জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আরব সাগরের তীরে আর গেল না আইএসএল লিগ শিল্ড (ISL League Shield)! গঙ্গা পাড়ের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব ছিনিয়ে নিল শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। মুম্বই সিটি এফসিকে ২-১ গোলে হারিয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan vs Mumbai City FC, ISL 2023-24) অধরা মাধুরীকে ছুঁয়ে ফেলল। লিগ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে অ্য়ান্তোনিয়ো লোপেজ হাবাসের শিষ্য়রা হাতে তুললেন শিল্ড। সোমবার সন্ধ্য়ায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লেখা হল ইতিহাস। লিস্টন কোলাসো (Liston Colaco), জেসন কামিন্সের (Jason Cummins) গোল ও হাউসফুল যুবভারতীর সমর্থনে লিগের রং হল সবুজ-মেরুন।
২২ ম্য়াচের শেষে মোহনবাগানের পয়েন্ট ৪৮! যা আর কোনও টিমই টপকাতে পারবে না। দুয়ে শেষ করল মুম্বই (২২ ম্য়াচে ৪৭ পয়েন্ট)। তিনে থামল এফসি গোয়া (২২ ম্য়াচে ৪৫ পয়েন্ট)। আইএসএল জিতলেও লিগ শিল্ড না জেতার আক্ষেপ ছিল মোহনবাগানের। এবার সেই আক্ষেপও ঘুচে গেল। কিছুতেই হারা যাবে না, এমনকী ড্র করা যাবে না। জিততেই হবে। তিন পয়েন্টই লাগবে। তবেই মিলবে শিল্ড। লিগ ডিসাইডারের এহেন কঠিন টার্গেটের সঙ্গেই জুড়েছিল ‘মুম্বই কাঁটা’! কারণ আইএসএলের সকল দলকে হারালেও, মোহনবাগান কখনও হারাতে পারেনি আরব সাগরের তীরবর্তী ফ্র্য়াঞ্চাইজিকে। এদিনের ম্য়াচের আগের ইতিহাস বলছিল আইএসএলে দু’দল মোট মুখোমুখি হয়েছে আটবার। তার মধ্যে ছ’বারই জিতেছে মুম্বই। দু’বার হয়েছে ড্র। নবম সাক্ষাতে বসে যাওয়া ভাগ্য়ের চাকা ঘুরল মোহনবাগানের। আর এমন দিনেই ঘুরল, যেদিন ঘোরার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। আর এই জয় শুধু মোহনবাগানেরই নয়, বাংলার ফুটবলের জয়। কারণ বাংলার প্রথম কোনও দল হিসেবে মোহনবাগান জিতল শিল্ড।
এদিন ম্য়াচের ২৮ মিনিটেই মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন লিস্টন কোলাসো। পেনাল্টি বক্সের সামনে দিমিত্রি পেত্রাতোস কী খেলাটাই না খেললেন গোল করানোর জন্য়। মুম্বইয়ের রক্ষণ চিরে অনবদ্য় বল বাড়ালেন লিস্টনকে। বক্সের ঢুকে লিস্টন অসাধারণ গোল করে যুবভারতীর গ্য়ালারি মাতিয়ে দেন। লিগ টেবল সঙ্গে সঙ্গে দেখিয়ে দেয় যে লিগ শিল্ডে থাবা বসিয়ে ফেলেছে মোহনবাগান। গোল করেই লিস্টন ছুটে যান গ্য়ালারির দিকে। তাঁকে পেয়ে উত্তাল হয়ে ওঠেন ফ্য়ানরা। চলতি লিগে প্রথম লেগের ম্যাচেও কিন্তু মোহনবাগান ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে ২-১ গোলে হেরেছিল মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। ফলে গোল করেও মহাশক্তিধর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে স্বস্তিতে ছিল না সবুজ-মেরুন।
বিরতিতে ১-০ এগিয়ে মাঠ ছাড়া মোহনবাগান ৮০ মিনিটে লিগ শিল্ড পকেটে পুরে ফেলে। পেত্রাত্রোস হয়ে কামিন্সের টিম গেমে গোলটিও ছিল দেখার মতো। দুই গোলেই পেত্রাতোস নিজের ছাপ রাখলেন। এরপর কামিন্স-পেত্রাতোস মিলে ছুটলেন গ্য়ালারির দিকে। এরপর ৮৬ মিনিটে হাবাস কোলাসো এবং অনিরুদ্ধ থাপাকে তুলে নিয়ে আশিস রাই এবং হামতেকে নামান। তবে নির্ধারিত সময়ের ঠিক আগেই বাগান সমর্থকদের বুকে ভয় ধরিয়ে দেন ছাংতে। ৮৯ মিনিটে গোল শোধ করেন। হার্টবিট আরও বেড়ে যায় যখন রেফারি জানিয়ে দেন যে খেলার শেষ বাঁশি বাজবে আরও আট মিনিট পর! অর্থাৎ অতিরিক্ত ৪৮০ সেকেন্ড দেওয়া হয়। যা যে কোনও ম্য়াচের রং ঘোরানোর জন্য় যথেষ্ট!
ক্রমেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এর মধ্য়ে ৯১ মিনিটি জোড়া হলুদ কার্ডের জন্য় লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে হয়। মোহনবাগান হয়ে যায় ১০ জনের টিম! এর ঠিক দুই মিনিটের মাথায় কামিন্সের সঙ্গে বল দখলের লড়াই নিয়ে দুই দলের ফুটবলারদের চরম অশান্তি হয়। চারজনকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। কিন্তু এসবই ছিল শেষ লগ্নের নাটক। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গেই যুবভারতী ফেটে পড়ে উচ্ছ্বাসে। শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহনবাগান চলে গেল এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
এদিকে ম্যাচ শেষে মোহনবাগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘অভিনন্দন,অভিনন্দন, অভিনন্দন। আইএসএলে লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মোহনবাগান ক্লাবের খেলোয়াড়, কোচ,কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থকদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন। এ জয় শুধু মোহনবাগানের নয়,এ জয় সারা বাংলার জয়। এই জয়ের জন্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগান ক্লাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন’।
(Feed Source: zeenews.com)