গত সপ্তাহান্তে পর পর যে ভাবে এগিয়েছে ঘটনাক্রম, তার পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল চমক। ‘দায়িত্ব সামলানোর যোগ্য নন’, ‘সংস্থার প্রতি সৎ’ ছিলেন না বলে প্রথমে অল্টম্যানকে বহিষ্কার করে OpenAI. সেই জায়গায় অন্তরবর্তীকালীন CEO হিসেবে আনা হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মীরা মূর্তিকে। এর পর আবার অল্টম্যানের সঙ্গে দরাদরি শুরু করে OpenAI. কোনও সমাধানে পৌঁছনোর আগেই এমেট শিয়ারকে পদে অধিষ্ঠিত করা হয়।
ChatGPT-র উদ্ভাবন ঘটিয়ে যন্ত্রমেধার জগতে বিপ্লব এনেছে যে OpenAI সংস্থা, তাদের এই আচরণকে হঠকারী বলে দাগিয়ে দেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। সেই নিয়ে যখন উত্তাল গোট দুনিয়া, সেই সময় কার্যতই বোমা ফাটান মাইক্রোসফ্টের ভারতীয় কর্ণধার সত্য নাদেল্লা (Satya Nadella)। জানান, মাইক্রোসফ্টে যোগ দিচ্ছেন অল্টম্যান। শুধু তাই নয়, অল্টম্যান এবং OpenAI-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রোকম্যানের নেতৃত্বে মাইক্রোসফ্টে পৃথক যন্ত্রমেধার উন্নতমানের গবেষণা বিভাগ গড়ে তুলতে চলেছে।
অল্টম্যানকে বহিষ্কার থেকে বোর্ডের একের পর এক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন OpenAI-এর কর্মীরা। কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে গণ ইস্তফার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে OpenAI-এর অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে সংস্থার গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। অফিসের কাজ হোক বা স্কুলের প্রজেক্ট, ChatGPT-র উপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অল্টম্যানের মাইক্রোসফ্টে যোগদান সংস্থার জন্য অশুভ ইঙ্গিত বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
And now this! This is what u get when you try to build disruptive tech with Board run cos & exotic mgmt structures. Get with the program and stop behaving like elitist punks operating with total
impunity. If you can’t make good decisions or stand behind the ones u made, resign.… https://t.co/1BrsvSALln— Anupam Mittal (@AnupamMittal) November 20, 2023
অল্টম্যান নিজেও এই জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন। মাইক্রোসফ্টের জন্য OpenAI যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে কোনও রাখঢাক করেননি তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘OpenAI-কে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছি সত্য এবং আমি। গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে সংস্থার কাজকর্মে পূর্ণ সহযোগিতা করব আমরা, OpenAI এবং মাইক্রোসফ্টের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই তা সম্ভব’।
যদিও বিষয়টি এত সহজ নয়, এর নেপথ্যে অন্য সমীকরণ লুকিয়ে রয়েছে বলে কানাঘুষো সিলিকন ভ্যালিতে। OpenAI-তে ৪৯ শতাংশের অংশীদার মাইক্রোসফ্ট। অন্য বিনিয়োগকারীরা আরও ৪৯ শতাংশের অংশীদার। অলাভজনক অভিভাবক সংস্থা বাকি ২ শতাংশের দাবিদার। শোনা যাচ্ছে, অল্টম্যানকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নাদেল্লাকে জানায়নি OpenAI. বিষয়টি জানার পর দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টাও করেন নাদেল্লা। তাতেও বরফ না গলায় অল্টম্যান এবং গ্রেগকে মাইক্রোসফ্টে নিয়োগ করেন তিনি। অল্টম্যান এবং গ্রেগ মাইক্রোসফ্টে যোগ দিচ্ছেন বলে ঘোষণা হতেই শেয়ার বাজারে মাইক্রোসফ্টের শেয়ার ২ শতাংশ তরতর করে উঠে চলেছে। বর্তমানে মাইক্রোসফ্টের বাজার মূলধন ২.৮১ ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ কোটি ডলার। এর আগে, OpenAI নিজেদের যে বাজার মূলধনের পরিসংখ্যান দিয়েছিল, তা ছিল ৯ হাজার কোটি ডলার। সেই নিরিখে একদিনের ব্যবধানেই তাদের চেয়ে শেয়ার বাজারে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখল মাইক্রোসফ্ট।
আর তাতেই বিষয়টিকে কাকতালীয় হিসেবে দেখতে নারাজ শিল্প এবং প্রযুক্তি মহল। বলা হচ্ছে, চাইলে হয়ত OpenAI সংস্থাটিকে অধিগ্রহণ করে নিতে পারতেন নাদেল্লা। কিন্তু তা না করে, সংস্থার দুই মাথাকেই মাইক্রোসফ্টে টেনে নিলেন তিনি। এর ফলে প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক সাফল্যের দিক থেকে মাইক্রোসফ্ট যেমন দৌড়ে এগিয়ে যাবে, তেমনই OpenAI-এর নিয়ন্ত্রণও মাইক্রোসফ্টের হাতেই থাকবে। একচেটিয়া প্রযুক্তির বাজারে আধিপত্য কায়েম রাখা নিয়ে আগেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে মাইক্রোস্ফট। OpenAI-এর শেয়ার কেনা নিয়েই দুই দশক আমেরিকার বিচার বিভাগে শুনানি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাই কোনও রকম ঝামেলায় না গিয়ে, সন্তর্পণে অল্টম্যান এবং গ্রেগের কাঁধে বন্দুক রেখেই সত্য মাইক্রোসফ্টের আখের গুছিয়ে নিলেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
মাইক্রোসফ্টের প্রাক্তন গবেষক, বর্তমানে Hugging Face সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী মার্গারেট মিচেল বলেন, “সত্য নাদেল্লা ঠিক সময়ে একেবারে ঠিক পদক্ষেপ করেছেন। এমনিতেই OpenAI-কে মাইক্রোসফ্টের শাখা হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন অনেকে।” এমনকি ভারতীয় শিল্পপতি এবং প্রযুক্তিবিদও নাদেল্লার বুদ্ধির ধারকে কুর্নিশ জানাতে শুরু করেছেন। People Group-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা রিয়্যালিটি শো ‘শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া’র বিচারক অনুপম মিত্তলের মতে, অল্টম্যান এবং গ্রেগকে নিজের ছত্রছায়ায় নিয়ে এসে ইতিহাস তো বটেই, ভবিষ্যৎমুখীও সবচেয়ে বড় ‘অভ্যুত্থান’ ঘটিয়েছেন নাদেল্লা।
(Feed Source: abplive.com)