Durga Puja 2023: ক্যালিফোর্নিয়ার পুজোয় দু’চোখে ছিল স্বপ্ন আর রক্তে বাঙালিয়ানা

Durga Puja 2023: ক্যালিফোর্নিয়ার পুজোয় দু’চোখে ছিল স্বপ্ন আর রক্তে বাঙালিয়ানা

নিবেদিতা হাজরা: প্রবাসে শরত এলেই প্রবাসী বাঙালি জীবনে বেশি করে ফিরে ফিরে আসে ঘরে ফেরার টান , নিজেদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব আর কৈশোরের পাতা গুলো উল্টেপাল্টে দেখা , নস্টালজিয়ায় ডুবে বুঁদ হয়ে যাওয়া , পরবর্তী প্রজন্মকে কে নিজেদের সংস্কৃতি চেনানো আর দুগ্গাঠাকুরের গপ্প শোনানোর তাগিদে টিভিতে ইউটিউব চালিয়ে রায়মশাই এর ‘ জয় বাবা ফেলুনাথ ‘ কিংবা ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘ হীরের আংটি ‘ র পুজোর দৃশ্য দেখানো কিংবা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের দীপ্ত কন্ঠে শোনানো ‘ ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণু সংস্থিতা, নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ ’।

দুর্গাপুজো যেমন মায়ের নিষ্ঠাভরে আরাধনার উৎসব , তেমনি এই পুজো এক মিলন উৎসব , সবথেকে বড় সেলিব্রেশন বঙ্গজীবনে | সে সেই বাঙালি লিলুয়ায় থাকুন বা লস এঞ্জেলসে |

সেই লস এঞ্জেলসের এক অন্যতম জনপ্রিয় পুজো হলো ‘ বেঙ্গলি এসোসিয়েশন অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ‘ র পুজো , যা ‘ বিএএসসি’ র পুজো নামেই বেশি পরিচিত | ‘বিএএসসি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে , তবে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৯৭৮ সাল থেকে | গুটিকয়েক প্রবাসী বাঙালি মিলে এই পুজো শুরু করেন , তবে তাঁদের চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক বড় | আজ মায়ের আরাধনার আয়োজন হয়েছে অনেক গুণ বেশি , প্রায় ৫০০ র বেশি বাঙালি পরিবার আজ এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত | শুধু কি বাঙালি , অনেক অবাঙালি পরিবার কিংবা অনেক কলেজ পড়ুয়া বাঙালি ছেলেমেয়ের রাশিয়ান , আমেরিকান কিংবা চাইনিজ বন্ধু বান্ধবী রাও এসে হাজির হয় পুজো মণ্ডপে |
সাধে কি বলে দুর্গাপুজো সর্বজনীন উৎসব !
প্রবাসের অন্যান্য পুজোর মতো এই পুজোও হয় উইকেন্ডে অফিস -স্কুল -কলেজ -ইউনিভার্সিটি র ছুটি দেখে | মোটামুটি প্রতি পাঁচবছর অন্তর প্রতিমা আনানো হয় কুমারটুলি থেকে | এইবারে বিএএসসি র পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে মোনরোভিয়া হাইস্কুলে ২০ , ২১ আর ২২ শে অক্টোবর | এই আড়াই দিনেই পুজো মণ্ডপ মাতোয়ারা হয়ে উঠবে ঢাকের বাদ্যি আর কাঁসর ঘন্টার শব্দে , সন্ধ্যারতি র ধূপ- ধুনোর মায়াবী গন্ধে , অষ্টমী র অঞ্জলীর নিষ্ঠাভরা মন্ত্র উচ্চারণে , সিঁদুর খেলা আর ধুনুচি নাচের ছন্দে , নজরকাড়া শাড়ি -গহনা – পাঞ্জাবির ভিড়ে |

কিন্তু রক্তে বাঙালিয়ানা আছে , তাই পেটপুজো ছাড়া কোনো উৎসব সম্পূর্ণ করার কথা ভাবাই যায় না | সেই কথা মাথায় রেখেই , ‘বিএএসসসি’ র ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকে চোখে পড়ার মতো | খিচুড়ী , ভাজাভুজি , পায়েস , লুচি , আলুর দম , চিকেন তন্দুরী , মটন বিরিয়ানী , কাতলা মাছের কালিয়া , ফ্রায়েড রাইস , চিলি চিকেন , মিষ্টি কি থাকেনা সেখানে | কচি কাচাদের জন্য পাস্তা -ইটালিয়ান পিৎজা র ব্যবস্থাও থাকে |

ভুরিভোজের র পর এইবারে ‘বিএএসসি ‘ পুজোর ২০ শে অক্টোবরের সন্ধ্যা মাতাবেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গায়িকা ইমন চক্রবর্তী | কখনও তিনি গেয়ে উঠবেন ‘তুমি যাকে ভালোবাসো ‘ কিংবা তাঁর গাওয়া ‘টাপা টিনি ‘ র ছন্দে কোমর দোলাবেন প্রবাসী বাঙালি রা | ২১ শে অক্টোবরের সন্ধ্যা মাতাবেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী পাপন , বাংলা গানের সাথে বাঙালি মাতবে কিছুটা বলিউডি মেজাজেও |
দেশ থেকে আসা জনপ্রিয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান ছাড়াও , ‘বিএএসসি’ পুজো র অন্যতম আর এক আকর্ষণ হলো লোকাল শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে থাকে নৃত্যানুষ্ঠান , শ্রুতিনাটক , আর স্পেশালি পুজোর নাটক | এইবছর কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী বাপি লাহিড়ী কে শ্রদ্ধা জানাতে ২১ শে অক্টোবর ‘বিএএসসি’ র লোকাল শিল্পীরা আয়োজন করেছেন এক স্পেশাল মিউজিক সন্ধ্যার |

তবে আনন্দ -উন্মাদনা -উৎসবে মেতে উঠে ‘বিএএসসি’ কিন্তু ভুলে যায় না সমাজ আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা | ‘শিক্ষানিধি’ আর ‘সেবা ‘ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন এনারা |

তাই না বা থাকুক মৃদু হাওয়ায় দুলতে থাকা মায়াবী কাশফুলের দল কিংবা অমোঘ হাতছানি দেওয়া পুকুরে ভেসে থাকা পদ্ম কিংবা শরতের ভোরে প্রাণজুড়ানো মনকেমন করা শিউলি ফুলের গন্ধ , গ্লোবাইলাইজেশনের দৌলতে ঘর ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও বাঙালি আজও আছে বাঙালিয়ানাতেই মজে |

(Feed Source: zeenews.com)