কলকাতা: ইন্টারনেট দুনিয়ায় খুবই প্রচলিত একটি শব্দবন্ধ হল ‘ডার্ক ওয়েব’। নাম শুনলে মনে হতেই পারে এর সঙ্গে অন্ধকার জগতের যোগ রয়েছে। তবে এটা সর্বাংশে সত্য নয়। এর ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়।
আসলে ‘ডার্ক ওয়েব’ হল এনক্রিপ্টেড অনলাইন কনটেন্ট, যা প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনের আওতায় আসে না। নির্দিষ্ট কিছু ব্রাউজার (যেমন TOR ব্রাউজার)-এ এটি ব্যবহার করা যায়। প্রথাগত ওয়েবসাইটগুলির তুলনায় ডার্ক ওয়েব-এ গোপনীয়তা অনেক বেশি। এখানে নামও ব্যবহার করা হয় না।
কী এই ডার্ক ওয়েব—
Google-এর মতো সাধারণ প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে এই ওয়েবে পৌঁছনো সম্ভব নয়। বেশ কিছু গোপনীয় ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে এটি গঠিত।
ডার্ক ওয়েব এমন তথ্য ব্যবহার করে যা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনগুলিতে পাওয়া যায় না, যেমন ব্যক্তিগত ই-মেল, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাঙ্কিং, ব্যক্তিগত বা পেশাদার ডেটাবেস। একে ‘ডার্ক নেট’ও বলা হয়।
২০০০ সালের পর ‘ডার্ক ওয়েব’-এর আবির্ভাব। প্রাথমিক ভাবে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা এখনও রয়েছে।
কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি-র উত্থান ডার্ক ওয়েবের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। সেটা হয়েছে অনেকাংশেই সাইবার অপরাধীদের জন্য। বিটকয়েন বা মোনেরোর মতো ডিজিটাল মুদ্রায় বেনামে কেনা-বেচা করা যায় ডার্ক ওয়েবে।
ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে বেআইনি কার্যকলাপ বাড়ছে তাই তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়েছে। সম্প্রতি জি ২০ এবং ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)- ক্রিপ্টোকারেন্সি সংস্থাগুলির কাছে অনলাইনে লেনদেনে ক্রেতা ও বিক্রেতার তথ্য দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
ডার্ক ওয়েবের সুবিধা—
গোপনীয়তা এবং মত প্রকাশের নিশ্চিত স্বাধীনতা।
অপরাধী সংস্থাকে সনাক্ত করা সহজ।
অসুবিধা—
অপরাধমূলক কার্যকলাপ সহজে করা যায়।
অন্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যবহারের নিয়ম—
ডার্ক ওয়েব ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা VPN ব্যবহার করে TOR-এর মতো বেনামী ব্রাউজার ইনস্টল করে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করা যায়। VPN মূলত পাবলিক নেটওয়ার্কে গোপনীয়তা দেয়। তবে TOR ব্যবহারের আগে নিজের ডিভাইসে সিকিওরিটি সফটওয়্যার ইনস্টল করে নেওয়া জরুরি।
দেখে নিতে হবে ডার্ক ওয়েবে নিজের তথ্য ফাঁস হচ্ছে কিনা—
ব্যাঙ্কিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইমেল অ্যাকাউন্ট, সোশ্যাল সিকিওরিটি নম্বর-সহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হতে পারে। ডার্ক ওয়েবে কারও এমন ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হচ্ছে কিনা দেখার জন্য ডার্ক ওয়েব স্ক্যান করতে হবে। অথবা, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সার্ভিস নেওয়া যেতে পারে। এটি ব্যবহারকারীর কোনও তথ্য পেলেই সতর্ক করে দেয়।
তথ্য ফাঁস রুখতে—
নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে নিজের সমস্ত পাসওয়ার্ড বদলে ফেলতে হবে। ক্রেডিট রিপোর্টে কোনও অসঙ্গতি রয়েছে কিনা তা নিয়মিত যাচাই করতে হবে। তেমন হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে জানিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে।