৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই রোগে, আমেরিকায় ফিরেছে ভয়াবহ বিউবনিক প্লেগ

৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই রোগে, আমেরিকায় ফিরেছে ভয়াবহ বিউবনিক প্লেগ

আমেরিকায় আবার এক মহামারির আশঙ্কা। ওরেগন রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে। একজন মানুষের মধ্যে বিরল বিউবনিক প্লেগের সংক্রমণের কথা জানা গিয়েছে। পোষা বিড়াল থেকে এই ব্যাকটিরিয়া আক্রান্তে কাছে পৌঁছেছে বলে মন করা হচ্ছে।

এই রোগীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তাঁর চিকিৎসা করা হচ্ছে। ডেসচুটস কাউন্টি হেলথ অফিসার রিচার্ড ফাউসেট গত সপ্তাহে রোগীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ব্যক্তি এবং তাঁর পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছেন, এমন সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং রোগ আটকানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে।’

কী এই বিউবনিক প্লেগ?

এই বিউবনিক প্লেগ এখন এক বিরল অসুখ। যদিও ইউরোপের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এই রোগে এক সময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই প্লেগ, যা কি না ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামেও পরিচিত। চতুর্দশ শতকে ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে মনে করা হয়, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারিগুলির মধ্যে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। 

যদিও এর পরে এই ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণের হার কমতে কমতে বিরল হয়ে যায়। খুব কমই রিপোর্ট হয়েছে এই রোগের। এবং এখন এটির চিকিৎসাও হতে পারে। তবে, চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখনও এটিকে খুব বিপজ্জনক একটি রোগ হিসাবেই মনে করেন। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রামিত মাছি বা এঁটুলি জাতীয় পোকা থেকে  মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। ইয়ার্সিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া থেকে এই প্লেগ হয়। সেই ব্যাকটিরিয়া মাছি বা এঁটুলির সংস্পর্শে এসে ছড়াতে পারে। ইঁদুর বা কাঠবিড়ালির মতো সংক্রমিত প্রাণীকে যদি বিড়াল খায়, সেখান থেকে বিড়ালটি আক্রান্ত হতে পারে। সেই বিড়ালের থেকে আবার সহজেই মানুষের মধ্যে ছড়ায় এটি।  

এই রোগের কারণে লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে। এমন উপসর্গ থেকেই রোগটির নামকরণ হয়েছে। বগলে, কোমরে এবং ঘাড়ে ডিমের আকারের পিণ্ড তৈরি হয় এর ফলে। যেখান থেকে পুঁজও বার হতে পারে।

বিউবনিক প্লেগের লক্ষণগুলি কী কী?

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সংক্রামিত প্রাণী বা মাছির সংস্পর্শে আসার আট দিন পরে মানুষের মধ্যে এই প্লেগের লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে। এই লক্ষণগুলির মধ্যে জ্বর, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, ঠাণ্ডা এবং পেশি ব্যথা থাকতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে বিউবনিক প্লেগ সেপ্টিসেমিক প্লেগে পরিণত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রক্ত ​​প্রবাহের সংক্রমণ বা নিউমোনিক প্লেগ হতে পারে, যা ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। 

এর পাশাপাশি আর যা লক্ষণ দেখা দিতে পারে, সেগুলি হল:

  • মাথাব্যথা
  • ঠাণ্ডা লাগা
  • হঠাৎ তীব্র জ্বর
  • পেট, বাহু এবং পায়ে ব্যথা
  • লিম্ফ নোডগুলিতে ফোলা (বিউবোস) বা পিণ্ড, যা পুঁজ নিষ্কাশন হওয়া

কীভাবে সাবধান হওয়া যায়?

  • এই প্লেগ প্রতিরোধ করতে, আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখতে পারেন।
  • ইঁদুর বা কাঠবিড়ালি এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীকে আপনার বাড়িতে বা আশেপাশে বসবাস করা থেকে বিরত রাখুন। তাদের লুকaনোর জায়গা বা তাদের খাওয়ার জন্য খাবার ছেড়ে ফেলে রাখবেন না।
  • আপনার পোষা প্রাণীর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে টিকাকরণের ব্যবস্থা করুন। লক্ষ্য রাখুন ওরা যেন ইঁদুরের মতো প্রাণী ধরে না খায়।
  • অসুস্থ পোষা প্রাণীকে অবিলম্বে পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
  • খোলা জায়গায় ঘিরে বেড়ানো পোষা প্রাণীকে আপনার বিছানায় ঘুমোতে দেবেন না।
  • আপনি যদি এমন জায়গায় যান, যেখানে আপনাকে এঁটুলি জাতীয় সংস্পর্শে আসতে হতে পারেন, তাহলে ইইটি বা পারমেথ্রিনযুক্ত পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।

তবে এখনই এই রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে বারণ করছেন বিজ্ঞানীরা। আক্রান্ত ব্যক্তিও এখন চিকিৎসাধীন। রোগটি দ্রুত ধরা পড়ে গিয়েছে বলে ভয়ও কম। তেমন মনে করছেন সকলে। 

(Feed Source: hindustantimes.com)