ক্রীড়া বিশ্বে নতুন শক্তিরূপে উত্থান হচ্ছে ভারতের, আইওসি অধিবেশনের এটাই সেরা সময়

ক্রীড়া বিশ্বে নতুন শক্তিরূপে উত্থান হচ্ছে ভারতের, আইওসি অধিবেশনের এটাই সেরা সময়

মুম্বই: মুম্বইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে আয়োজিত হতে চলেছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বা IOC অধিবেশন। ক্রীড়াজগতের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের আসবেন এই অধিবেশনে। ভারতীয় খেলাধুলোর ক্ষেত্রে এই অধিবেশন একটা যুগান্তকারী সুযোগ বললে একদম বেশি বলা হবে না।

২০২৮ সালের লস এঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ক্রিকেট। ভারতীয়রা ক্রিকেটের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ক্রিকেট মানচিত্রে ভারত শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারতে IOC-র অধিবেশনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

গত দেড় দশকে অলিম্পিক পদকের পথে একটু একটু করে এগিয়েছে ভারত। ব্যক্তিগত বিভাগে পদকের খরা কাটিয়ে অভিনব বিন্দ্রা প্রথম সোনা নিয়ে আসেন। গত অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন নীরজ চোপড়া।তার পর থেকেই দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগী হিসেবে শক্ত জায়গা তৈরি করছেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা।

ভারতের ক্রীড়ামহল একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে কথা বলাই যায়। ২০২৪ সালের প্যারিস গেমসে পাঁচটি স্বর্ণপদক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। এমনই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সেই সঙ্গে আসতে পারে মোট ২০টি পদক। ২০২৮ সালের মধ্যে সোনার সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলতে পারলেই শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিতে পারবে ভারত। তবে সেজন্য প্রয়োজন হবে শক্তিশালী পরিকাঠামো আর সঠিক লক্ষ্য। টোকিও অলিম্পিকেই একটা বড় পরিবর্তন নজরে পড়েছিল। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল ক্রীড়াবিদদের মানসিকতার পরিবর্তনের কারণে। তারই ফলশ্রুতিতে সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেমসে প্রথমবার ভারতে ১০০টি পদক লাভ করেছে।

গত অগাস্টে বুদাপেস্টে আয়োজিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষদের জ্যাভেলিন-এর ফাইনালে তিনজন ভারতীয়কে পাওয়া গিয়েছে শীর্ষ ছয়ে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের জোরেই জ্যোতি ইয়ারাজি ১০০ মিটার হার্ডলসের ফাইনালে পোছেছিলেন। অথচ, প্রথমে তাঁকে ভুল ভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। পুরুষদের ব্যাডমিন্টন ডাবলসে বিশ্বের ১ নম্বর জুটি হিসাবে উঠে এসেছেন সাত্ত্বিক সাইরাজ রেড্ডি এবং চিরাগ শেঠি। এশিয়ান গেমসের সোনা জিতেছেন হরমনপ্রীত সিংরা। ভারতীয় পুরুষ হকি দলের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উন্নতির স্মারক।

আন্তর্জাতিক স্তরে খেলাধুলোয় ক্রমশ উজ্জ্বল হয়েছেন ভারতীয়রা। অ্যাথলেটিক্স থেকে ব্যাডমিন্টন, বক্সিং থেকে কুস্তি, তিরন্দাজি থেকে শ্যুটিং পর্যন্ত, তরুণ ভারতীয়রা নতুন তরঙ্গ তুলছেন।আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নজর কাড়ছে ভারত। ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের এই উন্নতিতে সমর্থন জোগাচ্ছে ভারত সরকার। কিছু কর্পোরেট সংস্থাও এই বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে হতাশাজনক প্রদর্শনের পর থেকেই উন্নতির আাকঙ্ক্ষা বেড়েছে ভারতীয়দের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি অলিম্পিক টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। এই বিষয়ে বিশদ পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশীয় ক্রীড়াবিদদের এগিয়ে আসার বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসকরা বুঝতে পেরেছেন, বিশ্ব মঞ্চে অগ্রগতি না হলে জবাবদিহি করতে হতে পারে। তাই ক্রীড়াবিদদের জন্য সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন তাঁরাও। উন্নতির জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন হল ক্রীড়াবিদদের সাহায্য করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর ভাবে তাঁদের শক্তিশালী করে তোলা। সেজন্য যোগ্য প্রশিক্ষক এবং ফিজিওথেরাপিস্ট প্রয়োজন। সঙ্গে রাখা হচ্ছে মনন প্রশিক্ষক এবং রিকভারি এক্সপার্টদেরও।

এই সময়ে ভারতে আয়োজিত IOC অধিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলিকে IOC নেতৃত্বের এবং IOC-এর সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও জড়িত হওয়ার সুযোগ দেবে। এঁদের মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশন পরিচালনা করেন। ফলে ভারতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নত প্রশাসনের সূচনা হতে পারে। অন্তত সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করে নেওয়া যাবে এই সময়।

তবে এমনটা মনে করলে ভুল হবে যে, শুধুমাত্র অভিজাত ক্রীড়াবিদদের উপর যাবতীয় আলো পড়ছে। অভিনব বিন্দ্রা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে অলিম্পিক ভ্যালু এডুকেশন প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে ভারতের মতো দেশে। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন IOC-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তার ফলেই বন্ধুত্ব, সম্মান এবং শ্রেষ্ঠত্বের মূল সুর ধ্বনিত হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

এই প্রেক্ষিতে একথা বলাই যায় যে বিশ্ব ক্রীড়া মানচিত্রে ভারত আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার উপস্থিতি স্পষ্ট করে তুলবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। IOC অধিবেশনের তিনটি দিন আসলে অনুঘটকের কাজ করতে চলেছে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের উন্নতির লক্ষ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে সে কথা বলাই যায়।

(Feed Source: news18.com)