মাধ্যমিকের সবচেয়ে আলোচিত পরীক্ষাটি ছিল আজ বৃহস্পতিবার। এটি অঙ্ক পরীক্ষা। অনেকের কাছেই অঙ্ক হল সবচেয়ে কঠিন বিষয়। এবারের অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও কি তেমনই কঠিন হয়েছে? তাই নিয়ে হিন্দুস্তান বাংলা মুখোমুখি হয়েছিল অভিজ্ঞ শিক্ষকদের।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা নিয়ে বহু পড়ুয়াই বেশ টেনশনে ছিল। পরীক্ষার সূচিও সেভাবেই বানানো হয়েছিল পর্ষদের তরফে। ভূগোল পরীক্ষা ছিল মঙ্গলবার। তার পরের দিন ছুটি। তার পরে অঙ্ক পরীক্ষার। ছুটি পেয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার্থীরা যাতে অঙ্ক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে, তার ব্যবস্থা ছিল। তার পরে পরীক্ষা কেমন হল? দেখে নেওয়া যাক প্রশ্নপত্রের রিভিউ।
শিক্ষকদের রিভিউ
কলকাতা পাঠভবন স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সুমিত ভট্টাচার্য এবারের মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে বলেন, প্রশ্নপত্রটির গুণগত মান খুবই উন্নত হয়েছে। একজন পড়ুয়ার অঙ্ক সম্পর্কে কতটা জ্ঞান আছে, তা যেমন এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে সহজেই প্রতিফলিত হবে, তেমনই গোটা দশম শ্রেণীর অঙ্কের পাঠ্যসূচি সম্পর্কেও তার কেমন ধারণা— সেটিও স্পষ্ট হবে। তাঁর কথায়, ‘এবারের প্রশ্নপত্রটি দেখে প্রথমেই বলার, আমরা শিক্ষক হিসাবে সারা বছর ক্লাস করানোর সময়ে ছাত্রছাত্রীদের যে প্যাটার্নের প্রশ্ন অনুশীলন করিয়ে যাই, যে যে দিকগুলি নির্দেশ করি, যে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দিতে বলি, পর্ষদ ঠিক সেই সেই বিষয়েই জোর দিয়েছে।’ আগামী দিনে অঙ্ক সম্পর্কে পড়ুয়াদের আকর্ষণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই ধরনের প্রশ্নপত্র ভালো ভূমিকা নেবে বলেও মত তাঁর। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, যাঁরা ঘণিতের প্রতি আগ্রহী বা গণিত নিয়ে আগামী দিনে পড়াশোনা করতে চায়, এমন পড়ুয়াদের জন্যও এই প্রশ্নপত্র খুব ভালো বলে মনে করছেন সুমিতবাবু। আরও একটি বিষয়ের কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘এই প্রশ্নপত্রে যে যে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, তার অনেকগুলিই বাস্তব জীবনে বেশ প্রয়োগমূলক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনেই প্রশ্ন নির্বাচন করা হয়েছে। এজন্য পর্ষদকে ধন্যবাদ দিতেই হবে।’
ডায়মন্ড হারবার হাই স্কুলের সহ শিক্ষক সমীর কুমার দাসের মতে, পর্ষদ নির্ধারিত নম্বর বিভাজনে অধ্যায় মেনে প্রশ্ন হয়েছে। তবে তাঁর কথায়, ‘প্রশ্নপত্র সাধারণ ছাত্রছাত্রীর জন্য শক্ত হয়েছে। ১ নম্বরের MCQ, শূন্যস্থান পূরণ ও ২ নম্বরের কিছু প্রশ্ন শুধুমাত্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই পারবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এই প্রশ্নগুলি কঠিন লাগতে পারে। যেমন : 1 (iv) ও (Vi), 3) ⅰ), (iv), (vi ), (vⅵ) পাঠ্যবইয়ে সরাসরি নেই। ভেদ ও করনীর অঙ্কও পাঠ্যবইয়ে সরাসরি নেই।’ পরিমিতির অঙ্ক লেংদি হয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।
ডায়মন্ড হারবার হাই স্কুলের সহ শিক্ষক এবং গণিতের মাস্টারমশাই রাজেন্দ্রনাথ গরাইয়ের মতে, প্রশ্নপত্র খুব ভালো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এবারের পরীক্ষায় ত্রিকোণমিতি ও স্টাটিসটিক্স (সংখ্যাতত্ত্ব)-এর উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন মোটামুটি ঠিকঠাকই হয়েছে। অনেকেই ভালো পরীক্ষা দিতে পারবে, আশা করা যায়।’
কেমন নম্বর উঠতে পারে
সমীরকুমার দাসের কথায়, ‘এবার ১০০ নম্বর অর্থাৎ পূর্ণমান পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমবে। বেশ কিছু সাধারণ ছাত্রছাত্রী ৫০ শতাংশের নীচেও নম্বর পেতে পারে।’ এবারের প্রশ্নপত্র দেখে তাঁর মত, ১০০-এ ১০০ তোলাটা ভালো পড়ুয়াদের জন্য কঠিন হবে না। একটু ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিতে পারলেই পূর্ণমান সহজে পাওয়া যাবে। কিন্তু মাঝারি মানের পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমস্যা হতে পারে। তাঁর বক্তব্য, ‘মোটের উপর বিষয়ের গভীরতা থাকলে তবে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। না হলে নয়। তাই এটি সাধারণ ছাত্রছাত্রীর জন্য কঠিন হয়েছে।’
রাজেন্দ্রনাথ গরাইয়ের মতে, ‘ছাত্রছাত্রীরা ৯০ এর মধ্যে ৬৫ নম্বর সহজেই তুলতে পারবে। এর বাইরে ভালো পড়ুয়ারা ভালো নম্বর পাবেই। সেটি নিয়ে সন্দেহ নেই।’
সুমিত ভট্টাচর্যের মতে, ‘প্রতিটি অধ্যায় থেকে নিয়ম মেনে প্রশ্ন করা হয়েছে। ফলে যে সব ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর নির্দিষ্ট সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্কগুলির অনুশীলন করেছে, তারা এই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবে বলেই আশা করা যায়।’
যে প্রশ্ন নিয়ে চর্চা সবচেয়ে বেশি
মাধ্যমিকের অঙ্কের প্রশ্নে সুদের অঙ্ক অনেককেই ঝামেলায় ফেলে। এবারেরও পাটিগণিতের এই বিভাগে দু’টি প্রশ্ন এসেছে। করতে হয়েছে, তার মধ্যে যে কোনও একটি। প্রশ্ন দু’টি হল:
১। গোবিন্দবাবু কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেওয়ার সময় 5,00,000 টাকা পেলেন। ওই টাকার কিছুটা ব্যাঙ্ক ও বাকিটা পোস্ট অফিসে জমা রাখেন। প্রতি বছর সুদ বাবদ 33,600 টাকা পান। ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে বার্ষিক সরল সুদের হার যথাক্রমে 6% ও 7.2%। তিনি কোথায় কত টাকা রেখেছিলেন তা নির্ণয় করো।
২। আমন 25,000 টাকা 3 বছরের জন্য এমনভাবে ধার করলেন যে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃত্বীয় বছরে বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি সুদের হার যথাক্রমে 4%, 5% ও 6%, 3 বছরের শেষে আমন সুদে আসলে কত টাকা জমা দেবে ?
কী বলছে পড়ুয়ারা
এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের তরফে পরীক্ষাফেরত ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হয় এবারের মাধ্যমিকের অঙ্কের প্রশ্নপত্রের সম্পর্কে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরই জবাব ছিল, এবারের প্রশ্ন মোটামুটি সহজ হয়েছে। এবং অনেকেই ভালো নম্বর পাবে বলে আশা করছে। আগের বছরের অঙ্ক পরীক্ষা নিয়ে নানা রকম সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এবারে তেমন কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি। বরং পড়ুয়াদের দাবি, এবারে অধিকাংশ প্রশ্ন জানার মধ্যে এসেছে। কেউ কেউ অবশ্য বলেছে, কয়েকটা প্রশ্ন সামান্য ঘুরিয়ে হয়েছে।
(Feed Source: hindustantimes.com)