হাতিয়ার ফেলে মূলস্রোতে ফেরার অঙ্গীকার, মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিচুক্তি কেন্দ্রের

হাতিয়ার ফেলে মূলস্রোতে ফেরার অঙ্গীকার, মণিপুরের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিচুক্তি কেন্দ্রের

নয়াদিল্লি: হিংসার আগুন জ্বলছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। হানাহানি, রক্তপাতও হয়েছে বিস্তর। এই মুহূর্তে সেই পরিস্থিতি না থাকলেও, মণিপুর এখনও থমথমে। তার মধ্যেই বড় ঘোষণা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। তিনি জানালেন, মমিপুরের কুখ্যাত উগ্রপন্থী সংগঠন United National Liberation Front (UNLF)-এর সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কেন্দ্রের। শাহের দাবি, দেশের উত্তর-পূর্বে শান্তি ফেরানোর পথে এই চুক্তি একটি মাইলফলক। (Amit Shah)

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। বুধবার কলকাতার ধর্মতলায় রাজনৈতিক সভাও করেন অমিত শাহ। আর তার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় UNLF-এর সঙ্গে সমঝোতার কথা জানান। শাহ লেখেন, ‘একটি মাইলফলক তৈরি হল। উত্তর-পূর্বে স্থায়ী ভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মোদি সরকার যে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত হল। United National Liberationn Front আজ দিল্লিতে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। UNLF মণিপুরের সবচেয়ে প্রাচীন সশস্ত্র সংগঠন। হিংসা ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরতে রাজি হয়েছে তারা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ওঁদের স্বাগত জানাই, শান্তি এবং প্রগতির জন্য শুভেচ্ছা রইল’। (Manipur Peace Deal)

শাহ আরও লেখেন, ‘UNLF-এর সঙ্গে ভারত সরকার এবং মণিপুর সরকার যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাতে ছয় দশকের সশস্ত্র আন্দোলনে সমাপ্তির সূচনা ঘটল। সকলের উন্নয়নে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উত্তর-পূর্বের যুবসমাজের জন্য সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর এই লক্ষ্য অর্জনের পথে এটি একটি মাইলফলক’।সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবি এবং একটি ভিডিও-ও পোস্ট করেছেন শাহ। ওই ভিডিও-তে একে একে আগ্নেয়াস্ত্র সমর্পণ করতে দেখা গিয়েছে উর্দিধারী কিছু যুবককে। যে ছবি পোস্ট করেছেন শাহ, তাতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গলের মধ্যে, একটি খাদানের গাত্রে সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র।

শাহের এই ঘোষার পরই বিবৃতি জারি করেন UNLF-এর চেয়ারম্যান লামজিংবা খানদোংবাম। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারত সরকারের সঙ্গে আজ যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর করলাম আমরা।” চলতি বছরের ৩ মে থেকে বেশ কয়েক মাস সাম্প্রদায়িক হিংসার সাক্ষী থেকেছে মণিপুর। তার পর এই প্রথম কোনও সশস্ত্র সংস্থা হাতিয়ার ফেলে মূলস্রোতে ফেরার রাস্তা ধরল।

এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আটটি মেইতেই সশস্ত্র সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করে। তাদের উপর বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন (UAPA) প্রয়োগ করা হয়। নিষিদ্ধ এই সংগঠনগুলির মধ্যে ছিল UNLF-ও। এর কয়েক দিন পরই, গত ২৬ নভেম্বর মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন হিংস জানান, UNLF-এর সঙ্গে শান্তিস্থাপনের কথা চলছে। যদিও গতবছর থেকেই UNLF-এর সঙ্গে কথা চলছিল বলে জানা যায়।

যদিও এর নেপথ্যে রাজনৈতিক কার্যকারণ রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, বিগত কয়েক মাস ধরে মেইতেই এবং কুকিদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত ছিল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটি। হিংসা বন্ধ করায় কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে দেশে তো বটেই, বিদেশের মাটিতেও তীব্র সমালোচনা হয়। শুধু তাই নয়, মণিপুরে ক্ষমতাসীন বিজেপি, সংখ্যালঘু মেইতৈইদের কোণঠাসা করতে চাইছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে, UNLF-এর সঙ্গে এই চুক্তি রাজনৈতিক কৌশলের অঙ্গ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৯৬৪ সালে UNLF-এর প্রতিষ্ঠা করেন এ সমরেন্দ্র সিংহ। মণিপুরের অন্যতম প্রভাবশালী মৈইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল তারা। নয়ের দশকে ভারতের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামের সূচনা ঘটায় তারা। তাদের একটি শাখা সংগঠনও রয়েছে, মণিপুর পিপলস আর্মি।

(Feed Source: abplive.com)