ফের যুদ্ধের মেঘ পশ্চিম এশিয়ার আকাশে, ইরাক-সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ আমেরিকার

ফের যুদ্ধের মেঘ পশ্চিম এশিয়ার আকাশে, ইরাক-সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ আমেরিকার

নয়াদিল্লি: ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছেই। সেই আবহেই নতুন করে তেতে উঠছে পশ্চিম এশিয়া। ইরাক এবং সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ করল আমেরিকা। জর্ডানের প্রত্যন্ত এলাকায় সম্প্রতি আমেরিকার সৈনিকদের একটি ঘাঁটিতে সম্প্রতি ড্রোন হামলা হয়, তার বদলা নিতেই ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি আমেরিকার। (US Airstrikes)

আমেরিকার সেন্ট্রাল কম্যান্ড জানিয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) কুদস ফোর্স এবং তাদের সঙ্গে সংযুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে নিশানা করে আঘাত হানা হয়েছে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৮৫ জায়গায় বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে বলে খবর। আঘাত হানা হয়েছে, কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অপারেশন্স- সেন্টার, গুপ্তচর সেন্টার, ক্ষেপণাস্ত্র সেন্টার, ড্রোন সেন্টার এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের ভাণ্ডারে। (Airstrikes in Syria-Iraq)

এখনও পর্যন্ত এই হামলায়, পূর্ব সিরিয়ায় ১৮ জন ইরান সমর্থিত যোদ্ধার মৃত্য়ু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিরিয়ার পূর্বে, ইরাক সীমান্ত সংলগ্ন দির-ইজ-জোর থেকে আলবু কামাল পর্যন্ত ২৬টি বসতি এলাকা এবং অস্ত্রভাণ্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। আমেরিকার জয়েন্ট স্টাফ অপারেশন্সের ডিরেক্টর, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস সিমস জানিয়েছেন, একেবারে সঠিক জায়গায় আঘাত হানা গিয়েছে।

ইরাকি সেনার মুখপাত্র ইয়াহিয়া রসুল জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। আমেরিকার এই পদক্ষেপে ওই অঞ্চলের স্থিতাবস্থা নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “ইরাকের সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়েছে আমেরিকার এই হামলায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের সরকার। কিন্তু  এই হামলার ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।”

ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে নিশানা করা হয়েছে বলে যদিও জানিয়েছে আমেরিকা, তবে ইরানে হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছে তারা। পেন্টাগনের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অভিসন্ধি নেই আমেরিকার। বলা হয়েছে, গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে আমেরিকার ঘাঁটিতে যে হামলা হয়, ইরানের তরফেই অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। ওই হামলায় আমেরিকার তিন সৈনিকের মৃত্যু হয়। আহত হন ৪০ জনেরও বেশি। তার পরও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে আগ্রহ নেই আমেরিকার।

ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু পর আড়াআড়ি বিভক্ত আন্তর্জাতিক মহল। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলকেই সমর্থন জানিয়ে আসছে আমেরিকার, যার বিরুদ্ধে সরব ইরান। এর আগে আমেরিকাকে হুঁশিয়ারিও দেয় তারা। ইরানের ভূখণ্ডের কোথাও আঘাত হানলে আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে তারা। তার পরই ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীদের নিশানা করে ইরাক এবং সিরিয়ায় হামলা চালাল আমেরিকা।

সব মিলিয়ে ইরাক এবং সিরিয়ায় ৩০ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে বলে ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।  হামলা চালাতে B-1 বোমাবর্ষণকারী বিমান ব্যবহার করা হয়। এর আগে, বাগদাদে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। সেই সময়ই সমস্ত বিদেশি বাহিনীকে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী  মহম্মদ শিয়া আল সুদানি। এই হামলার পর আমেরিকার নিন্দা করেছেন তিনি।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা এবং তাদের শরিকরা ১৬৫ বারেরও বেশি বার ইরাক, সিরিয়া এবং জর্ডানে হামলা চালিয়েছে। কখনও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, কখনও রকেট কখনও আবার স্বল্প দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তারা। এই পরিস্থিতিতে, ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন হুথিও সক্রিয় হয়েছে। গত ক.য়েক মাসে জলপথে একাধিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে তারা। তাদের লক্ষ্য করেও হামলা চালায় আমেরিকা এবং ব্রিটেন।

(Feed Source: abplive.com)