৫ মেয়ে ও ১ পুত্রসন্তানের বাবা, লান্সেলোত্তার গোটা পরিবারের মাত্র ১ জনই বেঁচে রয়েছেন। তাঁদেরই বংশধর পেত্রার্কা, এবার সেই অপরাধের শাস্তি বাবদ  ১ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার পেতে চলেছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জার্মানি নয়, এই ক্ষতিপূরণ তাঁকে দেবে ইতালির সরকার।

কেন এমন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যাবতীয় অপরাধের জন্য এখনও বার্লিনকে দায়ী করা যায় কিনা, এই নিয়ে হালে একটি মামলা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে হেরে গিয়েছে ইতালি। যদিও ইতালির ইহুদি সংগঠনগুলির মতে, ইতিহাসগত ভাবে এই ধরনের সমস্ত অপরাধের দায়স্বীকার করে বার্লিনেরই এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। অন্য দিকে, আক্রান্ত পরিবারগুলির উত্তরাধিকারীদের আর এক অংশ মনে করে, রোম গোটা বিষয়টি থেকে সুবিধাজনক ভাবে হাত-পা ঝেড়ে নিতে চাইছে। না হলে ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে ইতালির রাজকোষে আঁচ পড়তে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, অন্তত ২২ হাজার ইতালীয় নাৎসি যুদ্ধাপরাধের শিকার হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে সেই ইহুদিরাও ছিলেন যাঁদের ‘ডেথ ক্যাম্প’-এ পাঠানো হয়। এরকমই বহু অপরাধের একটি এই ঘটনা। জানা যায়, পেত্রার্কার পরিবারের ছ’জনকে যখন ‘শাস্তি’ হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছিল, তখন গ্রামাফোনে জোরে গান শুনছিল নাৎসি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই ঘটনার মাসখানেক আগেই মিত্রশক্তির সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সই করেছে ইতালি। নাৎসিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে তারা। পাল্টা হিসেবে ইতালি দখলে নেমে পড়ে নাৎসিরা। তার পরেই ফরনেলির ওই ঘটনা।
তবে ফরনেলির ঘটনা নিয়ে ২০১৫ সালে যে মামলা দায়ের হয়, তাতে জার্মানির পাশে দাঁড়িয়েছিল ইতালি। পেত্রার্কার কথায়, ‘দেখে মনে হচ্ছিল, সেই যুদ্ধের সময়ের জোট ফিরে এসেছে।’ দু’পক্ষই  মামলার শুনানি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়। অবশেষে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, ২০২২ সালের এপ্রিলে একটি তহবিলের কথা ঘোষণা করেন। সেখান থেকেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আপাতত, সেটি থেকেই ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছেন পেত্রার্কা।

(Feed Source: abplive.com)