ঐতিহ্যবাহী বিহু পরব দোরগোড়ায় হাজির, লোকসংস্কৃতির এক অনন্য নজির এই উৎসব

ঐতিহ্যবাহী বিহু পরব দোরগোড়ায় হাজির, লোকসংস্কৃতির এক অনন্য নজির এই উৎসব

মাঘ মাসের বিহু পরব আসামের এক ঐতিহ্যশালী লোকসংস্কৃতি। মূলত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলে ফসল কাটার এই উৎসবটি বিহু পরম নামে পরিচিত। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে এই বিহু পরবকে মাঘ বিহু বা ভোগালী বিহু নামেও ডাকা হয়। ফসল কাটার মরশুমের শেষে এই বিহু উৎসব পালিত হয়, যা ভারতবর্ষের দীর্ঘদিন ধরে লালিত কৃষিভিত্তিক সমাজেরই সাংস্কৃতিক প্রতিফলন। বিহু পরব বাংলার পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের প্রথম দিনে উদযাপিত হয়। আসামে এই বিহু পরবটি তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, পাঞ্জাবে লহরি, এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।

বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে এই আঞ্চলিক পরবগুলি আজও দেশের বহুত্ববাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিহু পরবে সাধারণত কৃষির ঈশ্বর বা পূর্বপুরুষদের ধন্যবাদ জানান আসাম অঞ্চলের মানুষ। মূলত অহমিয়াদের উৎসব হিসাবে এই বিহু পালিত হলেও বর্তমানে সেই অঞ্চলের বাঙালি এবং অন্যান্য জাতির মানুষও এই উৎসবের অংশগ্রহণ করেন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার প্রতিবেশীর সঙ্গে নতুন ধান কাটার উদযাপন করেন। পরব উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী অসমিয়া খাবার এবং মিষ্টি তৈরি করা হয়। ভেলাঘর নামে একটি অস্থায়ী কুটির তৈরি করা হয়, যেখানেই হয় রান্না। পুরাতনের চিহ্ন মুছে দিয়ে নতুন আবাহনকেই বোঝানো হয় উৎসবের মাধ্যমে।

আসুন এবার দেখে দেওয়া যাক এই বছর বিহু উৎসব ঠিক কবে পড়েছে। মাঘ বিহু বা ভোগালী বিহু এই বছর পড়েছে ১৬ জানুয়ারি। সংক্রান্তির শুভ মুহুর্তে ১৫ জানুয়ারি সকাল ২:৫৪ মিনিটে লাগবে এই বিহু পররের তিথি। অন্যদিকে চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ওপর নির্ভর করে মাঘ বিহুর তারিখ বছরের পর বছর পরিবর্তিত হতে পারে। আসামের কৃষি সংস্কৃতির মধ্যে এই উৎসবটির শিকড় রয়েছে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিহু উৎসবের প্রচলন বলে মনে করা হয়। যখন এই অঞ্চলের উপজাতিরা ফসলের উন্নতির জন্য আগুন জ্বালাত, সেই থেকেই উৎসবের সূচনা বলে মনে করা হয়। ডিমসা কাচারিস উপজাতি এই উৎসবের প্রথম পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করেন সেই অঞ্চলের মানুষ।

এই উৎসবে ভেলাঘর তৈরি সঙ্গে সঙ্গে মেরিজি তৈরি করে তা পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা আসলে পুরনো চিহ্ন পুড়িয়ে দিয়ে নতুনকেই আবাহন করে। এছাড়াও এই বিহু উপলক্ষে সাধারণ মানুষ খুব ভোরে উঠে স্নান করেন এবং মহিষের লড়াই-এর মত ঐতিহ্যবাহী খেলায় মাতেল। অনেক সময় মোরগের লড়াইও এই পরবে দেখা যায়। নাড়ু কিংবা নারকেলের বিভিন্ন মিষ্টি এই পরবে দেখতে পাওয়া যায়। তিল কিংবা নারকোলের লাড্ডু আমরা দেখতে পাই এই আসমিয়া উৎসবে। আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন আঞ্চলিক লোকসংস্কৃতিগুলি থেকেই পাওয়া যায় দেশের মাটির সোঁদা গন্ধ। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বাস্তবতায় লোকসংস্কৃতিগুলি সম্প্রীতি-ভাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

(Feed Source: hindustantimes.com)