বিশ্বে প্রথম নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড ! কী এটি

বিশ্বে প্রথম নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড ! কী এটি

কলকাতা: প্রায় ৩০ বছর আগে একটি খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কেনেথ ইউগেন স্মিথ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য আলাবামার আদালতে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সেই নিয়েই এবার উত্তাল গোটা বিশ্ব। কারণ প্রশ্ন উঠেছে মৃত্যুদন্ডের পদ্ধতি নিয়ে। মৃত্যুদন্ডে কার্যকর করতে কেনেথকে নাইট্রোজেন গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে দেওয়া হয়। আর এই পদ্ধতি কতটা আইনসম্মত তা নিয়েই বিতর্ক।

কীসের জন্য মৃত্যুদন্ড কেনেথকে ?

১৯৮৮ সালে ৪৫ বছরের মহিলা এলিজাবেথ সেনেটকে হত্যা করেন স্মিথ। এর জন্য় তাকে ও জন পার্কারকে সুপারি দেয় এলিজাবেথ সেনেটর স্বামী। ঋণে জর্জরিত ওই ব্যক্তি স্ত্রী-এর ইনস্যুরেন্সের টাকা পাওয়ার জন্য এক হাজার ডলারের সুপারি দেয়। সেই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় স্মিথ ও পার্কার। পার্কারকে এর আগেই মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল আলাবামায়।

কী নিয়ে বিতর্ক ?

১৯৮২ সালের পর থেকে লেথাল ইনজেকশন মারফত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রথম সেই নিয়ম ভঙ্গ করে একটি অপরীক্ষিত উপায়ে অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হল। আর এই নিয়েই উত্তাল সারা বিশ্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, নৃশংস ও অস্বাভাবিক মৃত্যুদন্ড দেওয়া নিষিদ্ধ। নয়া পদ্ধতি নৃশংস বলেই দাবি করা হচ্ছে। কারণ গোটা প্রক্রিয়াটি ২২ মিনিট ধরে চলেছে। মৃত্যুদন্ড দেওয়ার সময় অপরাধী যন্ত্রণায় অস্থির ছিল। লেথাল ইনজেকশন নিয়ে সমস্যার কারণে নয়া পদ্ধতির খোঁজ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। অবশেষে স্মিথকে গিনিপিগ বানিয়ে তার প্রয়োগ করল আলাবামা।

নাইট্রোজেন গ্যাসের মৃত্যুদন্ড (Nitrogen gas execution) কেন ভয়ঙ্কর ?

আমাদের পৃথিবীর ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন গ্যাসে পূর্ণ। এই গ্যাস ফুসফুসের মধ্যে গেলে শরীরে অক্সিজেন কমতে শুরু করে। একে হাইপোক্সিয়া বলে। মৃত্যুদন্ডের এই পদ্ধতিকে নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া বলা হচ্ছে। যদিও এটি কোনও বৈজ্ঞানিক নামকরণ নয়। কারণ প্রক্রিয়াটিই এই প্রথম প্রয়োগ করা হল।

কীভাবে কার্যকর হয় এই মৃত্যুদন্ড ?

অপরাধীকে একট মাস্ক পরিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। স্মিথকে একটি বেডের উপর বেল্ট দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২২ সালে স্মিথকে লেথাল ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এবারেও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে পরীক্ষামূলকভাবেই এই গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। আগে থেকে পর্যাপ্ত অনুমতি না থাকায় এই পদ্ধতি আইনি বিতর্ক তুলে দিয়েছে।

লেথাল ইনজেকশন নিয়ে কী সমস্যা ?

লেথাল ইনজেকশনে তিন ধাপে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। প্রথম ধাপে অপরাধীকে অজ্ঞান করা হয়। পরের ধাপে তাঁর পেশিগুলিকে নিস্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপ হার্ট বন্ধ করে দেয় শেষ ইনজেকশন। দাবি, এই পদ্ধতিতে ব্যথা অনুভূত হয় না ও দ্রুত মৃত্যু হয়।

কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নয়া আইন ওষুধের সংস্থাগুলিকে এই ইনজেকশন উৎপাদন করতে বারণ করেছে। অপরাধীরা জেলের ভিতর যাতে নিজেদের কিছু করতে না পারে, তার জন্য এই ব্যবস্থা। সেই থেকেই এই ইনজেকশনের জোগান কমে গিয়েছে। ফলে খোঁজ শুরু হয়েছে নতুন মৃত্যুদন্ড পদ্ধতির।

(Feed Source: abplive.com)