৭৭ বছরের ক্ষতে প্রলেপ ভারতীয় বন্ধুর, উপহার দেখে কেঁদে ভাসালেন প্রবীণ পাক নাগরিক

৭৭ বছরের ক্ষতে প্রলেপ ভারতীয় বন্ধুর, উপহার দেখে কেঁদে ভাসালেন প্রবীণ পাক নাগরিক

লাহৌর: দেশ-কাল পেরিয়ে যাওয়ার পর ফিরব বললেও আর ফেরা যায় না। ভোলা যায় না মনের গভীর পড়ে থাকা স্মৃতি-বিস্মৃতিও। ছিন্নমূল মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পান এই যন্ত্রণা। অবশেষ নেই জেনেও মরীচিকার স্বপ্ন দেখা ছাড়েন না তাঁরা। তাই অতীতের সামান্য স্পর্শেও অঝোরধারা নেমে আসে চোখ বেয়ে। পাকিস্তানের লাহৌরের বাসিন্দা, একসময় অধ্যাপনায় যুক্ত আমিন চৌহানেরও সেই অবস্থাই হল। ফেলে আসা বাড়ির চিহ্ন দেখামাত্রই সব সংযম বাঁধ ভাঙল তাঁর। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বিশেষ মুহূর্ত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। (Lahore Professor Viral Video)

পাকিস্তানের লাহৌরের বাসিন্দা আমিন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, ভিটেমাটি সব ছেড়ে পাকিস্তানে থিতু হয় তাঁর পরিবার। সেই থেকে নয় নয় করে সাত দশকেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। লাহৌরের একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন আমিন। এখন চেহারায় বার্ধক্য়ের ছাপ স্পষ্ট। শিকড়ের টানই হোক বা ব্যক্তিত্বগুণের আকর্ষণ, কিছু বছর আগে ভারতীয় পলবিন্দর সিংহের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। (India Partition)

কথায় কথায় এমনই একদিন বন্ধু পলবিন্দরের কাছে অতীতের কথা পেড়ে ফেলেছিলেন আমিন। জানিয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের বাটালার ঘোমানে তাঁদের ভিটে ছিল এককালে। ১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ হয়, সব ফেলে রেখেই বেরিয়ে পড়ে তার পরিবার। পাকিস্তানের মাটিতে আবার শূন্য থেকে লড়াই শুরু হয়। নতুন করে জীবনকে সাজিয়ে নিলেও, দেশভাগের যন্ত্রণা, শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পীড়া আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁদের। (Pakistan News)

সীমান্তপারের বন্ধুর অতীত শুনে তাজ্জব হয়ে যান পলবিন্দরও। ভূখণ্ড ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেলেও, মাঝখান দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া উঠলেও, পড়শি দেশের বন্ধুর সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন পলবিন্দর। কোন উপায়ে ক্ষত সারানো যায় ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দেন। সেই মতো ঠিকানা জেনে বাটালায় আমিনের আদি ভিটেতে হাজির হন তিনি। হারানো ভিটে তো আর ফেরত দেওয়া যাবে না, কিন্তু কিছু চিহ্ন অবশ্যই হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে বলে মাথায় ভাবনা আসে পলবিন্দরের। সেই মতো ওই বাড়ির একটি দরজা খুলে নিয়ে যান তিনি।

আস্ত দরজা কাগজে মুড়ে পাকিস্তান পাঠানো সহজ কাজ নয়। কিন্তু ছিন্নমূল বন্ধুর জন্য় সব ঝক্কি সামলানোর পণ নেন পলবিন্দর। সেই মতো ওই দরজাকে প্রথমে বাটালা থেকে মহারাষ্ট্র নিয়ে যাওয়া হয় দরজাটিকে। সেখান থেকে দুবাই, করাচি হয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রাকে চাপিয়ে ওই দরজা লাহৌর পৌঁছয়। বন্ধুত্বের চিহ্নস্বরূপই আমিনকে ওই উপহার দেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, লাহৌরে আমিনের বাড়ির সামনে একটি গাড়ির উপর চাপানো রয়েছে দরজাটি। এক ব্যক্তি গিয়ে আমিনের বাড়ির দরজায় টোকা দেন প্রথমে। ফটক খুলে বেরিয়ে প্রথমে একটু অবাকই হন আমিন। কিন্তু হাতের ইশারা অনুসরণ করে যখন দরজাটির দিকে চোখ যায় তাঁর, কার্যতই কাঁপতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে দরজাটির কাছে এগোন। চোখ বেয়ে তখন অশ্রুধারা নামছ তাঁর। সেই অবস্থাতেই দরজায়, শিকলে ঠোঁট ঠেকান। এক মুহূর্তে যেন ফিরে যান অতীতে। এর পর যত্ন সহকারে দরজাটিকে বাড়ির ভিতর নিয়ে যান তিনি। রীতি মতো গর্বের সঙ্গে সকলকে ডেকে ডেকে দেখান দরজাটি। আগাগোড়া আলতো হাতে দরজাটিকে ছুঁয়ে ছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ভিডিওটি দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অনেকেই।

(Feed Source: abplive.com)