হুবহু ‘দৃশ্যম’ ছবি! ঠান্ডা মাথায় দুই বোনকে খুনের ছক; অবশেষে পুলিশের জালে দাদা

হুবহু ‘দৃশ্যম’ ছবি! ঠান্ডা মাথায় দুই বোনকে খুনের ছক; অবশেষে পুলিশের জালে দাদা

মুম্বইঃ বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে দুই বোনের খুনের ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিল। প্রথমে পুলিশের সন্দেহের তির ছিল তাঁদেরই এক আত্মীয়ের দিকে। তবে পরে অবশ্য বোঝা যায় নিজের দাদাই ঠান্ডা মাথায় আগে থেকে ছক কষে খুন করেছে বোনেদের।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পালঘরের বন দফতরে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন গণেশ মোহিতে। অবিবাহিত দুই বোনকে নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই তাঁদের সরানোর ছক কষে ফেলেন গণেশ। এর জন্য অবশ্য বলিউড ছবি ‘দৃশ্যম’-এর সাহায্য নিয়েছেন।

গণেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বোনেদের হত্যা করে তার দোষ অন্য এক আত্মীয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া। আর তদন্তের মোড় ঘোরানোর জন্য তিনি জানান যে, তাঁদের আত্মীয় পানীয় জলে বিষ মিশিয়েছেন। যা পান করার পরে তাঁর দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী ওই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মা এবং তদন্তকারী অফিসারদের মনে সন্দেহ জাগাতে সফলও হয়ে গিয়েছিলেন গণেশ।

কিন্তু কীভাবে এই খুন হল? রায়গড়ের স্থানীয় ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ ইনস্পেক্টর বালাসাহেব খাড়ে জানান, গত ১৫ অক্টোবর নবরাত্রির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সপরিবারে গিয়েছিলেন গণেশ। সেখানেই তিনি দুই বোনের জন্য ইনস্ট্যান্ট স্যুপ বানিয়েছিলেন। তার মধ্যেই মিশিয়েছিলেন ইঁদুর মারার বিষ। সেই স্যুপ খাওয়ার পরে বারান্দায় রাখা পাত্র থেকে পানীয় জল আনতে মা-কে পাঠান গণেশ। এরপর নবরাত্রি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে বোন সোনালি তাঁকে ফোন করে বলেন, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। এরপর গরবা থেকে বেরিয়ে গণেশ তাঁকে নিয়ে আলিবাগ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই গত ১৭ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এরই মধ্যে আর এক বোন স্নেহার শরীরেও মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁকে কামোথের এমজিএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে ২০ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।

সোনালির মৃত্যুর পরেই এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে স্নেহা এবং মায়ের মগজধোলাই করেছিলেন গণেশ। তাঁদের এটাই বুঝিয়েছিলেন যে, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই আত্মীয় এই বারান্দায় রাখা জলের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে নেমে ওই আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে, তাঁদের বাড়ির বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, বারান্দায় রাখা ওই জলে কেউ কিছু মেশাননি। এদিকে ওই জল খেয়ে মায়েরও কোনও সমস্যা হয়নি। এই দু’টো বিষয়ে সন্দেহ গভীর হয়। পুলিশি জেরায় উঠে আসে গণেশ এবং তাঁর বোনেদের বিবাদের কথা।

সন্দেহের তির ঘুরে যায় গণেশের দিকে। তাঁর ফোন সার্চ করে গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে ৫৩টি অনুসন্ধান উঠে আসে। যেখানে দেখা যায়, বিষ সংক্রান্ত সব বিষয় অনুসন্ধান করেছেন গণেশ।

তদন্তে জানা গিয়েছে, গণেশের বাবা বন দফতরের আধিকারিক ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পর কোন সন্তান বাবার চাকরি পাবে, সেই নিয়ে পরিবারে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। এমনকী এক মেয়েকে এই বিষয়ে সমর্থন করেছিলেন মা। এখানেই শেষ নয়, বোনেদের জন্য বেতনের একটা বড় অংশ খরচ হত বলেও বিরক্ত ছিলেন গণেশ। এমনকী তাঁর সন্দেহ ছিল, বোনেরা পরে সম্পত্তির অংশ দাবি করতে পারেন।

(Feed Source: news18.com)