খনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই! অক্ষয়ের ছবিতে নিজেদের দেখলেন সেই যোদ্ধারা

খনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই! অক্ষয়ের ছবিতে নিজেদের দেখলেন সেই যোদ্ধারা

আসানসোল: ৬৫জন শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে পরাজিত করে ফিরে আসা। ১৩ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারিতে ঘটে যাওয়া খনি দুর্ঘটনা। ৬ শ্রমিকের মৃত্য। প্রাণে বেঁচে ফিরে আসা বাকিদের। গত শুক্রবার আসানসোলের মনোজ সিনেমা হলে ‘মিশন রানিগঞ্জ’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। মিশন রানিগঞ্জ ছবিটি তৈরি হয়েছে মহাবীর কোলিয়ারির দুর্ঘটনা নিয়ে। যে ছবিটি দেখতে পরিবারের সঙ্গে সিনেমা হলে পৌঁছেছিলেন দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা। যাঁরা সাক্ষাৎ মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন।

‘মিশন রানিগঞ্জ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার এবং পরিণীতি চোপড়া। টিনু সুরেশ দেশাই পরিচালিত এবং পূজা এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত ছবিটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে দেশে।

একটি ভূগর্ভস্থ খনিতে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে, দেশের অন্যতম উদ্ধারকাজ এই ছবিতে দেখানো হয়েছে। যেখানে একটি কয়লা খনিতে আটকে পড়া ৭১ জন শ্রমিকের মধ্যে ৬৫ জন শ্রমিকের জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। বেঁচে থাকার আশায় মৃত্যুর চোয়ালে বন্দি হয়েও ফিরেছি, সিনেমা দেখে এমনটাই জানিয়েছেন জগদীশ প্রজাপতি। যিনি বাস্তবে ওই ঘটনার সাক্ষী।

মহাবীর কোলিয়ারিতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায়, ইসিএলের ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিং গিল উদ্ধারকাজ করেছিলেন। খনি থেকে ৬৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে বের করে এনেছিলেন। শ্রমিকদের কাছে তিনি ছিলেন একজন সুপার হিরো। যাঁর সাহসিকতার পরিচয় এখনও রয়েছে শিল্পাঞ্চলে। সারা বিশ্বে আলোচিত তিনি। ইসিএলের ৩৫০ ফুট গভীর খনিতে তিনি উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন।

খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের নিরাপদে বের করার কোনও উপায় ছিল না। তখন যশবন্ত সিং গিল খনিতে প্রবেশ করেন এবং পরামর্শ দেন, একটি ক্যাপসুলের মতো ডুলি তৈরি করতে। শ্রমিকদের নিরাপদে বের করার জন্য বোরিং হোল দিয়ে খনির ভেতরে নামিয়ে দিতে বলেন ক্যাপসুল। খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাঁচানোর তাগিদ, চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর মনে। শ্রমিকদের বাঁচাতে তাঁর ভাবনা কিছু সময়ের জন্য কর্মকর্তাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু শ্রমিকদের বাঁচানোর আর কোনও উপায় ছিল না।

কর্মকর্তারা যশবন্ত সিংয়ের প্রস্তাব মেনে নেন। এমন পরিস্থিতিতে যশবন্ত সিং গিল তাঁর জীবনের তোয়াক্কা না করে খনিতে প্রবেশ করেন। নিজের হাতে নকশা তৈরি করেন। তিনি ক্যাপসুল ডুলিতে নামার জন্য প্রস্তুত হন। খনির ভেতরে যাওয়া পড়া ৬৫ শ্রমিক-সহ বাকি ৬ শ্রমিকের মৃতদেহ নিরাপদে বের করেন।

প্রসঙ্গত খনি দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ৬৫ জন শ্রমিককে ১০০০ টাকা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। কিন্তু খনিতে জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে যে সব শ্রমিকরা মৃত্যুর সামনে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেই শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে কোনও চিন্তাই করা হয়নি। এই কথা স্মরণ করে মহাবীর কোলিয়ারির পুরনো শ্রমিক জগদীশ প্রজাপতি ইসিএল ম্যানেজমেন্ট, সরকারি দফতর ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির দিকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাছাড়া, শহীদদের স্মরণে একটি ছোট স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি তুলেছেন তিনি।

(Feed Source: news18.com)