দেশের চতুর্থ সেরা কলেজ, সেই IIT বম্বের ৩৬% পড়ুয়াই চাকরি পাননি ক্যাম্পাসিং থেকে!

দেশের চতুর্থ সেরা কলেজ, সেই IIT বম্বের ৩৬% পড়ুয়াই চাকরি পাননি ক্যাম্পাসিং থেকে!

নীরজ পণ্ডিত

‘আইআইটি মানেই ক্যাম্পাসিং থেকে দারুণ চাকরি মিলবে’- সত্যিই কি তাই? ২০২৪ সালের ক্যাম্পাসিং ও প্লেসমেন্ট মরশুমে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) আইআইটি (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি) বম্বের ছবিটা দেখলে সেই ধারণাটা কিছুটা পালটে যেতে পারে। কারণ ২০২৪ সালে ক্যাম্পাসিং এবং প্লেসমেন্টের জন্য যতজন নাম নথিভুক্ত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ পড়ুয়া এখনও পর্যন্ত চাকরি পাননি। ২০২৪ সালের ক্যাম্পাসিং নিয়ে আইআইটি বম্বের প্রাক্তনী এবং ‘গ্লোবাল আইআইটি অ্যালুমনাই সাপোর্ট গ্রুপ’-র প্রতিষ্ঠাতা ধীরাজ সিং যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন, সেই তথ্য অনুযায়ী, এবার প্লেসমেন্টের জন্য প্রায় ২,০০০ জন পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ৭১২ জন চাকরি পাননি। তবে সরকারিভাবে মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসিং চলে। ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও পড়ুয়া ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরি পাবেন বলে আশবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।

বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে আইআইটি বম্বের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে এক আধিকারিক দাবি করেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে’ বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘প্রতিষ্ঠানের তরফে আগেভাগেই যে স্যালারি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা মেনে চাকরির প্রদানের প্রস্তাবে রাজি হতে পারছে না অধিকাংশ কোম্পানি। অনেক দরকষাকষির পরে তারা ক্যাম্পাসিংয়ে আসতে রাজি হয়েছে।’

ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য এবার যে ৩৮০টি কোম্পানি এসেছে, সেগুলির মধ্যে অধিকাংশ সংস্থাই মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যবসা চালায়। সাধারণত দেশীয় সংস্থার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক বিদেশি বা আন্তর্জাতিক কোম্পানি ক্যাম্পাসিংয়ে আসে। তাঁর কথায়, ‘কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নথিভুক্ত ১০০ শতাংশ পড়ুয়া প্লেসমেন্ট পাননি – এই প্রথমবার এরকম ঘটনা ঘটল।’

যদিও ২০২৪ সালে যে পরিসংখ্যানটা উঠে এসেছে, সেটা একেবারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০২৩ সালে ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে প্লেসমেন্ট পাওয়ার জন্য আইআইটি বম্বেতে ২,২০৯ জন পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১,৪৮৫ জন চাকরি পেয়েছিলেন। অর্থাৎ গত মরশুমেও ৩২.৮ শতাংশ পড়ুয়া ক্যাম্পায়িংসের মাধ্যমে চাকরি পাননি।

আর সেই ঘটনায় পড়ুয়াদের উপর মানসিক চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এক অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘চাকরি পাওয়া নিয়ে একটা বড় সংখ্যক পড়ুয়ার মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষত করোনাভাইরাস মহামারীর পরিবর্তী সময় সেটা বেড়েছে।’ সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে কোনও একটি পদের জন্য বেসরকারি কলেজের পড়ুয়াকে যে স্যালারি প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে, সেটার থেকে আইআইটি বম্বের পড়ুয়াদের বেশি টাকার অফার দেওয়ার ঘটনা কমছে। দেশের তৃতীয় সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (সার্বিকভাবে চতুর্থ) যে এরকম হাল হয়েছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। যে পড়ুয়ারা ক্যাম্পায়িংসের মাধ্যমে প্লেসমেন্ট পাননি, তাঁরা কীভাবে চাকরি পাবেন, তা নিয়ে পড়ুয়াদের পরামর্শ দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের।

অন্যদিকে, নাম গোপন রাখার শর্তে আইআইটি বম্বের প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নথিভু্ক্ত ফাইনাল ইয়ারের এক পড়ুয়া বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসিংয়ের সময় যে চাপটা থাকে, সেটা সহ্য করতে পারিনি এবং চাকরি পাইনি। কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন যে গতবারের থেকে নয়া চাকরির সংখ্যা ৫০ শতাংশও কমিয়ে দিচ্ছে।’

(Feed Source: hindustantimes.com)