ঝিলম করঞ্জাই ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : রাজ্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির সংরক্ষিত আসনে ভর্তিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপুরের এক ছাত্রীর করা মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে FIR রুজু করেছে সিবিআই। MBBS-এর সংরক্ষিত আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি কীভাবে সম্ভব ? কতটাই বা ব্যাপ্তি এই অভিযোগের ?
রাজ্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির সংরক্ষিত আসনে ভর্তিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে CBI তদন্তের নির্দেশ নিয়ে হাইকোর্টের ইতিহাসে বেনজির সংঘাত তৈরি হয়েছে। যার জেরে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে শনিবার মামলার শুনানি হবে। কিন্তু, MBBS-এর সংরক্ষিত আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি কীভাবে সম্ভব ?
কতটাই বা ব্যাপ্তি এই অভিযোগের ? দুর্গাপুরের এক ছাত্রীর করা মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে FIR রুজু করেছে সিবিআই। আলিপুর কোর্টে সিবিআই আদালতের বিচারকের কাছে সেই এফআইআর জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
পশ্চিমবঙ্গে MBBS-এ ভর্তির ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ আসন অসংরক্ষিত বা সাধারণ প্রার্থীদের জন্য থাকে। বাকি ৫৮ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে OBC A, OBC B, SC, ST, বিশেষভাবে সক্ষম এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের জন্য। সিবিআইয়ের করা FIR-এ উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁরা প্রকৃত সংরক্ষিত আসনে ভর্তি হওয়ার যোগ্য তাঁদের জায়গায় ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে অনেকে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। ভুয়ো সার্টিফিকেটকে আসল হিসেবে সই করা হচ্ছে। এবং সরকারি কর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি করছেন।
MBBS-এ ভর্তিতে আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত, কোনও সংরক্ষিত ক্ষেত্রের প্রার্থীকে মোট তিনবার তাঁদের শংসাপত্র বা তাঁর প্রতিলিপি দেখাতে বা জমা করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অনিয়মটা হচ্ছে কীভাবে ? এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসেস ডক্টরস-এর যুগ্ম সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “এই সময়টাতে এরকম সংরক্ষিত আসনে পড়ছেন, ভর্তি হয়েছেন এরকম ছাত্র-ছাত্রী হচ্ছেন ২৬০০ থেকে ২৮০০ মতো প্রত্যেক বছর। তাহলে এরকম যদি ১০ বছর ধরি, তাহলে তার সংখ্যাটা হচ্ছে ২৬ হাজার থেকে ২৮ হাজার যাঁরা সংরক্ষিত বা সংরক্ষণ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ভর্তি হয়েছেন। সত্যিই যদি তদন্তটা করতে হয় তাহলে এতজনের ডকুমেন্ট আমাদের ভেরিফাই করার দরকার আছে ।”
অর্থাৎ, বাংলায় প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ জন সংরক্ষিত প্রার্থী MBBS-এ ভর্তি হন। সেক্ষেত্রে গত দশ বছরে, সংরক্ষিত আসনে প্রায় ২৮ হাজার প্রার্থী MBBS–এ ভর্তি হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে সিংহভাগই এখন চিকিৎসক ! উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনেক সময় জাল সার্টিফিকেট এমন করে নিয়ে আসে যে সেটা জাল না অরিজিনাল সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। এটা দুটো হতে পারে। এক, ওই অফিসে প্রভাব খাটিয়ে যিনি একটি জাল সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। অথবা, তিনি একেবারেই একটা জাল কাগজ জমা করছেন। সেটাও হতে পারে। সবটাই কখনোই কোনও একজন প্রার্থীর একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। যদি না দুর্নীতির একটা চক্র এর মধ্যে থাকে। একা কারও পক্ষে এরকম একটা কাগজ জোগাড় করা সম্ভব নয়। ”
শুধু ভর্তির ক্ষেত্রেই নয়, পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসক মহলের একাংশের ! মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, “ওভারঅল মেডিক্যাল এডুকেশনের যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটা আটকাতে গেলে টপ টু বটম, এটা আলাদা করে কোনও রাজ্য বা সরকারের ব্যাপার নয়, ওভারঅল বিভিন্ন রাজ্যে যে দুর্নীতি শুরু হয়েছে, আসন কেনা-বেচা, সিট ফাঁকা থাকলে সেটা টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া, এই জিনিসগুলো প্রচণ্ড হারে হচ্ছে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের সিটও কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আরও বেশি ক্ষতিকর। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। ”
সিবিআইয়ের FIR-এ অজ্ঞাতপরিচয় প্রার্থী, রাজ্য সরকারের অজ্ঞাতপরিচয় কর্মচারী এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, জাল নথি ব্যবহার, জালিয়াতি-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ভবিষ্যতে কী তথ্য সামনে আসে, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।
(Feed Source: abplive.com)