অনাহারে বিশ্বের ৮০ কোটি মানুষ, বছরে ১০৫ কোটি টন খাবার নষ্ট, জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ

অনাহারে বিশ্বের ৮০ কোটি মানুষ, বছরে ১০৫ কোটি টন খাবার নষ্ট, জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ

নয়াদিল্লি: পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা যদি ৭৮৯ কোটি হয়, তাহলে প্রায় ৮০ কোটি বেশি মানুষ অনাহারে বেঁচে রয়েছেন বলে আগেই পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। এবার আরও উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে আনল রাষ্ট্রপুঞ্জ। প্রতি বছর অন্তত ১০৫ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় বলে জানাল তারা। (Food Waste Index Report 2024)

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ বিভাগের তরফে ২০২৪ সালের খাদ্য বর্জ্য সূচক প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই এই পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। ২০২২ সালেই শুধুমাত্র ১০৫ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। গোটা পৃথিবীতে যত খাবার তৈরি হয়, তার এক পঞ্চমাংশই নষ্ট হয় বলে জানানো হয়েছে। (UN Food Waste Index 2024)

বিশদ রিপোর্টে বলা হয়েছে,  গৃহস্থের বাড়ি, খাদ্য পরিষেবা, খুচরো ব্যবসা মিলিয়ে যত খাবার তৈরি হয়, তার ১৯ শতাংশই নষ্ট হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য এবং কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জমিতে উৎপন্ন ফসল থেকে তৈরি খাবার টেবিলে এসে পৌঁছনো পর্যন্ত নষ্ট হয় ১৩ শতাংশ খাবার।

রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, বর্তমান দিনে গোটা পৃথিবীতেই খাদ্য বর্জ্য অত্যন্ত বড় সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। একদিকে, কোটি কোটি মানুষ অনাহারে দিনযাপন করছেন, আর অন্য দিকে টন টন খাবার নষ্ট হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের গতি যেমন ত্বরান্বিত হচ্ছে, তেমনই জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে এবং বাড়ছে দূষণ।

গৃহস্থের বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি খাবার নষ্ট হয় বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের হিসেব অনুযায়ী, ৬৩ কোটি ১০ লক্ষ টন খাবার নষ্ট হয় গৃহস্থের হেঁশেল থেকে, যা মোট খাদ্য বর্জ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ। খাদ্য পরিষেবা এবং খুচরো ব্যবসায় খাবার নষ্ট হয় যথাক্রমনে ২৯ কোটি এবং ১৩ কোটি ১০ লক্ষ টন করে।

রিপোর্টে মাথাপিছু খাবার নষ্টের পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর একজন ব্যক্তি পিছু ৯৭ কেজি খাবার নষ্ট হয়, যা থেকে অনাহারে থাকা মানুষের প্রতিদিন ১.৩ বারের খাবারের জুটে যাওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র ধনী দেশগুলিতেই খাবার নষ্ট হয় না, মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র দেশগুলিতেও প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। তবে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য বর্জ্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম। উচ্ছিষ্ট খাবার পশু-পাখিদের খাইয়ে দেওয়া হয় বলেই গ্রামের দিকে খাদ্য বর্জ্য তুলনামূলক কম বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষকদের দাবি, খাদ্য বর্জ্য এবং গড় তাপমাত্রার মধ্যে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলিতে তাজা শাক-সবজি খাওয়ার চল বেশি। কিন্তু সেই সব খাবার দীর্ঘদিন রাখা যায় না, নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি, সংরক্ষণ, সরবরাহের সময়ও প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। রেফ্রিজারেটরের অত্যধিক ব্যাবহারে বাড়ে গ্রিন হাউস গ্যাসের। এর ফলে ১০ শতাংশ বেশি গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন ঘটে, যা বিমান পরিষেবার চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি।

রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, মানব সভ্যতার এক তৃতীয়াংশ এই মুহূর্তে খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। অথচ এক পঞ্চমাংশ খাবারই ফেলা যাচ্ছে।খাবার নষ্টের অভ্যাসে রাশ টানতে পারলে অনাহারে থাকা পৃথিবীর ৭৮ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের পেট ভরানো যাবে বলে

(Feed Source: abplive.com)