রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মাত্র ১ রানে হারিয়ে কোহলিদের প্লে অফের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল কেকেআর

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মাত্র ১ রানে হারিয়ে কোহলিদের প্লে অফের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল কেকেআর

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভাল ম্যাচের একটা চরিত্র আছে। প্রত্যেক ২-৩ ওভারে ম্যাচের রং বদলে বদলে যায়। ক্লিশে শোনালেও, অনেকটা পেন্ডুলামের মতো। একবার এক দলের দিকে পাল্লা ভারি। পরের মুহূর্তেই তা ঝুঁকে পড়ে অন্য় দলের দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পয়সা ওসুল।

দর্শকেরাও কি সহমত? কলকাতায় যেরকম দাবদাহ চলছে, তাতে ইডেন (Eden Gardens) গ্যালারি ভিন্নমত পোষণ করতেই পারে। একে বিয়াল্লিশ ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রা। গলদঘর্ম গোটা রাজ্য। তায় দুপুর সাড়ে তিনটেয় ম্যাচ। এমনিতেই বিধ্বস্ত শরীর। তার ওপর যদি প্রিয় দলের জয় নিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করতে হয়, আর সেটাও প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে, কাহাতঁক (KKR vs RCB) আর ভাল লাগে?

ইডেনে আগের ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ২২৩ রান করেও শেষ বলে হারতে হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। রবিবার প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে যখন ২২২/৬ তুলল কেকেআর, আর সেই রান তাড়া করতে নেমে বিরাট কোহলি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হলেন, উইল জ্যাকস-রজত পাতিদারদের দুরন্ত লড়াইকেও থামালেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনরা, তখনও কেউ ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দামের বোলার মিচেল স্টার্ককে শেষ ওভারে তিন ছক্কা মেরে আরসিবি-কে কার্যত জিতিয়েই দিয়েছিলেন কর্ণ শর্মা।

পারলেন না কারণ, প্রায়শ্চিত্ত করলেন স্টার্কই। শেষ ওভারে যখন বল করতে আসছিলেন, হাতে পুঁজি ছিল ২১ রানের। আরসিবির ৯ নম্বর ব্যাটারের কাছে তিন ছক্কা খেয়ে বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্টবোলার। ২ বলে তখন আর মাত্র ৩ রান বাকি আরসিবির। ইয়র্কারে ফলো থ্রু-তে কর্ণের নীচু ক্যাচ তালুবন্দি করলেন স্টার্ক। শেষ বলে বাকি ছিল ৩ রান। দৌড়ে ২ নিতে গিয়েছিলেন লকি ফার্গুসন। তাতেও ম্যাচ গড়াত সুপার ওভারে। তবে রান আউট হয়ে যান ফার্গুসন। কেকেআরের স্কোরের ঠিক এক রান আগে, ২২১ রানে অল আউট হয়ে যায় আরসিবি। কেকেআর ম্যাচ জেতে মাত্র এক রানে। যেটা আইপিএলে কেকেআরের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়। আরসিবিরও এটি সবচেয়ে কম ব্যবধানে হার। এর আগে ২০১৪ সালে শারজায় এই কেকেআরের কাছেই ২ রানে হেরেছিল আরসিবি। সেটিই ছিল তাদের সবচেয়ে কম ব্যবধানে হারের নজির। নাইটদেরও সেটিই ছিল সবচেয়ে কম ব্যবধানে জেতার নজির। নাটকীয় ম্যাচে সমর্থকদের রক্তচাপ বাড়িয়ে মাত্র ১ রানে জিতল কেকেআর।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুলেছিলেন ফিল সল্ট। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ১৪ বলে ৪৮ রান করে যান তিনি। রান পেয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার (৩৬ বলে ৫০), রিঙ্কু সিংহ (১৬ বলে ২৪), আন্দ্রে রাসেল (২০ বলে ২৭ ব্যাটিং) ও রামনদীপ সিংহ (৯ বলে ২৪ ব্যাটিং)। যদিও শ্রেয়সের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থামল না।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিতর্কিত আউট হন বিরাট। এদিন তাঁর জন্যই ইডেনের সমর্থন দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কোহলির নামে জয়োধ্বনি, প্ল্যাকার্ড, জার্সি। ইডেনে বসে মাঝে মধ্যে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছিল, কেকেআর ঘরের মাঠে খেলছে তো!

তবে হর্ষিত রানার বলে কোহলি আউট হতেই হতাশ বিরাট ভক্তরা। কোহলি যদিও আউটের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। ডিআরএস নেন। বল কোমরের চেয়ে উঁচুতে ছিল, সেই দাবিতে। তৃতীয় আম্পায়ারও তাঁকে আউট দিতে মাঠের আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান বিরাট। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় গ্লাভস ছুড়ে ফেলতে দেখা যায় তাঁকে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেও আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল বিরক্ত বিরাটকে। আচরণবিধি ভাঙার জন্য তাঁর জরিমানা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

৩৫/২ হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য নাইটদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেন উইল জ্যাকস ও রজত পাতিদার। তৃতীয় উইকেটে ৪৮ বলে ১০২ রান যোগ করেন। ৩২ বলে ৫৫ জ্যাকসের। ২৩ বলে ৫২ রজতের। একই ওভারে দুজনকেই তুলে নিয়ে ফের ম্যাচের রাশ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন রাসেল। ওই ওভারই হয়ে যেতে পারত টার্নিং পয়েন্ট। পরের ওভারেই ক্যামেরন গ্রিন ও মহীপাল লোমররকে তুলে নেন সুনীল নারাইন। ১৩ ওভারে ১৫৫/৬, আরসিবি তখন দিশাহারা।

কিন্তু ওই যে কেকেআরের টিম মালিকের সিনেমার এক বিখ্যাত সংলাপ আছে না! পিকচার অভি বাকি হ্যায়… শাহরুখ খান এদিন মাঠে আসেননি। তবে তাঁর ডায়ালগ যেন মনে করিয়ে দিলেন দীনেশ কার্তিক (১৮ বলে ২৫ রান), সূয়শ প্রভুদেশাই (১৮ বলে ২৪ রান) ও কর্ণ শর্মা (৭ বলে ২০)।

রাজস্থানের বিরুদ্ধে শাহরুখের সামনে শেষরক্ষা করতে পারেননি নাইটরা। এদিন শাহরুখ না থাকলেও সেটা হল। ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে দুইয়ে উঠে এল কেকেআর। আর টানা ৬ ম্যাচ হেরে প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল আরসিবি। ৮ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট তাদের।

এখনই কি লিখে দেওয়া যায় যে, প্লে অফের দৌড়ে মৃত আরসিবি-র স্বপ্ন? অনেকের মনে সংশয় থাকলেও, বাকি সব ম্যাচ জিতলে আরসিবি শেষ করবে ১৪ পয়েন্টে। আইপিএল দশ দলের হয়ে যাওয়ার পর ১৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফে যায়নি কোনও দলই। বিরাট স্বপ্নের এবারও তাই সলিল সমাধিই।

(Feed Source: abplive.com)