প্রথম চেষ্টায় IAS হয়েও পদত্যাগ! তার পরও বিকাশ দিব্যকীর্তি পড়ুয়াদের আইডল, কেন ?

প্রথম চেষ্টায় IAS হয়েও পদত্যাগ! তার পরও বিকাশ দিব্যকীর্তি পড়ুয়াদের আইডল, কেন ?

কলকাতা: ইউপিএসসি পরীক্ষা পাশ করেছিলেন প্রথম বারের চেষ্টাতেই। অন্যতম কঠিন এই পরীক্ষা খুব কম প্রার্থীই একবারে পাশ করতে পারেন। সেই পরীক্ষা পাশ করা মানে একরকম হাতে চাঁদ পাওয়া। সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতেও যোগ দিয়েছিলেন‌‌। কিন্তু সেই চাকরি আর করতে চাননি। ছেড়ে দেন কিছুদিনের মধ্যেই। দেশ চালানোর কলকবজার বাইরে এসে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। আইএএস পরীক্ষার কোচিং সেন্টারের নাম রাখেন দৃষ্টি আইএএস। তাঁর নাম বিকাশ দিব্যকীর্তি। হরিয়ানার এই ব্যক্তির নামের সঙ্গে আইএএস কোচিং বিষয়টি প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

প্রথম জীবনে অধ্যাপক!

বিকাশ দিব্যকীর্তির (Vikas Divyakirti) জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর। হরিয়ানার বিকাশ ভিয়ানায় সরস্বতী শিশু মন্দিরে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। এর পর গ্রাজুয়েশন পাশ করেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জাকির হুসেন কলেজ থেকে। প্রথম জীবনে তিনি একজন অধ্যাপকের পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। কিন্তু এর পরেই সিদ্ধান্তে বদল আসে।

আইএএস হয়েও পদত্যাগ !

ইউসিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন বিকাশ। ১৯৯৬ সালে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পাশ করেন বিকাশ। এর পর এক বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেই পদত্যাগ। বেরিয়ে এসে এক বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে দৃষ্টি আইএএস কোচিং সেন্টার শুরু করেন। বর্তমানে আইএএস কোচিং সেন্টার হিসেবে সারা ভারতে খ্যাতি এই দৃষ্টি আইএএস-এর (Drishti IAS)। 

পড়ুয়া বিকাশ !

ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী বিকাশ দিব্যকীর্তি। স্কুল ও কলেজ পাশ করার পর তাই পড়াশোনার পথেই চলে আসেন। সেখানে এসেও ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরি ছেড়ে ফের পড়াতে চলে আসেন। এর মাঝে হিন্দি ভাষায় পিএইচডি করেছেন বিকাশ। এছাড়াও আইন, সমাজবিদ্যা, দর্শন ও ম্যানেজমেন্ট নিয়েও পড়াশোনা রয়েছে তাঁর। একদিকে তিনি যেমন মেধাবী পড়ুয়া, তেমনই অন্যদিকে জনপ্রিয় শিক্ষকও।  

পড়ানোর অভিনব কায়দা !

বিকাশ দিব্যকীর্তির ছাত্রছাত্রীদের কথায়, স্যর ক্লাসে বেশ মজা করেই পড়ান। পড়ার মাঝে মাঝে হালকা ইয়ার্কি ঠাট্টা করতে ভালবাসেন। অভিনব কায়দায় পড়াতে ভালবাসেন তিনি। কিন্তু কেন? এবিপি লাইভের একটা অনুষ্ঠানে সে কথার উত্তর দিয়েছিলেন বিকাশ। তাঁর কথায়, যে কারওর যেকোনও বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। যাঁরা পড়াশোনা অর্থাৎ অ্যাকাডেমিকস নিয়ে থাকেন , তাদের মনোযোগের সময় ৪০-৪৫ মিনিট মতো হয়ে থাকে। এদিকে আইএএস-এর ক্লাস গুলি অন্তত ৩ ঘন্টা করে নেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময় পড়ুয়াদের মনোযোগ ধরে রাখতে রিফ্রেশ করতে হয় বলে জানান বিকাশ। তাই আইএএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস হলেও হালকা চালে পড়ান তিনি। 

তবে ইয়ার্কি ঠাট্টা মারার সময় খেয়াল রাখতে হয় বিষয় থেকে যেন অনেকটা সরে না যায় কেউ। সেদিকটাও মাথায় রাখেন বিকাশ দিব্যকীর্তি।‌

পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ !

দীর্ঘ দিনের শিক্ষক বিকাশ দিব্যকীর্তি পড়ুয়াদের বেশ কয়েকটা পরামর্শ দেন এবিপি লাইভের অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘জীবনটাকে এত জটিল হিসেবে নেওয়া ঠিক নয়। দিনে আট ঘন্টা পড়াশোনা করার পর আট ঘন্টা ঘুমোতে হবে‌। বাকি আট ঘন্টা নিজের মতো মজা করে কাটাতে পারেন পড়ুয়ারা। এটুকু ঠিকমতো রোজ করতে পারলে আইএএস পরীক্ষায় সফল হওয়া কঠিন নয়। এর পাশাপাশি তিনি পরামর্শ দেন, সপ্তাহে অন্তত একটা করে সিনেমা দেখা উচিত‌‌। বন্ধুদের সঙ্গে অন্তত এক ঘন্টা গল্প করা উচিত। এতে সামাজিক স্কিল বাড়ে। সমাজে কীভাবে মেলামেশা করতে হয় তা শেখা যায়। 

অভিভাবকদের মূল্যবান পরামর্শ !

এবিপি লাইভের অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন বিকাশ। বাবা-মায়ের উপর সারা সমাজের চাপ থাকে। একথা তিনি স্বীকার করে নেন। তবে এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে সন্তানদের দিকটাও। বিকাশ দিব্যকীর্তির কথায়, সন্তানদের উপর সমাজের সব চাপটা চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। তেমনটাই যদি করতে হয়, তাহলে আর অভিভাবকদের কী দায়িত্ব! এই কথার মাধ্যমে সন্তানদের পাশে থাকার পরামর্শ দেন বিকাশ‌।

(Feed Source: abplive.com)