২০০০ বছর সময় লেগে যেত মানুষের, মঙ্গলের পাথর ভেঙে ৬ সপ্তাহে অক্সিজেন তৈরি করে দেখাল রোবট

২০০০ বছর সময় লেগে যেত মানুষের, মঙ্গলের পাথর ভেঙে ৬ সপ্তাহে অক্সিজেন তৈরি করে দেখাল রোবট
বেজিং: পাথর ভেঙে জল নয়, তৈরি হল অক্সিজেন (Science News)। যে সে পাথর নয়, মঙ্গলগ্রহের বুক থেকে ছিটকে পড়া পাথর ভেঙে অক্সিজেন তৈরি করা হল। তবে বিজ্ঞানীরা নন, এই অসাধ্য সাধন করেছে চিনের বিজ্ঞানীদের হাতে তৈরি এক রসায়নবিদ রোবট (Robot Makes Oxygen fromMartian Rocks)। পৃথিবীর বাইরে লালগ্রহে বিকল্প বসতি গড়ে তুলতে যখন মরিয়া চেষ্টা চলছে, সেই সময়ই মঙ্গলগ্রহ থেকে আছড়ে পড়া পাথর ভেঙে অক্সিজেন তৈরি করে দেখাল ওই রোবট। পৃথিবীর বুকে বসে এই কাজ করে দেখিয়েছে রোবটটি, আগামী দিনে মঙ্গলে বসে এই কাজ করানোর চেষ্টা হবে তাকে দিয়ে। (Colonising Mars)

সোমবার ‘নেচার সিন্থেসিস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিষয়টি সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, কৃত্রিম যন্ত্রমেধা দ্বারা চালিত ওই রোবটের হাতে গুরুদায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়। মঙ্গলগ্রহের বুক থেকে ছিটকে পড়া পাথর, উল্কাখণ্ড তুলে দেওয়া হয় তার হাতে। লেজার স্ক্যানের সাহায্যে ওই সব পাথরের মধ্যে থাকা আকরিককে চিহ্নিত করে রোবটটি। এর পর, পাথরের মধ্যে থেকে ছ’টি পৃথক ধাতব উপাদান-লোহা, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং ক্যালসিয়াম থেকে প্রায় ৩৭ লক্ষ অণু তৈরি করে সে।

এই গোটা পর্বে, কোনও মানুষ রোবটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি। বরং একাই ওই রোবটটি ২৪৩টি পৃথক অণুকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সে। তার মধ্যে থেকে সেরা অনুঘটকটিকে খুঁজে বের করে সে। দেখা যায়, মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জলের অণুর বিভাজন ঘটাতে সক্ষম ওই অনুঘটক। বিজ্ঞানীদের সাহায্য ছাড়া, মাত্র ছয় সপ্তাহে এই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে রোবটটি। সমস্ত অনুঘটককে পরীক্ষা করে, তার মধ্যে থেকে জল বিভাজক অণুটিকে শনাক্ত করতে মানুষের ২০০০ বছর লেগে যেত বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ওই গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক তথা হেফেইয়ের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অফ চায়নার বিজ্ঞানী জুন জিয়াং বলেন, “ছোট থেকেই সৌরগজতের বাইরে অভিযানের স্বপ্ন দেখতাম আমি। যখন রোবটটির তৈরি অনুঘটককে জল ভেঙে অক্সিজেন তৈরি করতে দেখলাম, মনে হল সেই স্বপ্ন বুঝি সত্যি হচ্ছে। আগামী দিনে মঙ্গলে বাস করার সুযোগ পাব বলে নিজেকে নিয়ে ভাবতেও শুরু করে দিয়েছিলাম।“ রোবটটির কর্মদক্ষতার প্রশংসা করেছেন জিয়াং। তবে তাঁর মতে, মহাকাশ গবেষণার কাজে অবশ্যই সহায়ক হতে পারে যন্ত্রমেধা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় থাকতে হবে। সঠিক শিক্ষা পেলে তবেই যন্ত্রমেধা চালিত রোবটের বুদ্ধির ধার বাড়বে বলে মত তাঁর।

মনুষ্যজাতির জন্য পৃথিবীর বিকল্প বাসস্থানের সন্ধানে এখনও পর্যন্ত দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে লালগ্রহই। কিন্তু সেখানে অভিযান চালাতে গেলে প্রয়োজন অক্সিজেনের। শুধু মহাকাশচারীদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, রকেট প্রপেলান্ট হিসেবেও অক্সিজেন প্রয়োজন। পৃথিবী থেকে সবকিছুর ব্যবস্থাপনা করে অভিযান চালানোর খরচ অনেক বেশি। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য তা লাভজনকও নয়। ফলে মঙ্গলগ্রহে প্রাপ্ত উপাদান থেকে সেখানে বসেই যদি অক্সিজেন তৈরি করা যায়, কোটি কোটি টাকা বেঁচে যায়। মঙ্গলের মাটির নীচে এমনিতে বরফের চাদর রয়েছে বলে হদিশ পেয়েছেন বিজ্ঞান। হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে তৈরি হয় জল, তা জমে হয় বরফ। ফলে মঙ্গলের মাটি থেকে প্রাপ্ত উপাদান ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরির উপায় খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই অসাধ্য সাধন করে দেখাল রোবট। মঙ্গলের মাটিতে ওই রোবটটি কার্য সম্পাদনে সক্ষম কিনা, আগামী দিনে তা পরখ করে দেখবেন বিজ্ঞানীরা।

(Feed Source: abplive.com)