রাত যত বাড়তে থাকল, সোনার বাংলাদেশের ক্রিকেটের কঙ্কালসার ছবিটা তত প্রকট হয়ে পড়ল ক্রিকেটের নন্দনকাননে। শাকিব আল হাসানদের ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার স্বপ্নও যেন অকালমৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেল আরও এক ধাপ।
প্রথমে রিভার্স স্যুইংয়ের ছোবল। তারপর আবদুল্লা শফিক ও ফখর জামানের ব্যাটের চাবুক। আর তাতেই একপেশেভাবে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারাল পাকিস্তান। ১০৫ বল বাকি থাকতে। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্নটাও ভেসে রইল। সম্ভাবনা যতই ক্ষীণ হোক না কেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধে পাক পেসারদের দাপট। ইডেনে প্রথম দুই ম্য়াচে কোনও আতশবাজির প্রদর্শনী নেই। সব তোলা রয়েছে ৫ নভেম্বর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের জন্য। তবে মঙ্গলবার ইডেনে রোশনাই ছড়ালেন পাক পেস-ত্রয়ী। বহুদিন পর রিভার্স স্যুইংয়ের দুরন্ত প্রদর্শনী দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। তাও ওয়ান ডে ক্রিকেটে। যেখানে এখন দুই প্রান্ত থেকে দুটি নতুন বল ব্যবহার করা হয়। তবু বিরল রিভার্স স্যুইং শিল্পকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে গুঁড়িয়ে দিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, মহম্মদ ওয়াসিম, হ্যারিস রউফরা।
বিশেষ করে ওয়াসিম। নাসিম শাহ চোট পেয়ে ছিটকে না গেলে ডানহাতি পেসার ওয়াসিমের প্রথম একাদশে খেলারই কথা নয়। এমনকী, টুর্নামেন্টের প্রথমার্ধে তাঁকে বসিয়ে রেখে হাসান আলিকে খেলাচ্ছিল পাকিস্তান। ওয়াসিম যখন দলে সুযোগ পেয়েছেন, সেমিফাইনালের দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গিয়েছে পাকিস্তান। আর সেই ক্ষত ভুলিয়ে একের পর এক বিধ্বংসী স্পেল করে চলেছেন ডানহাতি পেসার। নিয়মিতভাবে ঘণ্টায় ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেন। বল দুদিকে স্যুইং করান। আর মঙ্গলবার তার সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন রিভার্স স্যুইংয়ের বিষ। যা দেখে মুগ্ধ রিভার্স স্যুইংয়ের অন্যতম ধারক ও বাহক, কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিসও।
শাহিন শাহ আফ্রিদিকে বলা হয় পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের পেস বোলিংয়ের সেরা মুখ। কেন, তা এদিন বোঝালেন বাঁহাতি পেসার। নিজের প্রথম স্পেলে প্রথম ২ ওভারে পরপর জোড়া উইকেট। বাংলাদেশ ইনিংসকে শয্য়াশায়ী করে দেওয়ার সেই শুরু। তারপর সেই শয্যাকেই শরশয্য়া বানিয়ে তুললেন মহম্মদ ওয়াসিম, হ্যারিস রউফরা।
পাক পেস বোলিংয়ের গোলাগুলির সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ ব্যাটিং। ২৯ বল বাকি থাকতে, ৪৫.১ ওভারে, মাত্র ২০৪ রানে অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনার ২১.১ ওভারে ১২৮ রান যোগ করেন। আবদুল্লা শফিক ৬৮ ও ফখর জামান ৮১ রান করেন। বাবর আজ়ম রান পাননি। তবে তাতে পাক দাপট কমেনি।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই সম্প্রচারকারী চ্যানেলে একটা পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছিল। কোন দলের সেমিফাইনালে যাওয়ার কত শতাংশ। সেখানে দেখা গেল, পাকিস্তানের চেয়ে এমনকী আফগানিস্তানও ঢের এগিয়ে। পাকিস্তানের সম্ভাবনা যেখানে ৮ শতাংশ, আফগানদের ২০ শতাংশ। ফখর জামান বলছিলেন, ‘রান রেটের ব্যাপারটা মাথায় ছিল। দ্রুত ম্যাচ শেষ করতে চেয়েছিলাম।’
বিশ্বকাপের শেষ চারের দৌড়ে নতুন অক্সিজেন পেয়েই বুধবার শহর ছাড়বে পাকিস্তান।
(Feed Source: abplive.com)