গণপতিকে তুষ্ট করতে প্রসাদের পাতে রাখুন এই সব মিষ্টি! কী ভাবে বানাবেন, রইল রেসিপি

গণপতিকে তুষ্ট করতে প্রসাদের পাতে রাখুন এই সব মিষ্টি! কী ভাবে বানাবেন, রইল রেসিপি

গণপতির আবাহনে মেতে উঠেছে গোটা দেশ। মহারাষ্ট্রের অন্যতম বড় উৎসব হলেও দেশের নানা প্রান্তে গৌরীপুত্রের আরাধনা হয়ে থাকে। মন-প্রাণ দিয়ে বিঘ্নহর্তা গণেশের পুজো করলে তিনি ভক্তের দুঃখ-কষ্ট ঘুচিয়ে দেবেন। আর তাঁকে তুষ্ট করার জন্য গণেশ চতুর্থীর দিন অবশ্যই তাঁর প্রসাদের ভোগে থাকতে হবে মোদক আর লাড্ডু। এই মোদক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ঈশ্বরকে তুষ্ট করার জন্য যে কোনও রকম মোদকই নিবেদন করা যায়। দেখে নেওয়া যাক, মোদক ছাড়াও ভগবান গণেশের প্রিয় মিষ্টি কী কী!

মোদকের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের এক বিশেষ মিষ্টিও ভালবাসেন গৌরীনন্দন। আর সেটা হল পুরন পোলি। গালভরা নাম হলেও আদতে এটা হল মেওয়া ঠাসা মিষ্টি পরোটা। যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। নিচে রইল বানানোর পদ্ধতি।

উপকরণ:

ময়দা – ২ কাপ (২৫০ গ্রাম)

ছোলার ডাল- ১/২ কাপ (১০০ গ্রাম)

লবণ- পরিমাণমতো

ঘি- ৪ থেকে ৫ টেবিল-চামচ

চিনি – ১/৩ কাপ (৬৫ গ্রাম)

গুড় – ১/৩ কাপ (৬৫ গ্রাম)

এলাচের গুঁড়ো – ১/২ চা-চামচ

প্রণালী

প্রথমে ছোলার ডাল ২ ঘণ্টা মতো ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পর জল ছেঁকে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে ময়দা নিয়ে তাতে ২ টেবিল-চামচ ঘি ঘি এবং লবণ যোগ করে ভাল ভাবে মেশাতে হবে। এর পরে ঈষদুষ্ণ গরম জল ব্যবহার করে ময়দা মাখতে হবে। এরপরে ২০ মিনিটের জন্য মাখা ময়দাকে বিশ্রাম দিতে হবে। এবার ভেজানো ডাল কুকারে নিয়ে আধ কাপ জল দিয়ে তা ওভেনে বসিয়ে দিতে হবে। একটা হুইসল বাজলে আঁচ নিভিয়ে দিতে হবে। এরপর সেদ্ধ ডাল থেকে জল ছেঁকে নিতে হবে। এবার ওভেনে একটি প্যান বসিয়ে তাতে সেদ্ধ ডালটা দিয়ে তা ভাজতে হবে। উপর থেকে গুড় এবং চিনি দিয়ে একটানা নেড়ে যেতে হবে। মিশ্রণটা একটু ঘন হয়ে এলেই তাতে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে রাখতে হবে। এবার ময়দা থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে তাতে ডালের পুর ভরে বেলে নিয়ে হবে। একটি প্যান গরম করে তাকে ঘি দিয়ে বেলে নেওয়া পরোটা অল্প আঁচে ভেজে নিতে হবে।

মতিচুর লাড্ডু:

মতিচুর বা ছোট বুঁদির লাড্ডুও ভগবান গণেশের ভোগে নিবেদন করা হয়। এই মিষ্টিও তাঁর অত্যন্ত পছন্দের তালিকায় রয়েছে। ঘরে বসেই বানিয়ে ফেলা যাবে মতিচুর লাড্ডু। নিচে রইল তৈরি করার প্রক্রিয়া।

উপকরণ

ব্যাটারের জন্য

বেসন – ২০০ গ্রাম (২ কাপ)

জল – ৪০০ মিমি

লাল খাদ্য রঙ – ২ চিমটি

হলুদ খাদ্য রঙ – ২ চিমটি

ঘি

সিরাপের জন্য:

চিনি -১০০ গ্রাম (১ কাপ)

জল – ৫০ মিমি

লাল খাদ্য রঙ – ২ চিমটি

হলুদ খাদ্য রঙ – ২ চিমটি

গোলাপ জল – ৫-৮ ফোঁটা

মাস্ক মেলনের বীজ: ১ চা-চামচ

সবুজ এলাচ বীজ – ১০-১২টি

পেস্তা – ১ চা-চামচ

কাজু – ৪টি

প্রণালী

একটি বড় পাত্রে বেসন আর সামান্য জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। ওই মিশ্রণ দিয়ে একটি ব্যাটার বানিয়ে তারপর তাতে লাল এবং হলুদ রঙ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি প্যানটি ওভেনে চাপিয়ে তাতে ঘি যোগ করতে হবে। তা গরম হয়ে এলে একটি ঝাঁঝরি নিয়ে প্যানের উপর থেকে ওই ঝাঁঝরির মাধ্যমে ব্যাটার গরম ঘিয়ে ছাড়তে হবে। এটা তৈরি হতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ সেকেন্ড লাগে। তৈরি হয়ে গেলে ঘি থেকে ছেঁকে বুঁদি তুলে নিতে হবে। এর পর আর একটি প্যানে চিনি দিয়ে তাতে ৫০ গ্রাম জল যোগ করে ফোটাতে হবে। ফুটতে শুরু করলে লাল আর হলুদ রঙ মিশিয়ে গোলাপ জল যোগ করতে হবে। মাঝারি আঁচে ২-৩ মিনিটের জন্য রান্না করে তাতে বুঁদি যোগ করে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার কুচিয়ে রাখা পেস্তা, কাজুবাদাম, এলাচ ও মাস্ক মেলনের বীজ যোগ করতে হবে ওই মিশ্রণে। ২-৩ মিনিট মতো রান্না করতে হবে। এরপর আঁচ নিভিয়ে ১০ মিনিট ঠান্ডা করতে হবে। মিশ্রণ ঠান্ডা হলে অল্প অল্প করে হাতে নিয়ে লাড্ডুর আকার দিয়ে আলতো চাপ দিতে হবে। ব্যস, লাড্ডু প্রস্তুত।

সাতোরি:

সাতোরিও ভগবান গণপতির পছন্দের মিষ্টি। বিশেষত মহারাষ্ট্রে গণেশ উৎসবের জন্যই তা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। এটি দেখতে অনেকটা পাতলা পরোটা কিংবা পুরির মতো।

শ্রীখণ্ড:

ভগবান গণেশের অন্যতম প্রিয় নৈবেদ্য। টাটকা দই দিয়ে এটা বাড়িতেই প্রস্তুত করা যেতে পারে। রইল বানানোর প্রক্রিয়া।

উপকরণ

ঘন দই – ২ কাপ

পাকা আম- ২টি

চিনি – ১/২ কাপ

এলাচ গুঁড়ো – ১/২ চা-চামচ

কাজু (সূক্ষ্মভাবে কাটা) – ৪-৫টি

কিসমিস – ১০-১২টি

প্রণালী

প্রথমে আম ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কেটে নিতে হবে। তারপর আমের টুকরোগুলোকে ব্লেন্ডারে পিষে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবার একটি মিক্সিং বাটিতে ২ কাপ দই নিয়ে তা ভাল করে ফেটিয়ে তাতে আমের মিশ্রণ দিতে হবে। এরপর স্বাদ অনুযায়ী চিনি, এলাচ গুঁড়ো, কাজু ও কিশমিশ দিয়ে ভাল করে মেশাতে হবে। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করার জন্য ফ্রিজে রাখতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলেই তৈরি আমের শ্রীখন্ড।

রাভা পোঙ্গল:

দক্ষিণে গণেশ চতুর্থীর ভোগে নিবেদন করা হয় রাভা পোঙ্গল বা রাভা কেশরী। রইল এটি বানানোর প্রক্রিয়া।

উপকরণ

ঘি – ১/৪ কাপ

কাজু – ১০টি

কিশমিশ – ১ টেবিল-চামচ

বোম্বাই রাভা/ মিহি সুজি – আধ কাপ

জল – ১ কাপ

চিনি – ৩/৪ কাপ

জাফরান – ২ টেবিল-চামচ

এলাচ গুঁড়ো – ১/৪ চা-চামচ

প্রণালী

প্রথমে প্যান গরম করে তাতে ২ টেবিল-চামচ ঘি দিতে হবে। গরম হলে কাজু-কিশমিশ ১ মিনিট মতো ভেজে আলাদা করে রেখে দিতে হবে। এরপর ওই ঘিয়ের মধ্যে সুজি যোগ করে একটানা ভেজে যেতে হবে। সুজির রঙ সোনালি হলে আঁচ নিভিয়ে দিতে হবে। এবার অন্য একটি প্যান গ্যাসে চাপিয়ে জল দিতে হবে। তা ফুটতে শুরু করলে তাতে সুজি যোগ করে নাড়তে হবে। যতক্ষণ না সুজি সমস্ত জল শুষে নেয়, ততক্ষণ নেড়ে যেতে হবে। এবার স্বাদ অনুযায়ী চিনি মিশিয়ে নিতে হবে। চিনি গলে গেলে ভেজানো জাফরান দিতে হবে। আবার ঘি দিয়ে একটানা নাড়তে হবে। এবার প্যানটি ঢেকে দিয়ে সুজিটা সেদ্ধ করে নিতে হবে। ২-৪ মিনিট পরে ড্রাই ফ্রুটস যোগ করে মিশিয়ে নিতে হবে।

গুড় দিয়ে তৈরি প্রসাদ:

ভগবান গণেশের পছন্দের তালিকায় গুড়ের তৈরি প্রসাদও রয়েছে। খুবই সহজে ঘরেই বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে এটি।

উপকরণ

বেসন – ১ কাপ

ঘি – আধ কাপ

গুড় -১ কাপ

কুচোনো বাদাম, পেস্তা, কাজু – ১ টেবিল চামচ করে

নারকেলের কোরা- ২ টেবিল চামচ

সবুজ এলাচ গুঁড়ো- আধ চা চামচ

পেস্তা – ৪-৫টি

প্রণালী

প্যানে ঘি নিয়ে গরম করে তাতে বেসন দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। বাদামি হওয়া পর্যন্ত নেড়ে যেতে হবে। এবার অন্য একটি প্যানে জল গরম করে তা বেসনের মধ্যে অল্প অল্প করে ঢালতে হবে। আর মিশ্রণটি একটানা নাড়াচাড়া করে যেতে হবে। এরপর গুড় মিশিয়ে আবার নাড়াচাড়া করতে হবে। সব শেষে কুচোনো ড্রাই ফ্রুটস আর নারকোল কোরা যোগ করে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।

মিষ্টি চালের পুডিং:

মিষ্টি চালের পুডিংও সুস্বাদু। আর ভগবান গণেশেরও তা অত্যন্ত প্রিয়। রইল বানানোর সহজ পদ্ধতি।

উপকরণ

দুধ – ১ লিটার

চাল – ১ টেবিল-চামচ

চিনি – ১০০ গ্রাম

কিশমিশ – ১ টেবিল-চামচ

কুচোনো বাদাম, কাজু, পেস্তা – ২ টেবিল-চামচ

জাফরান কুচি – ১২-১৫টি

এলাচ গুঁড়ো – ১ চা-চামচ

প্রণালী

প্রথমে চাল ধুয়ে ৩ কাপ জলে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার একটি ছোট পাত্রে ২ চামচ দুধে জাফরান ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। একটি প্যানে কম আঁচে দুধ ফোটানো শুরু করতে হবে। ঘন হয়ে এলে তাতে চাল আর চিনি দিয়ে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। এবার তাতে এলাচ গুঁড়ো এবং জাফরান মিশিয়ে আরও ৫ মিনিট নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর অন্য একটি প্যানে ঘি গরম করে তাতে কুচোনো ড্রাই ফ্রুটস হালকা ভেজে তা দুধ আর চালের মিশ্রণে যোগ করতে হবে।

কোকোনাট রাইস বা নারালি ভাত

দক্ষিণ ভারত এবং মহারাষ্ট্রে ভগবান গণেশের ভোগে নিবেদন করা হয় এটি। দেখে নেওয়া যাক রেসিপি।

উপকরণ

বাসমতী চাল – ১/২ কাপ

জাফরান – ৬-৮টি

ঘি- ১ টেবিল-চামচ

কাজুবাদাম – ১০টি

কিশমিশ – ৩ টেবিল-চামচ

গুড় – ১/২ কাপ

নারকেল (কোরানো) – ১/২ কাপ

ছোট এলাচ – ২টি

লবঙ্গ – ৩ টুকরো

এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা-চামচ

লবণ – স্বাদমতো

প্রণালী

এটি তৈরির জন্য প্রথমে চাল ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। মাঝারি আঁচে একটি প্যানে ২ চামচ ঘি দিয়ে গরম করতে হবে। এরপর তাতে চাল যোগ করে ১ মিনিট ভাজতে হবে। এবার ১ কাপ জল, জাফরান এবং লবণ যোগ করে চাল সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। অন্য প্যানে কুচোনো ড্রাই ফ্রুটস ভেজে নিয়ে তাতে গুড় আর নারকেল দিয়ে রান্না করতে হবে। গুড় গলে গেলে তাতে রান্না হওয়া ভাতটা যোগ করতে হবে। ৫ মিনিট নাড়াচাড়া করে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে আঁচ নিভিয়ে দিলেই তৈরি কোকোনাট রাইস।

বড়া

মিষ্টি ছাড়াও নোনতা প্রসাদও ভগবান গণপতির বড়ই প্রিয়। তাই দক্ষিণ ভারতীয় বড়াও থাকে গণপতি উৎসবের ভোগে।

(Feed Source: news18.com)