‘তরল উদ্ভিদে’ বিপ্লব! একধাক্কায় কমবে দূষণ?

‘তরল উদ্ভিদে’ বিপ্লব! একধাক্কায় কমবে দূষণ?
কলকাতা: আধুনিক সময়ে বিশ্বের যে কটি সমস্যা নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যেই একেবারেই প্রথমে রয়েছে পরিবেশদূষণ (Pollution)। দ্রুত হারে নগরায়ণ, ক্রমশ কমতে থাকা বনের আয়তন সরাসরি প্রভাব ফেলছে পরিবেশে। বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু (Climate Change)। তার জেরেই প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রে।

একদিকে সবুজের পরিমাণ যেমন কমতে দেওয়ার নয়, তেমনই সভ্যতার অগ্রগতিও থেমে থাকার নয়। এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য কীভাবে আসবে তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যেই চমক দিয়েছেন সার্বিয়ার বিজ্ঞানীরা। তৈরি করেছেন ‘তরল উদ্ভিদ’বা Liquid Tree

পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়া (Serbia)। তারই রাজধানী বেলগ্রাদ (Belgrade)। সেদেশের অন্যতম দূষিত শহর এটি। দূষণের মোকাবিলা করতে গিয়েই সেদেশের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এই ‘তরল উদ্ভিদ’বা Liquid Tree. কী এটি?

বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী এটিই সার্বিয়ার প্রথম Urban Photo-bioreactor. গ্রিনহাউস গ্যাস (Green House Gas) তৈরিতে লাগাম দেওয়া এবং শহরের আবহাওয়া আরও ভাল করার জন্য এর ব্য়বহার করা হয়েছে। এই যন্ত্রে রয়েছে ৬০০ লিটার জল এবং বিশেষ ধরনের মাইক্রো অ্যালগি (Microalgae), যেটি কার্বন ডাই অক্সাইড বিশ্লেষণ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে। আর এই কাজটি করে সালোকসংশ্লেষের (photosynthesis) মাধ্য়মে। এই প্রকল্প যে বিজ্ঞানীদের দল করেছে, তার অন্যতম সদস্য Dr. Ivan Spasojevic. তিনি বেলগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মাল্টিডিসিপ্লিনারি রিসার্চের গবেষক। তিনি জানাচ্ছেন, এই মাইক্রোঅ্যালগি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষেত্রে সাধারণ উদ্ভিদের তুলনায় অন্তত ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কার্যকরী। ১০ বছরের পুরনো ২টি গাছ বা ২০০ বর্গমিটার লন যতটা কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিতে পারে, ততটাই করতে পারে এই ‘তরল উদ্ভিদ’বা Liquid Tree. তাহলে কি উদ্ভিদের জায়গা নেবে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এমনটা নয়। আদতে শহরের দূষিত এলাকায় যেখানে উদ্ভিদ সৃজন করা যাবে না সেখানে কাজে আসতে পারে এই ধরনের তরল উদ্ভিদ।

বেলগ্রাদের বায়ুর মান অত্যন্ত খারাপ। কারণ শহরের কাছেই রয়েছে ২টি কয়লাচালিত শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। NGO Health and Environment Alliance (HEAL)-এর দাবি অনুসারে ইউরোপের প্রথম ১০টি দূষণ ছড়ানো বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পড়ে এই ২টি। ফলে তার প্রভাবেই বায়ুদূষণ (Air Pollution) হয়েছে এই শহরের। শরৎ কাল এবং শীতকালে এই দূষণের মাত্রা ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

বিশ্বজুড়েই এই সমস্যা রয়েছে। Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ কমাতে হবে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন। সেই লক্ষ্য়ে কাজ করতে গেলে একদিকে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ভরসা কমিয়ে আনতে হবে, তেমনই কাজে লাগবে এমন ধরনের Liquid Tree. বনসৃজনকে গুরুত্ব দিতেই হবে। তার পাশাপাশি অন্তত শহর এলাকায় দূষণ মাত্রা কমাতে কাজে লাগতে পারে এমন আবিষ্কার, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

(Feed Source: abplive.com)