পাঁচ দশকের সমঝোতায় ইতি, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে বসছে কাঁটাতার, জানালেন শাহ

পাঁচ দশকের সমঝোতায় ইতি, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে বসছে কাঁটাতার, জানালেন শাহ

নয়াদিল্লি: ঘোষণা হয়েছিল আগেই। এবার ভারত-মায়ানমার সীমান্ত বন্ধ করতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ১৪৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-মায়ানমার সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়া বসানো হবে। কড়া নজরদারি চলবে সেখানে। তুলে নেওয়া হবে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ফ্রি মুভমেন্ট রেজিমে (FMR),  যার আওতায় এতদিন ভারতের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতিগত সংযোগ থাকা পড়শি দেশের মানুষজন, ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারতেন। (India-Myanmar Border)

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন শাহ। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘দেশের সীমান্ত নিরাপদ রাখতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কার্যকর থাকা Free Movement Regime প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় থাকে এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার কাঠামো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক FMR প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে, সেই মতো কাজ করছে বিদেশমন্ত্রক’। (India Myanmar Relations)

সাম্প্রদায়িক হিংসা, অশান্তির জেরে লাগাতার উত্তপ্ত  মায়ানমার। প্রাণহানি এড়াতে সীমান্ত পেরিয়ে দলে দলে তাই মায়ানমার থেকে মানুষজন ভারতে প্রবেশ করছেন। সম্প্রতি মায়ানমার সেনার একটি দলও ভারতে ঢুকে আসে। সেই আবহে জানুয়ারি মাসেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মতো, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কথা জানান শাহ। অসমে পুলিশ কম্যান্ডোদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কথা জানান তিনি। এবার সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হল।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে মায়ানমার থেকে কমপক্ষে ৬০০ সেনা ভারতে প্রবেশ করেছেন। মায়ানমারের পশ্চিমের রাখিন প্রদেশের আরাকান সশস্ত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে, সম্প্রতি মিজোরামের লংতলাই জেলায় এসে আশ্রয় নেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাই মায়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র।

এমনিতে ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে Free Movement Regime (FMR) চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ভারতের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতিগত সংযোগ রয়েছে পড়শি দেশের যে সমস্ত মানুষের, ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারেন তাঁরা। একই ভাবে ভারত থেকেও মায়ানমারে প্রবেশ করা সম্ভব।  তাই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হলে, সেই চুক্তি আর বৈধ থাকবে না। ভারতে ঢুকতে হলে মায়ানমারের নাগরিকদের বৈধ ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখাতে হবে।

অরুণাচলপ্রদেশ থেকে মিজোরাম পর্যন্ত ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ দীর্ঘদিন ধরেই FMR তুলে দিয়ে, সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর আর্জি জানিয়ে আসছিলেন। মায়ানমার থেকে উগ্রপন্থী, বেআইনি অভিবাসী এবং মাদক পাচারকারীরা ওই চুক্তিকে ব্যবহার করে ভারতে ঢুকে পড়ছেন এবং মণিপুরে অস্থিরতা তৈরি করছেন বলে দাবি করেন তিনি। যদিও মিজোরাম সরকার কেন্দ্রকে জানিয়েছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর বিরোধী তারা। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাডুহোমা জানিয়েছেন, ইংরেজ আমলে সীমান্তরেখা টানা হয়। দুই তরফের মানুষজনই কাঁটাতারের ঘোর বিরোধী। কারণ দুই দিকেই পরস্পরের পরিবার, আত্মীয় রয়েছে।  ১৯৭০ সালে FMR চালু করা হয়, যাতে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংযোগ বজায় থাকে।

(Feed Source: abplive.com)