একসময় রাজনৈতিকদের বিরক্তির চোখে দেখা জেজেই এবার ভূমিকা বদলে জনপ্রতিনিধি ! তাও একেবারে বিধায়ক। যাঁর মতে ফুটবল আর রাজনীতির মধ্যে তেমন তফাৎই বা কোথায় ! মিজোরামে ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (MNF) ক্ষমতাচ্যুত করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেছে মিজোরামের প্রাক্তন সাংসদ, তথা প্রাক্তন আইপিএস লালডুহোমার নেতৃত্বাধীন জেডপিএম। মিজোরামের শাসকদলের বিধায়ক হওয়ার পথটা কেমন ছিল ? কেনই বা হঠাৎ নামলেন রাজনীতির মাঠে ? নেতা তথা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঠিক কী কী বদল ঘটাতে চান তিনি ? একাধিক প্রশ্নের অকপট উত্তর দিলেন আই লিগ, আইএসএল থেকে ভারতীয় জাতীয় দলের জার্সি চাপিয়ে দাপিয়ে খেলা জেজে লালপেখলুয়া।
রাজনীতি নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চাই
কোনওরকম রাখঢাক না করেই জেজে বললেন, ‘ভোটে জেতার পরই নেতারা নিজেদের কেমন যেমন ভিআইপি মনে করতে শুরু করে। যা খুব বিরক্ত করত। খানিক বিরক্তই হতাম রাজনৈতিকদের দেখে। তাই রাজনীতিতে নেমে শুরু থেকেই একটাই অঙ্গীকার করেছিলাম, নিজের যেটুকু সুযোগ রয়েছে, তাতে রাজনৈতিকদের এই ভিআইপি কালচার দূর করতে হবে। ভোটে জেতার খবর পাওয়ার পরও নিজেকে প্রথমেই মনে করিয়েছি, নেতাদের খারাপ চোখে দেখার লোকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।’
ভোটের শেষপর্বের গণনা চললেও জেজের বিধায়ক হওয়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সবথেকে বেশি কৃতজ্ঞ আমি দক্ষিণ টুইপুইয়ের মানুষের কাছে। ভোটের প্রচারপর্ব থেকেই কখনই মনে হয়নি আমি নেতা হিসেবে ভোট চাইছি। আমি যে বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষদেরই প্রতিনিধি, এই ভাবনাটা মানুষও বিশ্বাস করেছেন। যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল।’
রাজনীতি-ফুটবলে তফাত কই ! চাপ-প্রত্যাশা তো দু’জায়গাতেই
বিধায়ক হিসেবে কী লক্ষ্য ? ২০১১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য জেজের বক্তব্য, ‘একেবারে নতুন রকম চ্যালেঞ্জের সামনে। দুটো ক্ষেত্র পুরো আলাদা। তবে মানুষ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, সমাজ ও বাসিন্দাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ভোটে লড়তে নামা। ফুটবলার হিসেবেও যাত্রা শুরু এখানেই, এবার কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। আমার মানুষদের জন্য, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই।’
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (Indian Super League) ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা জেজে ভিন্ন ‘মাঠে’ বিচরণ করতে নামলেও খুব একটা তফাৎ দেখছেন না। তাঁর সাফ কথা, ‘ফুটবল আর রাজনীতিতে খুব একটা তফাৎ কই। রাজনীতিতে চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। ফুটবলেও তো দারুণ চাপ নিয়েই মাঠে নামতাম। দেশ হোক বা ক্লাব, মাঠে নামলে প্রত্যাশার চাপ থাকতই, গোল করতে না পারলে তো সমালোচনা শুনতেই হত। রাজনীতির ক্ষেত্রেও কি খুব তফাৎ রয়েছে ? এখানেও তো মানুষের প্রত্যাশাপূরণ করার কাজেই নামব। সবটা দিয়েই যে কাজটা করতে চাই।’
ফুটবলার-রাজনৈতিক বন্ধু
ফুটবলের মাঠ ছেড়ে অনেক প্রাক্তন ফুটবলারই নেমেছেন রাজনীতির মাঠে। তাঁদের থেকে কি শুভেচ্ছাবার্তা বা কোনও পরামর্শ পেয়েছেন ? জানতে চাইলে খানিক হেসে ফেলে জেজে জানান, ‘না সেভাবে কারোর সঙ্গে কথা হয়নি। ইউজিন (ইউজিনসন লিংডো) আমার বন্ধু, এখন মেঘালয়ের বিধায়ক ও। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় আমাদের। তবে রাজনীতির আলোচনা খানিক কমই হয়। তবে কীভাবে মানুষের কাজে আসতে পারি, তা নিয়ে অনেক আলোচনাই হয়।’
জাতীয় পর্যায়ে প্রায় ১৫ বছরের লম্বা ফুটবল কেরিয়ার। ২০২১-‘২১ মরশুমে শেষবার খেলেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। অবসর নেওয়ার পর হঠাৎ কীভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ? এক নিঃশ্বাসে জেজে বলেন, ‘অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না। পরিবার, ছেলের সঙ্গে ভালই সময় কাটাচ্ছিলাম। তবে মিজোরামের পরিস্থিতি দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, কিছু বদল দরকার। আগের সরকার কাজ করেনি এমনটা নয়, তবে আরও গতিতে আরও বেশি মানুষের পরিষেবা প্রাপ্য। তাই নতুনভাবে নিজের মানুষদের পাশে থাকতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ। জোরাম পিপলস পার্টি যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ চালাচ্ছিল, মনে হয়েছিল এই দলই আমাদের রাজ্যে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। আগে সত্যি বলতে রাজনীতিতে যোগের কথা ভাবিনি। ‘
লালডুহোমায় আস্থা
ইন্দিরা গাঁধীর নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানো প্রাক্তন আইপিএস লালডুহোমা হতে চলেছেন মিজোরামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করার পাশাপাশি তাঁর ডাকেই যে ভোটের ময়দানে নামা, সেটাও সাফ স্বীকার করে নিলেন জেজে লালপেখলুপয়া। মোহনবাগান, চেন্নাইয়িন এফসিতে খেলা জেজে বলেছেন, ‘দারুণ এক মানুষ লালডুহোমা। ওঁর ডাকেই রাজনীতিতে যোগ দিই। যখন ফুটবলার ছিলাম, তখন থেকে মাঝেমধ্যে কথা হত। উৎসাহ দিতেন বরাবর। ওঁর ব্যক্তিত্বে বরাবরই মুগ্ধ হই। দীর্ঘদিন ধরে মিজোরামের মানুষের কথা ভাবছেন লোকটি। তাই অবসর নেওয়ার পর যখন নিজেদের লোকের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ডাক উনি দিলেন, তা আর ফেলতে পারিনি। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা সেভাবে কোনওদিনই ছিল না। লালডুহোমা স্যরের কথাতেই নতুন পথ চলতে নামা। আর এই মুহূর্তে মিজোরামের মানুষের ওঁর মতোই কোনও নেতার দরকার।’
(Feed Source: ndtv.com)